Ameen Qudir

Published:
2017-07-11 18:06:32 BdST

ইউরোপে হাসপাতালের ইমার্জেন্সির কষ্টের অভিজ্ঞতা : বাংলাদেশ হলে গজব নামত


মো. এ হালিম , ইউরোপ থেকে

__________________________

ঈদের দিন আমাদের ছোটছেলে মুসাব তার মাথায় খুবই ব্যাথা পায়, কপালের দিকে কেটে মাথার খুলির সাদা অংশ দেখা যাচ্ছিল । প্রচন্ড রক্ত পড়তে থাকে, ওর মা ওড়না দিয়ে মাথার ঐ অংশটি চেপে ধরে থাকল । ঘটনার আকস্মিকতায় ইমারজেন্সসিতে ফোন দিতেও পারছিলাম না, প্রতিবেশীর দরজায় নক করে তাকে দ্রুত আ্যম্বুলেন্স ডাকতে অনুরোধ করলাম । ৫মিনিটের মধ্যে আ্যম্বুলেন্স ও প্যারামেডিক হাজির হলো । তারা দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিল ।

তারপর ছেলেসহ আ্যম্বুলেন্সে করে নিকটস্থ হাসপাতালে গেলাম । প্যারামেডিক আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে কাউন্টারে বলে বিদায় জানাল । আমাদের অপেক্ষার পালা শুরু হল । আরও অসংখ্য রোগী আমাদের মতো অপেক্ষা করছে । এই কাউন্টারে ইনিশিয়াল চেকআপ যেমন: টেমপারেচার, প্রেশার ও ওজন মাপার পর একটি টিকিট ধরিয়ে দিল । আবার অপেক্ষার পালা । অনেকক্ষন অপেক্ষার পর বুরো অফিসে আমাদের নম্বরটি উঠল । সেখানে যেয়ে আইডি কার্ড, হেলথ কার্ড চেক করা শেষে বিশাল পৃষ্ঠার একটি বারকোডিং পেজ ধরিয়ে অপেক্ষা করতে বলল। এদিকে ছেলের মাথার ব্যান্ডেজ ছাপিয়ে রক্ত পড়ছে ।

 

ছেলেকে কোলে নিয়ে জিকির করা ছাড়া কোনো উপায় দেখলাম না । এটি হলো লিয়ন শহরে ফ্রান্স সরকারের একটি বড় হাসপাতালের শিশুদের জরুরি ওয়ার্ড । কেউ আমার ছেলেকে নিতে আসছে না দেখে অস্হির হয়ে একজন নার্সকে বললাম । তিনি অপেক্ষা করতে বললেন । এক ঘন্টা হয়ে গেল । দুই ঘন্টা হয়ে গেল । অপেক্ষা করছি আর করছি । প্রায় তিন ঘন্টা পরে একজন নার্স এসে ভিতরে নিয়ে গেলেন । ভিতরে যেয়ে আর এক জায়গায় বসতে বললেন । সেটি হলো আরেকটি ওয়েটিং রুম । ব্যাথায় আমার ছেলে কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে । প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে ঐ নার্স এসে আমাদেরকে একটি কেবিনে নিয়ে গেলেন । তারপর কিভাবে ব্যাথা পেল তার বিস্তারিত হিষ্ট্রি নিলেন ও দরজা বন্ধ করে বাহিরে গেলেন । এরপর একজন ইন্টার্ণ ডাক্তার এলেন, কাটা জায়গাটি দেখলেন । ছেলেকে রিলাক্স করার জন্য দুইটি ঔষুধের নাম লিখে চলে গেলেন । আমরা আবার ওয়েটিং রুমে ফিরলাম । অপেক্ষা করতে লাগলাম ।

প্রায় বিশ মিনিট পরে আরেক নার্স এসে অন্য কেবিনে নিয়ে গেল । মুসাবকে ঔষুধ খাওয়ানো হলো ও সাপোজিটর দেওয়া হল যাতে সে ঘুমিয়ে পড়ে । আবার ওয়েটিং রুমে ফিরে আসলাম । প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল ছেলে ঘুমে টলোমলো । এরপর ঐ ইন্টার্ণ ডাক্তার এসে আমাদেরকে একটি মিনি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল । অক্সিজেন মাক্স পরিয়ে লোকাল এনেন্সথেসিয়া দিয়ে ডাক্তার সেলাই করা শুরু করলেন । ডাক্তার নতুন হওয়ায় সুতার বাধন দিতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হলেন, আমি তাকে সাহস দিলাম । অনেকসময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত সেলাই শেষ হলো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার ছেলে উঠে বসল । ডাক্তার বলল আরো একঘন্টা অপেক্ষা করতে । প্রায় সাত ঘন্টা পরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলাম । এর আগেও একবার কানাডায় ও ফ্রান্সে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে পাঁচ ঘন্টার অধিক জরুরি বিভাগে অপেক্ষা করতে হয়েছে । এখানের জরুরী বিভাগকে আমার কখনোই জরুরী মনে হয় নি । দেশে তো কয়েক মিনিটের অপেক্ষায় নার্স ও ডাক্তারদের লাঞ্চিত করি, হাসপাতাল ভেঙ্গে বীরপুরুষ হয়ে যাই ।

আমাদের গরীব দেশের জরুরী বিভাগের সাথে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের জরুরী বিভাগের তুলনা করলাম । আমাদের দেশের নার্স, ডাক্তার ও হাসপাতালের কথা চিন্তা করে আমার গর্বে বুক ভরে উঠল । একবার সিটি কলেজের এক ছাত্রকে (আইডিয়াল কলেজের ছাত্ররা তার মাথা ফাঠিয়ে দিয়েছিল) নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়েছি । সাথে সাথে ২/৪ জন আয়া ও নার্স এসে তাকে বেডে নিয়ে গেল । ১০ মিনিটর মধ্যে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল । আসুন আমাদের দেশের নার্স ও ডাক্তারদেরকে সম্মান জানাই, তাদের পেশার গুরুত্বকে অনুধাবন করি । শতসীমাবদ্ধতার ভিতরে থেকেও আমরা পিছিয়ে নেই ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়