Ameen Qudir

Published:
2017-07-13 17:56:44 BdST

ধর্ষন এখন জাতীয় দূর্যোগ


 

 

 

 

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম

______________________________


বজ্রপাতে প্রচুর মানুষ মারা যায় বলে বাংলাদেশ সরকার বজ্রপাতকে জাতীয় দূর্যোগ হিসেবে ঘোষনা দিতে বাধ্য হয়েছে।বাংলাদেশে ধর্ষন ও ধর্ষনজনিত মৃত্যুর হার ও অনেক।এখন সময় এসেছে এটিকেও দূর্যোগ হিসেবে ঘোষনা করা।আমাদের অনেকে গর্ব করে বলেন অপরাধ, ধর্ষন ইউরোপ - আমেরিকায় বেশী হয়।কিন্তু তারা এটি বলেন না সেখানে ধর্ষনের হার ক্রমশ কমে আসছে।আমেরিকায় ৯০ দশকের পর থেকে ধর্ষন ৫০% পর্যন্ত কমেছে।তারা এটিও বলেন না ঐ সব দেশে প্রতিটি অপরাধ, ধষনের তদন্ত ও বিচার হয়।আর আমাদের দেশে শিশু কন্যার ধর্ষনের বিচার না পেয়ে অপমান- অভিমানে হজরত আলী তার মেয়ে সহ ট্রেনের নীচে আত্মাহুতি দেন।

 

 


বনানীর রেইন- ট্রি হোটেলে দুই তরুনী ধর্ষিতা হওয়ার পর পাপিষ্ঠদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতি জেগে উঠেছিল। কিন্তু এবারো আবার ও সেই বনানীতে ও একই কায়দা জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে এক অভিনেত্রীকে ধর্ষনের সংবাদ এসেছে।ধর্ষনের এ ধারা কি চলতেই থাকবে। রেইনট্রি এর সে খবর সংবাদ মাধ্যম,বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচন্ড প্রতিবাদের ঝড় উঠাতে প্রভাবশালী হলেও আসামীগন ধরা পড়ছে।কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার এক শ্রেনীর মানুষ নির্যাতীতা মেয়েদের পোষাক,অবাধ মেলা- মেশা সহ তাদের গার্জিয়ানদের নিয়ে অশ্লীল,কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে চলছেন।

 

 


কিন্তু মোটা দাগে কয়েকটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে: ১। ধর্ষন কোন যৌন বিষয়ক সমস্যা নয়,এটি একান্তই নারীর প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ বিষয়ক ঘটনা।২। ধর্ষন নির্যাতীতা নারীর জীবনে এক চরম বেদনাদায়ক এবং অপমান ও গ্লানির ঘটনা। এটি মানব- সৃস্ট দূর্যোগের অন্যতম একটি,যে স্মৃতির যন্ত্র্রনা তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।একজন নারীর বুনিয়াদী সত্মাকে এটি ভেঙ্গে চূড়ে দেয়।সমাজের কাছে সে ও তার পরিবার কি নিগ্রহের মধ্যে পড়ে তা একমাত্র ঐ নির্যাতীতা ও তার পরিবার জানে।কোথায় তাদের প্রতি সহমর্মি হয়ে তাদের দূর্ভোগ ও কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করবো,না উল্টো তাদের গভীর আবেগীয় ক্ষতে " অপবাদ,দুর্নামের লবন ছিটিয়ে" দিয়ে তাদের ক্ষত আরো গভীর করে তুলছি।অথচ ইসলাম ধর্মেও ধর্ষনের শাস্তি পাথর মেরে হত্যা করার কথা বলা আছে।
৩। কিছু পুরুষ ও ধর্ষিত হয় বটে তবে নারীরাই ধর্ষনের প্রধান শিকার।অথচ যৌন কামনা- বাসনা নারী- পুরুষ উভয়ের সমান।তাহলে নারী নিজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ও পুরুষ কেন পারে না? এ না পারা কোন বায়োলজিক্যাল ব্যাপার নয়, এটি সমাজ- সংস্কৃতির কাঠামোর গভীরে প্রোথিত কিছু সংস্কার,মিথ ও বিশ্বাসের ফল।আমাদের কয়েক হাজার বছর লেগেছে " দাসত্ব প্রথা" উচ্ছেদ করতে,কয়েক হাজার বছর লেগেছে " বর্নবাদ" উৎখাত করতে( যদিও অনেক ফর্মে এদের কালো ছায়া এখনো বিদ্যমান)

