Ameen Qudir

Published:
2017-08-19 16:02:44 BdST

হিন্দু মুসলমানের ঐক্য ও মিলন


 


ডা. অধ্যাপক রেজাউল করীম

__________________________

হিন্দু মুসলমানের ঐক্য ও মিলন সম্ভব কিনা তা নিয়ে মনীষীরা বিস্তর মাথা ঘামিয়েছেন। দেশবন্ধু ছিলেন ঐক্য প্রতিষ্ঠার অগ্রনায়ক। মুসলমানদের যারা নেতা তারা নিজেদের মুসলমানতর করার জন্য যখন সাইলকের মত এন্টনিওর বুকের মাংস কাটতে উদ্যত মহাপ্রান মানুষটি রনে ক্ষান্ত দিলেন।

গান্ধীর কথা এ বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। তিনি খেলাফত টেলাফত করে মুসলমানদের "উম্মাহ" প্রীতির ধিকিধিকি আগুনে ঘি চড়িয়েছেন। মুসলমানদের যেমন কোরান, কমিউনিস্টদের তেমনি লেনিন-মার্কস- এক চুল এদিক ওদিক হলেই হাবিয়া দোজখে পাঠিয়ে বড় বড় কডায়ে সেদ্ধ হবার ভয়। মুসলমানের দু:খে এদের এত প্রান কাঁদে যে বখে যাওয়া বাচ্চাদের মত ওরা যা চাই ফস করে তাই দিয়ে ফেলে। শরৎবাবু দু:খ করে লিখেছিলেন- ঐক্য সম্ভব নয় (অপ্রকাশিত রচনা)। তিনি আর যা বলেছিলেন তা মুসলমানের পক্ষে বদহজম হবার আশঙ্কা আছে, উৎসাহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন, কিন্তু কথাটা সর্বৈব সত্য। পাঁচু খানসামা বেহেস্তে অঢেল মদ্য ও সম বয়স্কা ৭২ টা হুরী আর তারচেয়ে বড় কথা আরবের কাঁডি কাঁড়ি টাকার লোভে রাতারাতি খানসামা থেকে খানজাদা হযে আরবী ফারসী বয়েত আওডাতে লাগল।


কথায় কথায় ইরান তুরানের উদাহরণ টানতে লাগল- এটাই এদেশের দস্তুর। কাল যে দাদাভাইদের ছেড়ে নতুন ধর্ম গ্রহন করলো, তারা হয়ে গেল কাফের। গোঁফ কামিয়ে, দাড়িতে মেহেনদির মাঞ্জা কষে রাতারাতি বেবাক বিদেশির মত আচরন করতে থাকলে সবাই যে ভুল বুঝবে তাতে আর আশ্চর্য কী! পাঁচু খানসামা যদি আমেরিকান ডলারের লোভে খৃষ্টান হয়ে যায় তাহলে সে বহিরঙ্গে পাল্টাত না। সে হয়ত শিবের বদলে যীশুকে ডাকছে, কিন্তু বাতারাতি যুবরাজ চার্লস বা পোপ ফ্রান্সিস হয়ে যাচ্ছে না। এটুকু চক্ষুলজ্জা বা বুদ্ধি খরচ করলে খৃষ্টানীতে এতটুকু ঘাটতি হয় না। কিন্তু ধর্ম যদি ইসলাম হয়, সে হয় বিবির লোভে নইলে টাকার লোভে রাতারাতি পৈতৃক নাম পাল্টে দিলওয়ার খান হয়ে যাবে, নাহলে মুসলমানীতে ঘাটতি হবে- আকাশে যিনি বিরাজ করছেন হয় তিনি আরবীকে বেশী

ভালবাসেন নয়ত সগ্গে যথেষ্ট ইন্টারপ্রিটার নেই।
মুসলমান যখন নাম, আচার-ব্যবহারে বাঙালীসত্বাকে বিসর্জন দিয়ে মুসলমানতর হয়ে ওঠে, উম্মাহর জন্য তার প্রান কাঁদতে থাকে তখন হিন্দু-মুসলমানের প্রকৃত ঐক্য কক্ষনো সম্ভব হবে না। তারপর গোদের উপর বিষ ফোঁড়া আছে- মুক্ত বুদ্ধিজীবির দল। তারা ইসলামের ঘোড়ার ডিম বোঝে, ওয়াহাবি জিনিসটা খায় না মাথায় দেয় তা জানে না অথচ প্রতিদিন তাদের কী করে শক্তিশালী করা যায় তার জন্য ঘুম হয়না। ওয়াহাবি তিতুমিরের জন্য তাদের প্রান কাঁদে, ফারাজী আন্দোলনকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক বলে শংসাপত্র দেয় অবলীলায়। প্রকাশ্য রাস্তায় গরু খাওয়ার উৎসব করে একাধারে মুসলমান গোস্তখোরদের চোখে হিরো সাজে আর ধর্মপ্রান হিন্দুদের মনে জ্বালা ধরিয়ে বিভেদের বহ্নিশিখা শতগুনে বাড়িয়ে তোলে।
আমি মুসলমানকে ধর্ম ত্যাগ করতে প্ররোচনা দিচ্ছি না, কিন্তু ভেকধারী ধর্মপ্রানের ভেকের ডাকে দেশ রসাতলে যাক চাই না।

যথেষ্ট হয়েছে নুরানী দাডি নেড়ে কেতাব আওড়ান, হিন্দুদের কাফের বলে ঘৃনা করা, ৭২টা হুরীর অলীক স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি বিসর্জন দেওয়া। এবার এসো, সব সংস্কার ত্যাগ করে মুক্ত মানুষের ভেক ধর। এই বাংলার প্রকৃতি, তার নদী বনভূমি, তার মেখলা খচিত আকাশের দিকে দেখো দুচোখ মেলে- এ বর্নিত বেহেস্তের চেয়ে সুন্দর, মনোরম। এর জন্য হাজার বার প্রান দেওযা যায়। আবার এখানেই হাজারবার জন্মানো যায়। এ যদি ভাবতে পারা যায়, ঐক্য আপনি আসবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য চোখের জলে দাড়ি ভাসাতে হবে না। নাম আরবী না সেনেগালিতে তা নিতেও কেউ মাথা ঘামাবে না। ফারসীতে বয়েত আওডালেও কেউ টেরা চোখে জরিপ করবে না। সে সুদিন কী আসবে?

__________________________________

ডা. অধ্যাপক রেজাউল করীম। বাংলার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। লেখক । সুচিন্ত ক

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়