Ameen Qudir

Published:
2017-05-15 23:35:18 BdST

ইন্টারভিউতে ও দুম করে বলে বসল “না স্যর,আমি মানুষ মারার মিসাইল বানাব না..


 

 

 

.অধ্যাপক ডা. অনির্বান বিশ্বাস
_______________________

 

ও পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল।একটু বেশিই ভাল ছিল।এখনও প্রচুর পড়াশোনা করে।ওর সাথে যখন গল্প করি,আমি চুপ থাকার চেষ্টা করি..ওকে বলতে দেই।ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানা যায়,শেখা যায়।

অত ব্যস্ততা সত্ত্বেও, ও বছরে একটি নাটক লেখে।পূজোয় DRDO তে সেটা অভিনয় হয়। ঐ নাটক লেখার জন্য ও তিন চার মাস আগে থেকে পড়া শোনা করে। একবার মালদার গম্ভীরা ছিল ওর বিষয় বস্তু।আমাকে তার resource খোঁজার ভার দিয়ে ছিল ! সে এক কান্ড !

ও DRDO’র সিস্টার কনসার্ন,RCI’র senior scientist . RCI, ভারতের মিসাইল টেকনোলজির সূতিকাগার।ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি A P J Abdul Kalam এর ব্রেন চাইল্ড। উনি অনেক বছর RCI’র ডিরেক্টর ছিলেন।

ও আদর্শবাদী।দেশে থেকে research করবে,এটাই ছিল ambition।অতঃপর DRDO তে scientist হিসেবে যোগদান। সেই সময়( 1992-93) কালাম স্যর চাইছিলেন ভারতের IIT/টেকনলজির ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা নতুন ছেলেমেয়েরা,RCI তে যোগদান করুক।

ইন্টারভিউতে ও দুম করে বলে বসল “না স্যর,আমি মানুষ মারার মিসাইল বানাব না..” ।
কালাম স্যর বললেন,”অনিন্দ্...তুমি মারতে যাবে কেন ? কিন্তু,তুমি প্রিপেয়ারড না থাকলে,কেউ যদি এই দেশকে আঘাৎ করতে চায় ,তুমি কি করবে ?”
ও চুপ। কালাম স্যর বললেন,”অনিন্দ্ আমাদের এই দেশ,মানে আমাদের মা খুব গরীব..তোমাদের খুব বেশি টাকা দিতে পারবে না..তোমার qualification এ তুমি বিদেশ থেকে অনেক ডলার রোজগার করতে পারবে..তবু...গরীব মাকে ছেড়ে সব ছেলে কি বিদেশ যায় ?”
এইসবে,ও এবং ওর মত কিছু আদর্শবাদী ছেলে মেয়ে RCI তে জয়েন করল।

ওই সব পাগলগুলো দিন রাত ল্যাবে পড়ে থাকত !
অনেক রাত…একমনে কাজ চলছে। হঠাৎ পিঠে হাত।
ও মাথা ঘুরিয়ে দেখে,কালাম স্যর,হাতে এককাপ কফি..” অনিন্দ্… would you like to have a cup of coffe?” মুখে স্নেহের হাসি।
অতঃপর, অনেক সাকসেসফুল মিসাইল . অগ্নি1…আকাশ..পৃথ্বি..অগ্নি2…আরো অনেক কিছু(সব আমার জানা নেই)..অগ্নি3..4..
2001 এ ও পেল “Young Scientist of the year” Award.
ও/ওরা এখনও অনেক রাত অবধি ল্যাবে কাজ করে।
এক বার আমি বললাম,”আচ্ছা,পাকিস্তানের এই বজ্জাতি…তোরা..”
ও আমায় চুপ করায়,বলে “ওটা আমাদের ক্লোজড এন্ড কমপ্লিট চ্যাপ্টার..” ও হাসে।

কাল রাতে ও আমায় ফোন করল..”দাদা,এবার আমায় “Scientist of the year” দিচ্ছে..”
আমি উল্লসিত হয়ে “দারুন খবর ! কোথায় এখন তুই ? Celebrate করছিস না ?”
ও হাসে,ফোনের এ প্রান্ত থেকে বুঝতে পারি। “নারে,ল্যাবে আছি…”
আমি,এত বছর ধরে ওকে চিনি…নিশ্চিত হয়ে বলি..” ঐ নীল আকাশের নীচে? ”
ও ,হা হা করে হাসতে থাকে।

ও আমার ভাই…Anindya Biswas
অনেক অভিনন্দন,ভাই ! খুব ভাল থাকিস !
________________________________
অধ্যাপক ডা. অনির্বান বিশ্বাস। বাংলার প্রখ্যাত লেখক কবি। লোকসেবী। সুচিন্তক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়