 

 

 

কিন্তু নর- নারীর সমতা বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি গত কয়েক শতকের মাত্র।এ অগ্রগতির কিছু দিক তাৎপর্য্যপূর্ন হলেও কিছু দিকের অগ্রগতি নিতান্তই হতাশাজনক।তার অন্যতম একটি হলো নারীর " মানুষ" হিসেবে পরিচিতির স্বীকৃতি।পুরুষের কাছে নারীর এখনো মূখ্য পরিচয় " বিনোেদন সঙ্গী , কাম সঙ্গী" হিসেবে।শিক্ষিত,সুশীল পুরুষরা বাহ্যিক ভাবে নারীর প্রতি তাদের কাম ভাবনাকে সফিস্টিফিকেসনের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করে, তবে দানব প্রকৃতির পুরুষ সরাসরি হামলে পড়ে- এ হচ্ছে পার্থক্য। নারীকে যৌনতার বাইরে রে খে পূর্ন মানুষ হিসেবে দেখার সাংস্কৃতিক চেতনার বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত কিছু পুরুষের কামনার দ্বারা নারীর ধর্ষিতা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
শ্রেনী বিভাগ:

পরিস্হিতি অনুযায়ী :অভিসার/ দাওয়াত ধর্ষন,(বনানীর ধর্ষন), শিশু ধর্ষন( ৫ মাসের মেয়েকে যোনী কেটে বড় করে ধর্ষনের খবর কিছুদিন আগের খবর মাত্র), জেলখানায় ধর্ষন,পরিচিতজন দ্বারা ধর্ষন( বেশীরভাগ ধর্ষন এ পর্যায়ের),সম্মতি দেওয়ার বয়স হয়নি তেমন বালিকা ধর্ষন, দলবদ্ধ ধর্ষন,দাম্পত্য ধর্ষন,নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষন( আপন পিতা নিজ কন্যাকে আটকে রেখে বহু বছর ধর্ষনের কথা পত্রিকায় এসেছে)- ইত্যাদি। ২।ধর্ষকের লক্ষ্য অনুযায়ী: ক) ক্রুদ্ধ ধর্ষক: এদের লক্ষ্য হচ্ছে নির্যাতীতাকে অপদস্ত,অপমান করা,তার চরিত্র নষ্ট করা।এরা ধর্ষিতাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে থাকে।এরা তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়,মারধর করে,কাপড় চোপর ছিড়ে ফেলে।এরা নারীকে কাবু করতে যতটুকু শক্তি প্রয়োগ দরকার তারচেয়ে বেশী শক্তি খাটায়।খ) ক্ষমতা দেখানো ধর্ষক: এদের নিজের সামর্থ্য,সক্ষমতা সমন্ধে থাকে নেতিবাচক ধারনা।এই মানসিক ঘাটতি পূরন করতে তারা নিজেদের কর্তৃৃত্ব,,শক্তিমত্তা ও ক্ষমতা দেখাতে ধর্ষন করে থাকে।এরা মৌখিকভাবে হুমকি দিয়ে,অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে ধর্ষন করে থাকে।তবে এ শক্তি প্রযোগ হয় শিকারকে বাগে আনতে যতটুকু লাগে ততটুকু।তারা ধর্ষন নিয়ে ফ্যান্টাসিতে মত্ত থাকে ও নিজকে বিজয়ী হিসেবে দেখে।তারা বিশ্বাস করে প্রথম দিকে মেয়েরা বাধা দেবে,তবে একবার পরাস্ত করতে পারলে ওরা এটি উপভোগ করবে।এ বিশ্বাসের কারনে অপকর্ম করার পরও তারা ঐ মেয়েদের আবার ডাকলে আসার আহ্বান করে। কিন্তু তাদের অপর্যাপ্তবোধ এর অবসান হয় না।তাই তারা নিত্য নতুন শিকার খুজতে থাকে এবং এটি তাদের জন্য " বাধ্যতামূলক " হয়ে দাড়ায়( বেশীর ভাগ ধর্ষক এই ক্ষমতা দেখানো টাইপের)

