ওসিডি ডায়েরী -৫ খাবার খোলা থাকলে মনে হয়, টিকটিকি হেটে গেছে: নতুন ভাত রান্না না হলে খেতে পারি না

ডা. সুলতানা আলগিন

__________________________

কাঁচাপাকা খোচা খোচা দাড়ি ৪৫ এর কাছাকাছি এক ভদ্রলোক সামনের টুল টেনে বসলেন। কেমন জড়তা জড়ানো । হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। সমস্যা কি জানতে চাইলে খুব নিম্নস্বরে বলা শুরু করলেন। তার কথা কে কিভাবে নেয় এটা নিয়ে তার একটা অস্বস্তি ছিল।

পরে বললেন তিনি গ্রামে একটা এনজিওতে কাজ করছেন ৮-১০বছর হলো।বলছিলেন , রাস্তাঘাট বনবাদাড় পাড়ি দিয়ে কত অফিসে গেছি। আগে বাসা থেকে অফিসে যেতে ১০-১৫ মিনিটের মত সময় লাগত । আর এখন সে রাস্তা ঘুরে ঘুরে যেতে লাগে ১ঘন্টারও বেশী।

কেন রাস্তায় কোন সমস্যা ? রাস্তা কি গর্ত বা ভেঙ্গে গেছে ?

না । সব আগের মতই আছে। আমার মনে হয় বনবাদাড় থেকে সাপ ব্যঙ পোকামাকড় বিচ্ছু ক্যাড়া টিকটিকি বের হবে । আমার গায়ে বিষ জাতীয় কিছু স্প্রে করে দিবে। আমি অসুস্থ হয়ে যাব। আমার থেকে আমার পরিবার সদস্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন কি হবে।

এটা কি সম্ভব ? আপনার কি মনে হয় ?

আপা আমি গ্রামের ছেলে । আমি বনেবাদাড়ে দিনে রাতে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছগাছালির মধ্য দিয়ে কত ছুটাছুটি করেছি। আমি কি বুঝি না? ছোট বেলায় কত পোকামাকড়ের কামড় খেয়েছি। বিচ্ছু আগুনে পুড়িয়ে মেরেছি। কত গান্ধীপোকের ঘা শরীরে শুকিয়েছে। কিন্তু এখন শরীরে কেমন যেন অস্বস্তি হয় । যতই নিজেকে বুঝাই না কেন ঐ রাস্তা দিয়ে অফিসে যেতে পারি না।

শুধু কি রাস্তায় সমস্যা ।

বাসাতেও অকারণে স্ত্রী, সন্তানদের সাথে রাগারাগি করি। কোথাও কোন ময়লা ঝুল দেখলে এত রাগ হয় যে বলে বোঝাতে পারবো না। পিপড়ার ঘর দেখলে না ভাঙ্গা পর্যন্ত শান্তি পাই না। মনে হয় ঘরের মধ্যে কি যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে । খাবার খোলা থাকলে মনে হয় এর মধ্যে টিকটিকি হেটে গেছে। ঐ তরকারী বা ভাত খাই না। আমার স্ত্রী নতুন করে রান্না করে তারপর খেতে বসি। টিকটিকি মারা জন্য লাঠি নিয়ে ঘরে দৌড়াদৌড়ি । হাস্যকর। বুঝতে পারি আমি যা করছি তা ঠিক না। । কিন্তু নিজেকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না । এই চিন্তাগুলো কিছুুতেই যাচ্ছে না । বরং দিনকেদিন বেড়ে চলেছে। গত একবছর যাবৎ সহ্যের বাইরে।
আপা এখনতো আমার ঘরেবাইরে সব জায়গায় সমস্যা। অফিসে যেতে সময় লাগে। কখন কি গায়ে লাগে এই আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করা আমার জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আমার চেহারা পর্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে ।

রোগীকে আশ্বস্ত করলে কিছুটা রিল্যাক্স হন। বললাম উনি শুচীবাই রোগে ভুগছেন। এর আগে কখনও চিকিৎসা নেন নাই। যেহেতু তাড়াতাড়ি এসেছেন আধুনিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে একটাই শর্ত ওষুধ খেতে হবে অনেকদিন। টানা ১-২বছর। বিহেভিয়ার থেরাপী নিতে হবে। ফলোআপ করতে হবে নিয়মিত। বাসায় যে কাজ বা টাস্ক দেয়া হবে তা পালন করতে হবে । আজ থাক কালকে করব এমনটি যেন না হয় ।

____________________

________________________

প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?

একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।

১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।ভুক্তভোগীদের ওসিডি ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় প্রতি মঙ্গলবার , সকাল ১০টা থেকে ১টায় অাসার অনুরোধ রইল।
এ জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আউটডোরের মাত্র ৩০ টাকার টিকেট নিতে হবে।

লেখার সৌজন্য

ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
____________________________

ডা. সুলতানা আলগিন । সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।