Ameen Qudir

Published:
2017-08-13 21:10:04 BdST

মুক্তামণির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সারা রাত ঘুমান নি যে মানুষটি


 

 


সংবাদদাতা

_________________________

ডা. অধ্যাপক সামন্তলাল সেন। জীবন্ত কিংবদন্তি। সুচিকিৎসা মানেই যেন সামন্তলাল।
সামন্তলাল মানেই যেন জীবনের আশ্বাস।
মুক্তামণির অপারেশন পর্বের প্রকৃত শক্তি ছিলেন ছিলেন তিনি। এর অাগে বৃক্ষ মানবকে তিনিই ফিরিয়ে দিয়েছেন স্বাভাবিক জীবন।

এমন সব দিনে কিভাবে কাটে স্যারের নিজের জীবন। মিডিয়ায় তিনি রাশভারী। চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়া তেমন কিছু বলেন না।
তারপরও মুক্তামণিকে নিয়ে তিনি ছিলেন খুব টেনশনে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ফিরিয়ে দেয়ার পর।

সেদিন
রাতভর ঘুম ছিল না স্যারের চোখে। উত্তেজনা আর টেনশন। এ কারণে নির্ঘুম রাত কেটেছে ডা. সামন্ত লাল সেনের। সকালে চাপা উত্তেজনা আর টেনশন নিয়ে ঢোকেন অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে টানা তিন ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করা মুক্তামনির ডান হাতে। অপারেশন সফল হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি। ডা. সামন্ত লাল সেন সহকর্মদের সামনে মিডিয়ার কাছে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি খুব আনন্দিত। যেহেতু মুক্তামনির রোগটি ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়নি। তাই আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী যে মুক্তামনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।

 

শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় সাতক্ষীরার মুক্তামনিকে। বিরল রোগে আক্রান্ত তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার শুরু হয় সাড়ে ৮টায়। শেষ হয় সোয়া ১১ টার দিকে।
ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, গত রাত আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তান উত্তেজনায় ঘুমাইনি।
তিনি বলেন, আমি আনন্দিত। যে মেয়েটি চিকিৎসার জন্য কোনদিন সাতক্ষীরা শহরেই আসেনি’ সে আজ ঢাকা মেডিকেলের সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাচ্ছে।

 

ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এই অপারেশনটি ঢামেক হাসপাতালের টিমওয়ার্কের একটি মাইলফলক। এখানকার ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে প্রফেসররা পর্যন্ত সবার একটি সফল টিমওয়ার্ক মুক্তামণির সফল অপারেশন।

 

 

 

 

ডা. সামন্ত লাল গর্বের সঙ্গে বলেন, কে বলে বাংলাদেশের মানুষ খারাপ? দেশের মানুষ যেভাবে মুক্তামনির পাশে দাঁড়িয়েছে তা আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে মুক্তামনি (১২)। জন্মের দেড় বছর পর তার হাতে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত ডান হাত ছোট আকারের গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে প্রচণ্ড ভারী হয়ে উঠে। এতে পচনও ধরে। পোকাও জন্মে। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকতো মুক্তামনি।
এ রোগ তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। এসব কারণে তাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও পড়শিদের যাতায়াতও এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে।

 

সম্প্রতি মুক্তামনির এ বিরল রোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১১ জুলাই মুক্তামনিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে ৬০৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের অপারেশন থিয়েটারে শনিবার (৫ আগস্ট) তার বায়োপসি সম্পন্ন হয়। বায়োপসি রিপোর্টে তার রক্তনালীতে টিউমার ধরা পড়ে। যা অপসারণ করা হয়েছে।

 

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়