 

 

 


গ) পীড়নকারী ধর্ষক: যৌন সঙ্গিনীকে নিপীড়ন করে,যন্ত্রনা দিয়ে এরা উত্তেজনা অনুভব করে।এরা তৃপ্তি পেতে ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ ক্ষন আটকে রেখে টর্চার করে।বিশেষ করে যৌন অঙ্গ গুলোকে ক্ষতবিক্ষত করে বিকৃত আনন্দ লাভ করে।এরকম নির্যাতনে বেশীরভাগ ভিকটিম মারা যায়।
নারী ধর্ষন বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি ও মিথ যেভাবে ভাঙ্গতে হবে:১। অর্ধ নগ্ন শরীর,যৌবন ছিটকে বেড়িয়ে পড়ে তেমন টাইট পোষাক পুরুষকে ধর্ষনে উৎসাহিত করে: বেশীরভাগ অশ্লীল মন্তব্য করা হয় নারীর পোষাক ও উগ্র চালচলন নিয়ে।এ ধরনের পুরুষের বিশ্বাস এরকম পোষাক পড়ে রাস্তায় বেরুনো মানে আহ্বান করা যে আমাকে ধর্ষন করো।( মেয়েরা ধর্ষিতা হতে চায়)। নারীকে মানুষ হিসেবে না দেখে " ভোগ্য পন্য" হিসেবে দেখার যে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এটি হচ্ছে সে লুকিয়ে থাকা লোলুপদের লালসার বহি: প্রকাশ( সেই বিখ্যাত তেতুল তত্ব)। রাস্তায় বেরুনো নারীকে তারা " মানুষ " হিসেবে দেখে, না তারা কাম সঙ্গী বান্ধবীর স্হুুল মাংস পিন্ডকে লোভাতুর চোখে দেখে,চাটে? সমস্যা এদের বিকৃত লালসার মধ্যে, ঐ নারীর মধ্যে নয়।নারী ফুলের মতন সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে আপনি সে অপরূপ সৌন্দর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ভাববেন আহ! জীবন - পৃথিবী নারী কত সুন্দর,নির্মল।তা না হয়ে কেন মনে উদয় হয় বিকৃত কামনা?
এক কথায়ধর্ষন কোন যৌন বিষয়ক ঘটনা নয় এটি এটি লালসা পীড়িত পুরুষের মনো বিকৃতি।

 

 


