Ameen Qudir

Published:
2017-06-15 18:07:08 BdST

দোহাই লাগে ফোনে চিকিৎসা দেবেন না


 

 

 

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
_________________________

বেশ কিছু দিন আগে এক জুনিয়র ছেলে আমাকে দুঃখ করে বলেছিলো,তার এলাকার বা তার কোন আত্মীয় এর ১০ মাসের বাচ্চার চিকিৎসা সে মোবাইলে দিয়েছিলো।ওরা শুধু বলেছিলো বাচ্চার অনেক জ্বর কি করবে?ও প্যারাসিটামল সাজেস্ট করেছিলো বয়স অনুযায়ী ডোজ দিয়েছিলো,কিন্তু ওয়েট জানতো না।আর সম্ভবত একটা এন্টিবায়োটিক দিয়েছিলো।ব্যাস রাতে বাচ্চার হটাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।হস্পিটালাইজড করতে হয়।বাচ্চার পরিবার ওই ছেলের গুষ্টি উদ্ধার করে।যদিও হাস্পাতালে গিয়ে ডায়াগনোসিস হয় এআর আই মানে শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ।সম্ভবত নিউমোনিয়া ছিলো।এখানে ছেলের চিকিৎসার কোন ভুল ছিলো না।তারপর ও এই অবস্থা হয়েছিলো।আল্লাহ না করুক বাচ্চা যদি পথে মারা যেত, তাহলে কি হতো?এইট পাশ সাংবাদিক একে ভুল চিকিৎসা বানায় রিপোর্ট করতো,দুই পাশ থেকে টাকা খেতো,মোট কথা ক্যারিয়ার জীবনের শুরুতে ধাক্কা।

 


আমার ইন্টার্ন জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক ওয়ার্ড ছিলো শিশুবিভাগ।তাই আর যাই করুন মোবাইলে বা ইনবক্সে কোন বাচ্চার চিকিৎসা কখনওই দিবেন না।বাচ্চা হলো সসবচেয়ে সেন্সেটিভ ইস্যু।এমনিতেও রুগী না দেখে চিকিৎসা দেবার কোন নিয়ম নাই।

শুধু এমবিবিএস লেভেলেই ধরি,থার্ডইয়ার থেকে ফিফথ ইয়ার পর্যন্ত একটা জিনিস বার বার শিখানো হয়।হিস্ট্রি টেকিং।মনে আছে,সেখানে বলা হয় রুগী নাম থেকে শুরু করে সব জিনিস কতটা গুরুত্বপূর্ণ!! তার কম্পলেইন,তার পাস্ট হিস্ট্রি,তার পারসোনাল হিস্ট্রি ড্রাগ হিস্ট্রি কোনটার চেয়ে কোনটা কম গুরুত্বপূর্ণ না।এরপর রুগীর টোটাল এক্সামিনেশান।মোট কথা একটা রুগী দেখা ছাড়া চিকিৎসা দেয়ার কোনই নিয়ম নাই।আর এর জন্যে আপনি যদি কোন বিপদে পড়েন,তার পুরা দায়ভার আপনার নিজের কারন আপনি নিয়ম মানেন নাই।

শুধু একটা উদাহরণ দেই,ধরেন CKD(আপনি তার এই হিস্ট্রি জানেন না) এর রুগীর আত্মীয় আপনাকে ফোন করলো তার রুগীর পা ভেঙেছে,স্বভাবতই আপনি তাকে কিটোরোলাক এডভাইজ করতে পারেন।তিনদিন পর রুগী রেনাল ফেইলিয়র নিয়ে যখন ভর্তি হবে,তখন সেখানকার ডাক্তার তার পুরা হিস্ট্রি নিয়ে যখন জানবে আপনি তাকে কিটোরোলাক দিয়েছেন।তখন সে আপনাকে দোষারোপ করবেই ;স্বাভাবিক।আপনি হলেও করতেন।এখানে আপনার দোষ আপনি রুগী না দেখে রুগী সম্পর্কে না জেনেই চিকিৎসা দিয়েছিলেন।অতএব হিরো হতে গিয়ে যেকোন সময় জিরো হয়ে যেতে পারেন

