Ameen Qudir

Published:
2017-04-25 16:27:44 BdST

চলমান সিএনজিতেই সবরকম সেবার আয়োজন ফিরোজের


 


সুহাদা আফরিন

_____________________________

 


জরুরি ফোন করতে হবে, কিন্তু মুঠোফানের চার্জ শেষ। এদিকে গন্তব্যে পৌঁছাতেও অনেকটা সময় বাকি। চিন্তা নেই, মুঠোফানে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কোনো তথ্য বা নম্বর টুকে রাখার দরকার। অথচ সঙ্গে কাগজ-কলম নেই। ভাবনা নেই, আছে খাতা ও কলমের ব্যবস্থা। প্রচণ্ড গরম পড়ছে, কিন্তু কষ্ট পেতে হবে না। কারণ, আছে ফ্যানের ব্যবস্থাও।
যাত্রীদের কথা ভেবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এত সব ব্যবস্থা করেছেন মোস্তফা ফিরোজ। এই ‘অসাধারণ’ কাজের কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের নিউজফিডে কিছুদিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি অটোরিকশা ও মোস্তফার হাসিমাখা মুখের ছবি।
গতকাল সোমবার কারওয়ান বাজারে কথা হয় মোস্তফার সঙ্গে। তাঁর গলায় নীল ফিতায় ‘পরিচয়পত্র’ ঝোলানো। এক পাশে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা লেখা। অন্য পাশে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের মুঠোফোন নম্বর লেখা। বয়স জানতে চাইলে মাঝারি গড়নের ফিরোজ বলেন, ১৯৭৮ বা ৮০ সালে তাঁর জন্ম। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি তাঁর।
মাদারীপুরের মোস্তফা ফিরোজ ঢাকায় এসেছেন ২০ বছর আগে। অটোরিকশা চালাচ্ছেন ১০ বছর ধরে।
মোস্তফার আলোচিত অটোরিকশায় উঁকি দিতেই দেখা গেল, ভেতরে দুটি ফ্যান। একটি চালকের আসনের পাশে। অন্যটি যাত্রীর আসনের সামনে। মোস্তফা বলেন, চার বছর আগে ছোট একটি ফ্যান লাগিয়েছিলেন যাত্রীদের জন্য। গরম বাড়ায় সেটা পাল্টে বছরখানেক আগে একটু বড় একটা ফ্যান লাগিয়েছেন।
যাত্রীসেবায় আর কী কী ব্যবস্থা আছে? জানতে চাইলে মোস্তফা বলেন, রাজধানীতে কিছুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীদের জন্য ছাতার ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। কোনো যাত্রী বাসা কিংবা অফিসের সামনে পৌঁছেছেন। কিন্তু বৃষ্টির জন্য অটোরিকশা থেকে নামতে পারছেন না। ওই যাত্রী তাঁর কাছ থেকে ছাতা নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারবেন। তবে আবার ফেরত পাঠাতে হবে তাঁর কালো রঙের ছাতাটি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোস্তফা ফিরোজ।
ফেসবুকের কল্যাণে এসব কথা হয়তো অনেকেরই জানা। তবে একটি বিষয় হয়তো তাঁদের অজানা। কারণ, গতকালই সেটি সংযোজন করেছেন মোস্তফা। ছোট একটি শিশুর এ-ফোর আকারের একটি রঙিন ছবি লেমিনেট করে অটোরিকশার পেছনে টাঙিয়েছেন তিনি। ছবিতে লেখা, ‘শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। দয়া করে ধাক্কা দিবেন না।’ ফিরোজ বলেন, শিশু, বৃদ্ধ বা অসুস্থ মানুষ অটোরিকশায় থাকতে পারেন, সতর্ক করার জন্য নিজের ছেলের ছবি লাগিয়েছেন, যাতে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা না দেয়।
কিন্তু কেন এত আয়োজন? ফিরোজের ভাষায়, যাত্রীর একটু আরাম দরকার। তাঁদের যেন হয়রানি ও কষ্ট না নয়। সবই করেছেন নিজের পয়সায়, নিজের ইচ্ছায়। তিনি আরও বলেন, ‘সব ব্যাটারিতে চালাই। এখন পর্যন্ত সমস্যা হয় নাই। মানুষ উইঠা ধন্যবাদ দেয়। খুশি হয়।’
যাত্রীদের আরও সেবা দিতে চান মোস্তফা। শিগগিরই মুঠোফোনের মাধ্যমে খবর শোনানোর ব্যবস্থা করবেন। গানও থাকবে? বলেন, গানে মনোযোগ নষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গান চলবে না।
ফিরোজ মিটারে চলেন। তাঁর কথা, ‘ঢাকা মহানগরে সব মিটারে চলার নিয়ম, সরকারি নিয়ম মাইনাই চলি। তয় কেউ খুশি হইয়া অনেক সময় বকশিশ দেয়।’
ফিরোজের অটোরিকশাটি নিজের নয়। দিন শেষে মালিকের গ্যারেজে জমা দিতে হয়। মালিককে দিয়ে দিন শেষে পাঁচ থেকে সাত শ টাকা আয় হয়। বলেন, মালিক খুশি তাঁর এই কাজে।
স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে মিরপুরে থাকেন মোস্তফা। এ শহরের মানুষকে নিয়ে অনেক ভাবেন অটোরিকশার এই চালক। ফিরোজ বলেন, ‘ট্রাফিক সিগন্যালে জেব্রা ক্রসিং থাকলে মানুষের পারাপারে ভালো হইত। শিশুদের স্কুলের সামনে গাড়ির গতি কমানো দরকার। আর হাইড্রোলিক হর্ন অনেক ক্ষতিকর।’
শেষে মোস্তফা বলেন, নিজের একটি অটোরিকশা হলে সেটাকে মনের মতো করে সাজাতেন তিনি।

_________________________

সৌজন্য প্রথম আলো

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়