সিলেটের বালাগন্জে চার সন্তানের মাকে যে গন ধর্ষন করে মেরেই ফেললো; ৫ বছরের পূজাকে ব্লেড দিয়ে তার যোনীপথ বড় করে যে ধর্ষন; রাস্তার ভিখারী নারী যখন ধর্ষিত হয়েছিল- তাদের গায়ে কি উগ্র যৌন আবেদনময়ী পোষাক ছিল,তারা কি গ্লামারাস নারী ছিল? মনে রাখতে হবে ধর্ষিত হয় সকল বয়সের নারী,,সকল সংস্কৃতি,সমাজ,জাতি,ধর্মের মানুষ।ধর্ষকের কোন বাছ বিচার নেই।তাই
এটি নারীর প্রতি সহিংসতা,গুরুতর অপরাধ।আমরা ধর্ষনকে " সেক্সুয়ালাইজড" করি অথচ একে করা উচিৎ" ক্রিমিনালাইজড" করা।২।
যদি মেয়ে তোমার আহ্বানে " না" বলে তোমাকে অব্যাহতভাবে আহ্বান করে যেতে হবে, যে পর্যন্ত মেয়ে হ্যা বল( মেয়ে মনের গহীনে হ্যা পোষন করে রেখেছে): এরকম মিথ সমাজে যেমন বিদ্যমান তেমনি একে আরো পুষ্ট করে তোলে কিছু নাটক- নভেল।নায়িকা প্রথম "না" করে( তবে লাজুক মিস্টি হেসে)। নায়ক অনেক সাধাসাধির পর নায়িকার মন গলে।( ফেইসবুকে আমাদের " বি পজিটিভ বি হ্যাপী" তে রোগ - কাহিনী সিরিজে তেমন এক বাস্তব কাহিনী দিয়েছি যেখানে বিয়ের পর অল্প বয়সী কিশোরী বউ স্বামীর আহ্বানে সাড়া দেয় না বলে, স্বামীর বোন পাশের রুম থেকে সারা রাত ভাইকে বলতে থাকে- এটি তোর অধিকার তুই জোর করে তা আদায় করে নেয়
।যার ফল হয়েছিল ভয়াবহ)। এভাবে ছেলেরা শিখে নেয় মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না।তাই মেয়েদের " না" মানে না নয়।বেশীরভাগ ছেলে বন্ধুরা,প্রেমিকরা এই সূত্র ফলো করে এবং একসময় সফল হয়( ইমোশনাল ব্লাক মেইল) ।এ ধরনের ধর্ষন অহরহ হচ্ছে কিন্তু সবার অজানা থেকে যায়
৩) পুরুষরা অধিকতর যৌনকাতর,তারা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ, তাই কোন না কোনভাবে তাদের তাড়না মেটাতে হবে: এটিও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিজস্ব বানানো ধারনা।প্রকৃত পক্ষে নর নারী সমান যৌন চাহিদা সম্পন্ন।সমাজ নারীদের চাহিদাকে দমিয়ে রাখার শত বন্দোবস্ত করে রেখেছে।অন্যদিকে পুরুষের লালসা চরিতার্থ করার নানাবিধ কুপথ খুলে রেখেছে।বেশীরভাগ পুরুষরাও নারীর মতন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।কেবল গুটিকয়েক পুরুষ যারা "নারী দেহের" উপর তারা " অধিকার প্রাপ্ত" ( এনটাইটেলমেন্ট) বলে বিশ্বাস করে, তারাই নিজকে নিয়ন্ত্রণের কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।ভূমি দস্যুরা যেমন আশপাশের সব জায়গাজমির উপর তার অধিকার রয়েছে মনে করে ছলে- বলে কৌশলে ঠিকই ঐ সব জায়গা দখল করে নেয়, এই যৌন দস্যুরাও অন্য নারীর দেহের উপর তার অধিকার রয়েছে মনে করে জোর করে হলেও তা করায়ত্ব করে নেয়। নারীর " সম্মতি" তাই তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক।
৪। যদি পূর্বে কোন নারীর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতেও সে অধিকার থাকবে: নারী একবার কাউকে সম্মতি দেওয়ার অর্থ এই নয় সকল সময়ের জন্য সেটি বহাল থাকবে।যে কোন মুহূর্তে নারী তার মত বদলাতে পারে এবং পুরুষকে সেখানেই থেমে যেতে হবে।তানাহলে সেটি ধর্ষন( এমনকি বিবাহিত জীবনেও এটি সত্য)।

 

 