এখন আসি ইনবক্স প্রসঙ্গে ,কিছুদিন আগে এক অল্প বয়সি মেয়ে আমাকে বললো তার দুইবগলে মাংস বাড়ছে।আমি অনেকবার বলেছিলাম,কিছু করার দরকার নাই।কিন্তু আনমেরিড ছিলো,তাই বলেছিলাম,কস্মেটিক সার্জারি করাতে পারেন।সে জিজ্ঞেস করেছিলো কত খরচ পরবে?আমি একজন কস্মেটিক সার্জনকে অনেক অনুরোধ করে কম করে রেখে হিসাব জানতে চেয়েছিলাম।সে বলেছিল,'আপা আপনি বলেছেন যখন ২০ হাজার টাকার মধ্যে করে দিব।'মেয়েকে হিসাব দিলাম।


মেয়ে পরেরদিন স্ট্যাটাস দিলো,ডাক্তারদের আয়ের উপর কর বসানো উচিৎ এরপর সে আমাকে আনফ্রেন্ড করে।তার ধারনা আমি দালালী করেছি।অথচ একটু খোজ নিয়ে দেখেন,দুই বগলে কস্মেটিক সার্জারি কেউ ৬০ হাজারের নিচে করেনা।মানুষের উপকার করার বিপদ চিন্তা করে দেখেছেন?

কয়দিন আগে আরেক মেয়ে,আমাকে ইনবক্সে বলল,তার ব্রেস্টে নীলচে কি জানি উঠেছে,আমি বললাম,না দেখলে কেমনে বুঝবো?দেখি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ব্লক করেছে।আমি এরপর থেকে আর ভাল হতে চাই না।মানুষ একমাত্র প্রানী যাদের আগ বাড়ায় উপকার করতে হয় না।

আমার জামাইএর ফোন দিন রাত বাজতে থাকে,রাত দুইটা,তিনটা চারটায়ও তার ফোন আসে।মানুষ কখনও আমাদের যে একটা ব্যাক্তিগত জীবন আছে তা বুঝতে চায় না।সে ভাবে সে একা ফোন করেছে।

আমার ইনবক্সে প্রতিদিন,গড়ে ১০/১৫ জন তাদের সমস্যার কথা বলে সারাদিন এইসব দেখার সময় হয় না।অনেককে রেসপন্স না করলে আনফ্রেন্ড করে দেয়।মানে তারা আমাকে ফাও চিকিৎসার জন্যে ফ্রেন্ড বানাইছিলো।

 

দুইদিন হলো আমি প্রচন্ড অসুস্থ,এরমধ্যে ফোন বা ইনবক্সে, 'কেমন আছেন',জানতে চাইলে পরিচিত হলে বলছি,একটু অসুস্থ,তারা হেসে বলে কমন ডায়ালগ 'ডাক্তাদের আবার অসুখ হয় নাকি?'ডাক্তাররা যে প্রতি মুহুর্তে ঝুকির মধ্যে থাকে এইটুকু বোঝার ক্ষমতাও তাদের নাই।তারপর শুরু হয় তার নিজের সমস্যা বলা।আমি যে কি অসুস্থ,কথা বলার সামর্থ্য আমার নাই এইটকুও বুঝতে চায়না।মানবিক হবার দায়িত্ব মনে হয় একা ডাক্তাদের তাই না?

যারা ডাক্তার না,তাদের উদ্দেশ্যে একটা পরামর্শ দিবো,অন্তত আপনার ছোট বাচ্চাটির চিকিৎসা ডাক্তারকে দেখিয়ে করান,না হলে তার যেকোন ভুল চিকিৎসার জন্যে ডাক্তারের বিরুদ্ধে কম্পলেইন করে লাভ হবেনা।কারন ফোনে চিকিৎসা নেয়ার বা দেয়ার কোন নিয়ম নাই।কি হবে গাড়ি বাড়ির জন্যে টাকা জমায় রেখে,যদি বাচ্চাটার কোন বড় ক্ষতি হয়ে যায়।

আরও কেউ কেউ আছেন যারা কাজের মেয়ের চিকিৎসা ফোনেই সেরে ফেলতে চান,আমার মনে হয়,তার ব্যাপারে যদি একান্ত টাকা পয়সা খরচ করতে না চান তাহলে অবশ্যই,নিকটস্থ সরকারী হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিন।অবহেলা করবেন না।এখানে কিছু হলে আপনার বিপদ বুঝতেছেন তো?
মোটকথা, রুগী দেখা ছাড়া কোন চিকিৎসা না।মনে রাখবেন এক্সিডেন্ট জীবনে একবারই হয়।

_____________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস , সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়