Ameen Qudir

Published:
2017-06-24 17:47:32 BdST

ডাক্তার প্রতিদিন ইদ সংখ্যা কবি ডা. রবীন ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা


 

 

 

 

 

 

কবি ডা. রবীন ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা

 

__________________________________


চেনামুখ / রবীন ঘোষ
.
দুইহাত দুইপাশে ছড়ানো । ঊর্ধ্বমুখি । চিবুকে নবারুণ ।
.
ছেলেটাকে যেন চেনা যায় ।
দোকানটা মনোহারী বিলাসে ভরা। ঝুটো গয়নার চমক ।
অন্যপাশে বস্তাভরা আলু-পিয়াজ, নির্মেদ মরিচের ঝোলা ।
ক্যাশবাক্সে সিঁদুরের ছোপ। সিদ্ধিদাতা গণেশ কুঠুরীতে ।
কোলাহল ছাপিয়ে ভেসে আসে সুগন্ধী ধূপেরই ঘ্রাণ ।
.
অরণ্যে রোদ্দুর আড়াল করে তরুছায়া ।
নিষাদ ও শ্বাপদের লুকোচুরি রাতভর ।
আকাশ জুড়ে কালো মেঘের আড়ালে তবু জেগে থাকে শুভ্রবলয় ।

________________________

২.

লতার মতো / রবীন ঘোষ

এ বড়ো মায়া ! শেকড়ের সাথে মাটি ও নদীর যে টান –

আশ্লেষে জড়ায়ে থাকি
কতো শতাব্দীর শীলা পাথরের মতো
তোমার হাতের পাশে নিরুদ্বেগ যেন বৃক্ষশাখা
আমার হাত নির্বিঘ্নে শুয়ে থাকে
আঙ্গুলে আঙ্গুল – স্বর্ণলতার মতো
জড়ায়ে জড়ায়ে থাকি
বড়ো যে মায়ায় পাখপাখালির টানে।

________________________________

৩.

দূরের তুমি / রবীন ঘোষ

বৃত্তের শহর থেকে বেরিয়ে আসি, নর্তকিরাও সাজঘরে
মুখোশ পরে আজ যে মেয়েরা মজলিস মাতিয়ে গেলো
তারাও পায়ের মল খুলে ফিরে গেছে আবাসনে।
.
টেবিলে আধাশেষ গ্লাস ; টুকরো খাবার ইতস্তত ছড়িয়ে চারিদিকে।
একটু পরে কেতাদুরস্ত বালকেরা এসে সব ধুয়ে মুছে দেবে।
.
জলের ধারা এসে শুকিয়েছে জঙ্গলেরই এইপাশে
ত্রস্ত চোখ হরিণীরা গুটিপায়ে ক্ষীনকায়া নদীটির ধারে
বাতাসের মর্মর শুনি, তোমার বসতী বুঝি অরণ্য ছাড়িয়েও
- আরো দূরে ?

___________________________

৪.

সরল / রবীন ঘোষ

পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে টেনে চাদরটাকে গুটিয়ে আনি
যদিও এটা জানি যে, বিজ্ঞানীরা বলেছেন
পৃথিবী গোলাকারই , সমতল নয় ।

চাদরের উপরে বাঁদরের ছদ্মবেশে এক ভড়ং বসে থাকে
তার মুখোশের শেষ নেই ,
ঐশ্বরীয় অথবা খাস ইবলিসের –

শোকের রাতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে
আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ে,
সারাটা জীবন বাবার কোনও ভড়ং ছিলোনা ;
আই,সি,ইউ তে জীবনযুদ্ধের শেষ সময়েও
তার মুখটা ছিল অনাবিল আর সরল ।

আমার শরীরে একজোড়া পাখনা গজালে
ঠিক এই পৃথিবীটাকে গুটিয়ে
আরেক গ্রহে নিয়ে যেতাম ।

অলৌকিক চাঁদের স্নানে যখন পৃথিবী আর আকাশ
মেলবন্ধনের সেতু বেঁধে রাখে
সেই অপার্থিব অবগাহনের রাতে
বাবা, তোমার মুখটা খুব মনে পড়ে ।


____________________________

৫.

জ্বলে যায় / রবীন ঘোষ

যেখানেই হাত রাখ, সবুজের গহীন অরণ্য
নিমিষেই ছাই হয় আবাদী জমিন
পাখপাখালির আওয়াজ, ভয়ার্ত বনভূমি ;

শ্রমণের গৈরিক বসন
নির্বাসনে হেঁটমাথা দেহাতী দোতারা –

ঋতু বদল হলে পাতাঝরার দিন
পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলা সরুপথ
বিবর্ণ শুকনো পাতায় নিজেকে ঢেকে ফেলে –

তোমারও সময় হল এবার
বুকের সবুজ শ্বাস যেটুকুই বাকি ছিল
হাত রাখ, জ্বলে যাক সেইটুকু দাবানলে ।


_______________________________

৬.

জ্বলে যায় / রবীন ঘোষ

বিচ্ছেদ শ্রাবণে একা পথ । আমিও একাকি –
আমি কি একজনই শুধু, জড়িয়ে থাকোনা তুমি ?
যে বিরহ তীব্রতম ছিল এক কাঁচপাত্রে ঢাকা
তুমি কি দাওনি জিভ রসে বশে ঠোঁটের উষ্ণতা ?

দূরের নদীজলে ধুয়ে আসি তৃষ্ণার মূল
চন্দনের ধূপ, কাঁটাফল অনিন্দ্য নৈবেদ্যে
যত্নে সাজাই বনে দীর্ঘ বক্ষের অস্থি’র স্তুপ
প্রেম ও কাম জ্বলে একসাথে, রাত্রির সাজান বাগানে ।

--- ' পিলসুজে সাঁঝের বাতি '

____________________________

৭.

ফাগুন / রবীন ঘোষ

হাসপাতালের সামনের চওড়া রাস্তাটা
হলদে ঝরা পাতায় ঢেকে আছে ।
এও এক সীমান্তপ্রাচীর –
টুপ করে ওই পারে পড়ে গেলে
------- না ফেরারই দেশ ।

এইখানে পরীরাও থাকে। সাদা ড্রেস ,
লাল নীল সবুজ রঙের কোমর-বন্ধনী
প্রজাপতির চঞ্চল ডানা,
ফিসফিস করে কথা বলে
কপালে হাত দিলে বাতাস মুহূর্তেই ফুরফুরে
ব্যথার চাবুকেরা কিছুক্ষণের জন্যে মোলায়েম ।

এইভাবে পাতা ঝরে – তারপরেও নতুন
অঙ্কুরোদগম, দুরন্ত ফুলের হাসি বলে দেয়
--------- এখন ফাগুন –
------ বসন্ত তাহলে এসে গেলো ।

_______________________

কবি ডা. রবীন ঘোষ , ' পিলসুজে সাঁঝের বাতি ' কাব্য গ্রন্থ খ্যাত লোকসেবী ডাক্তার ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়