Ameen Qudir

Published:
2017-09-05 18:05:46 BdST

অবিশ্বাস:মধ্যবিত্ত আর মধ্যবয়সি মেয়েদের ক্রাইসিস




ডা. মিথিলা ফেরদৌস
___________________________________

লোপা,কুমিল্লা শহরে বেড়ে উঠা নামকরা সুন্দরী মেয়ে,পড়ালেখায় বেশ ভাল,তাছাড়া শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে,বাবা মা দুইজনেই স্কুলের টিচার,একবোন সেও ডাক্তারি পড়তেছে।ইন্টারের পর ঢাকায় আসতেই হয়,ইডেনে ইকোনোমিক্সে ভর্তি হয়।ভর্তির পর হলে সিট পাওয়া খুব কঠিন।আত্মীয় স্বজনের বা মেসে একবছর থাকতেই হয়।এইসময় দুরসম্পর্কের খালার বাড়িতে কিছু দিন থাকতে হয় লোপার,খালু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। ওয়ারীতে তিনতলা বাড়ি।দুই ছেলেমেয়ে।ছিমছাম গোছানো সংসার।লোপা কিছুদিন খালার কাছেই থাকে,খালা খুব ভালবাসেন।


মনে মনে সুন্দর,মেধাবী,সংসারী লোপাকে ছেলের বউ হিসেবে নির্বাচন করে ফেলেন।ছেলে রাসেদ,ডিগ্রী পাশ করে হার্ডওয়ারের ব্যাবসা করে।পুরান ঢাকার ব্যাপারটাই এমন পড়াশুনার চেয়ে ব্যাবসার প্রতি বেশি ঝুকে পরে তারা।এক বোন,এস এস সি পাশ করতে পারেনি,বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে।


রাসেদও লোপাকে পছন্দ করে।একসময় লোপা হলে উঠে যায়,রাসেদ প্রায় লোপার কাছে যায় গল্প করে।একাকি বিকেল গুলো রাসেদের সাথে থাকতে থাকতে একসময় লোপার,রাসেদের প্রতি দুর্বলতা চলে আসে।রাসেদ প্রায় ছোট খাট গিফট থেকে শুরু করে দামি মোবাইল পর্যন্ত লোপার জন্যে এনে লোপাকে সারপ্রাইজ দিয়ে মুগ্ধ করে ফেলে।মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরা এ ব্যাপারে কিছু টা অসহায় বলা চলে।

ঢাকায় নিশ্চিত বাসস্থানের জন্যেই হোক,নিত্য নতুন গিফটের মুগ্ধতা থেকে হোক, লোপার মতেই, দুই ফ্যামিলির সমঝোতার ভিত্তিতে,দুইজনের পছন্দেই অনার্স পরিক্ষার পরেই বিয়ে হয় লোপা- রাসেদের।বিয়ের কিছুদিন পর লোপার ঘোর কাটতে থাকে।রাসেদ অলস,ব্যাবসার প্রতি মন নাই।নামে মাত্র ব্যাবসা।ওখান থেকে তেমন কিছুই আসেনা।বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার চলে।লোপা মাস্টার্স কম্পলিট করেই সংসারের তাগিদে একটা ছোটখাট কম্পানিতে ঢুকে যায়।এর মধ্যে দুই বাচ্চার মা হয়ে যায়।সকালে চাকরী,বিকেলে সংসার,বাচ্চা,বৃদ্ধ শ্বশুর শ্বাশুরির দেখাশোনা সব লোপার করতে হয়।রাসেদ বাউন্ডলে,তার উপর কোন ভরসা নাই লোপার।শ্বাশুরির সহযোগিতা পায় সে বাচ্চাগুলাকে মানুষ করার ব্যাপারে।

 

লোপার বয়স চল্লিশ পার হয়েছে, বড় মেয়েকে নিজের বিয়ের গয়না বিক্রি করে,একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিবিএ পড়ায় সে।প্রতি মাসে বেতনের টাকার অর্ধেক যায় তার পিছনে।চাকরীতে অনেক ঝামেলা সত্ত্বেও ছাড়া যায় না চাকরী।


কাল থেকেই শ্বাশুরির প্রেশারের ঔষধ শেষ,রাশেদ কে হাজার বলার পরও আনেনি,তাই লোপা রাশেদ কে ফোন দেয়। রাত ১১ টা বাজে।রাশেদের মোবাইলে কল ওয়েটিং ৫৮ মিনিট ধরে।রাশেদ বাসায় আসার পর লোপার সাথে খুব মধুর ব্যাবহার আজ।রাসেদ অন্য ঘরে,লোপা রাসেদের মোবাইল দেখে, খুলে পরে আছে।মোবাইলটা সেট করে ডায়াল কলে যায় সে,দেখে মোবাইলে শুধু ডায়াল কল গুলা নেই।লোপা ঠান্ডা চোখে জিজ্ঞেস করে মোবাইল কি হইছে?রাশেদ বলে, 'পানিতে পরে গেছিলো।'কিছু বলতে বা ভাবতে ইচ্ছে হয়না লোপার।


পর পর কয়েক সন্ধ্যা রাশেদের মোবাইল অফ।দোকানের কর্মচারীকে ফোন করে লোপা।সে বলে ভাইজান,সন্ধ্যায় থাকেনা।রাসেদ আসলে লোপা জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার?

রাসেদ বলে, বন্ধুদের সাথে নাকি আড্ডা মারে।লোপা বন্ধুদের নাম জিজ্ঞেস করে,রাসেদ দুই বন্ধুর নাম বলে।সেদিনের পর আর বিশ্বাস পায় না।মোবাইল থেকে চুপ করে ওই দুই বন্ধুর নাম্বার টুকে নেয়।পরের দিন সন্ধ্যায় যথারীতি রাসেদের মোবাইল অফ। লোপা দুই বন্ধুকেই ফোন দেয়,দুইজনেই অবাক,বলে 'ভাবী বহুদিন রাসেদের সঞে দেখা হয় না, ব্যাস্ততার কারনে।'লোপা মাথা ঠান্ডা রেখে, রাসেদ আসার পর জিজ্ঞেস করে,'আজ কার সাথে আড্ডা দিলা?'মনে মনে আশা করে আজ হয়তো অন্য বন্ধুর সাথে ছিল।

রাসেদ ওই দুইজনের নামই খুশি হয়ে বলতে থাকে,বলতে থাকে অনেক বানানো গল্প,লোপার মাথা হটাৎ ফাকা হয়ে যায়।রাসেদের কোন কথাই আর শুনতে ইচ্ছা হয়না।দুই মেয়ের মুখ চোখে ভাসে,কোথাও যাওয়ার জায়গা তার নাই।এই অবিশ্বাসের সাথেই তার বাকি জীবন কাটাতে হবে।

__________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস। ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়