Ameen Qudir

Published:
2017-06-17 23:29:26 BdST

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ইতিহাস রচিত হলো আজ


 

ডা. রাজীব দে সরকার

__________________________

আজ কী একটি ইতিহাস রচিত হলো?

দেশের স্বাস্থ্যখাতের অর্জন জনগণকে কতোটুকু স্পর্শ করছে, এসব নিয়ে বিতর্ক তৈরী করাটা হালের ফ্যাশন বললে বোধহয় ভুল হবে না। তথাপিও স্বাস্থ্যখাতের নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলো সেই পঙ্কিলতায় কখনো থমকে যান নি - অন্তঃত এদেশের ইতিহাস তাই বলে।

আজ হয়তো সেরকম একটি ইতিহাস রচিত হলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পটভূমিতে। অন্যভাবে বলতে গেলে হয়তো আবারো দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী মানুষগুলো তাদের ইতিহাস নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করে সমাজের কাছে স্পষ্ট করলেন তাদের অবস্থান।

কথা বলছিলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আয়োজনে দেশব্যাপী চিকুনগুনিয়া বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে।

বলা বাহুল্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন মহাপরিচালক মহোদয়ের পরিকল্পনা, তত্ত্বাবধান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এর এহেন জনস্বাস্থ্য হিতকর অসামান্য আয়োজন সম্ভবতঃ এই প্রথম। এদিন থেকে সমসাময়িক একজন চিকিৎসক হিসেবে গর্ব হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনক্রমেই না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ স্যার ও তার অধস্তন সকলে মিলে ফেইসবুকের মাধ্যমে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুললেন বোধ করি। আন্দোলনে আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটি স্পষ্ট করেছেন ঢাকার এক দল চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।

শুধু রোগীদের চিকিৎসা কিংবা মেডিকেল সায়েন্স এর কঠোর অনুশীলন নয়, বরং সামাজিন আন্দোলনের রূপরেখা দাঁড় করিয়ে রোগের সংক্রমন রোধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও অন্য অনুপ্রেরণা যোগানোর অনন্য এই আয়োজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন ঢাকা মহানগরীর সরকারী-বেসরকারী সকল মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, সকল নার্সিং ইনস্টিটিউট, সকল প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট, সকল মেডিকেল এসিস্টেন্ট ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগুণিত শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও চিকিৎসক।

 

প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ৯২টি দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা মহানগরীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এই ব্যতিক্রমী অভিযান।

অভূতপূর্ব এই কর্মযজ্ঞে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে প্ল্যাটফর্ম নামের চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত একটি গ্রুপ যার সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ৭০০০০ এর অধিক।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ছুটি না কাটিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক সহ, পরিচালকবৃন্দ, উপপরিচালকবৃন্দ, সহকারী পরিচালকবৃন্দ, রোগ-নিয়ন্ত্রন শাখা, কো-অর্ডিনেশন সেল, এমআইএস, প্রশাসন শাখা, অন্যান্য কর্মকর্তাসহ নিপসম এর উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন এই কর্মযজ্ঞের আয়োজনে।

মেডিকেল শিক্ষার্থীরা তাদের হাতে পাওয়া ঈদের ছুটি না নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন এই সামাজিক কার্যক্রমে। পারস্পরিক যোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছিলো চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের এক বিশাল নেটওয়ার্ক।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই আয়োজনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা ঘোষণা করেছেন আরো আগেই। আজ খুব সকালে আয়োজিত উদ্বোধনী সভায় সম্মানিত স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্য সেবা) স্যারের উপস্থিতি সেই বার্তাই দেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর পক্ক থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিলো যথেষ্ট বিচক্ষণতা ও দ্রুততার সাথেই। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে দেখা মিললো স্বয়ং মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ নাসিম এমপির। চিকিৎসকদের এহেন মহতী কর্মযজ্ঞের সাথে কন্ঠ মিলিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন সহ সমাজের সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

নাহ, সে অর্থে আজকের দিনে কোন ইতিহাস রচিত হয়নি। কারন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে একজন রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার গল্প এক একটি ইতিহাসই বটে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি প্রায় উত্থিত মহামারী চিকুনগুনিয়াকে মোকাবেলা করার জন্য যেভাবে সাদা অ্যাপ্রন বাহিনী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো, তা ইতিহাস না হলেও একটি অনবদ্য আশা জাগানিয়া রোমাঞ্চকর গল্পের চেয়ে কম নয়।

দেশকে ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় চিকিৎসক, সেবিকা, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী মানুষগুলো অন্যান্য পেশাজীবীদের থেকে এক হাত এগিয়ে গেলেন যদি বলি - খুব কী ঔদ্ধত্য করা হবে?

জয়তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ

#চিকুনগুনিয়া_প্রতিরোধে_স্বাস্থ্যসেবা_দানকারীদের_সামাজিক_উদ্যোগ

__________________________________

লেখকঃ
ডা. রাজীব দে সরকার

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়