৫। রাত- বিরাতে নারীর একা চলাফেরা ধর্ষনের একটি কারন; মাত্র ১০% ধর্ষন ঘটে বাইরের অপরিচিত লোকদের দ্বারা। তাছাড়া ধর্ষন হয় ঘরে,কর্মস্হলে,কলেজ ক্যাম্পাসে যেগুলোকে আমরা নিরাপদ ভাবি।তাই এই খোড়া অজুহাতে নারীকে ঘরবন্ধি করে রাখা,মুক্ত জীবন যাপন থেকে বন্চিত করা অন্যায্য কাজ।জঙ্গী ভয়ে সরকার যখন আমাদের পুরুষদেরকে ও সন্ধার পূর্বে সকল অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য করে তখন কি আমরা বলি না, নাগরিকের নিরাপত্তা সরকার দেবে,কেন আমাদের স্বাধীন চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা দেবে? একই কথা নারীর বেলায় কেন খাটবে না?

 


৬। ধর্ষিতার শরীরে আঘাতের চিম্হ নেই,হাড় ভাঙ্গেনি,তাহলে তার নীরব সমর্থন ছিল: প্রথমত অকস্মাৎ আক্রমণ, হুমকির মুখে নারী ফ্রিজ হয়ে যেতে পারে।আকস্মিক বিপদে পড়লে আমাদের ব্রেইন ৩ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়: ৩ টি- এফ: ফ্লাইট( দৌড়ে পালানো); ফাইট( লড়াই করা) এবং ফ্রিজ( নিশ্চল হয়ে পড়া,মূর্তির মতন অচল হয়ে পড়া)। সঙ্গত কারনেই ধর্ষনজনিত পরিস্হিতিতে ব্রেইন ফ্রিজ হওয়াকে চয়েজ করবে।এই চয়েজ তাৎক্ষনিক ও অটোমেটিক।এতে ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন সুযোগ নেই।তাছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুনাল ফর রোয়ান্ডা- ১৯৯৮ সনে এক যুগান্তকারী রায়ে ধর্ষনে নারীর সম্মতির ব্যাপারটিই তুলে দিয়েছেন।রায়ে বলা হয়" ধর্ষন হচ্ছে তেমন শারিরীক আক্রমন যা যৌনতা সংশ্লিষ্ট এবং যা করা হয় জোরপূর্বক,দমনমূলক পদ্ধতিতে( করসিভ)। " এখানে ভিকটিমের সম্মতি ছিল কি ছিল না সেটি অবান্তর।
নির্যাতীতাদের চিকিৎসা : সবাই সব বিষয়ে বলছে কিন্তু কাউকে দেখছি না এদের আশু চিকিৎসা বিষয়ে কথা বলতে।এখানে বিস্তারিত লেখার সুযোগ নাই,কিন্তু তাদের শারিরীক ও মানসিক চিকিৎসা অতীব জরুরী।

 


সমাজ নারীকে " ডি- পারসোনালাইজ" করে অধিকতর " সেক্সুলাইজ" করার নানান পন্থা বের করে রেখেছে; নারীর যৌন স্খলন মানে সকল পবিত্রতা নষ্ট, অন্য সকল পুুরুষের জন্য সে শরীর ঘৃন্য এমন ধারনা সহ উপরে বর্নিত মিথগুলো না ভাঙ্গতে পারলে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা কমার সুযোগ কম।তবে এ সব দীর্ঘ মেয়াদী সামাজিক পরিবর্তনের আগে ধর্ষিতা নারীর আবেগগত ক্ষত নিরাময়ে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।কিথ নামে এক বিদেশী ধর্ষিতা নারী বলেন" আমার এ ক্ষত প্রকৃত পক্ষে নিরাময় হতে শুরু করে তখন, যখন আমি বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যা ঘটেছে তার জন্য আমি দায়ী নই।" আসুন এই নির্যাতীতা,অপমানিত,বিপর্যস্ত নারীদের পাশে দাড়াতে না পারলেও তাদের আবেগীয় ক্ষতের উপর " বদনামের,অপবাদের" লবন ছিটিয়ে সে ঘা- কে আরো গভীর করে না তুলি।

___________________________

 

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউটও হাসপাতাল
ইমেইল:[email protected]
phone:01715112900

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়