Ameen Qudir
Published:2017-04-24 17:22:01 BdST
ওষুধ প্রশাসনের বেধে দেয়া দামে সারা দেশে হার্টের রিং পরানো শুরু
ডা. জাহিদুর রহমান
_______________________________
গতকাল থেকেই ওষুধ প্রশাসনের বেধে দেয়া দামে সারা দেশের ক্যাথল্যাবগুলোতে হার্টের রিং পরানো শুরু হয়েছে। প্রতিটি রিংয়ের প্যাকেটের গায়ে আমদানিকারকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, সর্বোচ্চ খুচরো মুল্য, উৎপাদন ও মেয়াদ শেষ হবার তারিখ উল্লেখ করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। সুতরাং আজ থেকে একই রিং সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতাল ভেদে বিভিন্ন দাম বিক্রি করার আর কোন সুযোগ থাকছে না। সেই সাথে পন্যের মান নিয়ন্ত্রন করাও এখন অনেক সহজ হয়ে গেল। সর্বোচ্চ খুচরো মুল্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে ২০১২ সালের মার্ক আপ ব্যবহার করায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে এখনো রিংয়ের দাম অনেক বেশি। তারপরও স্বস্তির বিষয় বহুল ব্যবহৃত ভাল মানের রিংগুলোর চলতি মডেলগুলো খোদ সরকারি হাসপাতালগুলোর আগের দামের চেয়েই ৩০% থেক্র ৬০% পর্যন্ত কমেছে। যা শুধু সরকারের একটি যুগান্তকারী সাফল্যই না, লাখ লাখ হৃদরুগির জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে। আরেকটি সুখবর হল হার্টের রিং নির্ধারন কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী মেডিক্যাল ডিভাইসগুলোর মুল্যও নির্ধারন করে দিতে যাচ্ছে। সেই সাথে তারা পুরানা মার্ক আপ পরিবর্তন ও ইনভয়েস সংক্রান্ত দুর্নীতিগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, যা বাস্তবায়ন করা হলে হার্টের রিংসহ সব ধরনের রিংয়ের দাম আরো কমবে।
আমাদের মধ্যে যারা ডাক্তার আছেন তাদের কাছে অনুরোধ, দেড় লাখ টাকা দামের যে রিং বছরে ৫ টাও ব্যবহার করা হয় না, শুধু সেটা নিয়ে পরে না থেকে দেড় লাখ টাকার যে রিং ৬২ হাজার টাকা হয়েছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। যে কোন মুল্যে বিরোধিতা এবং যে কোন ভাল কিছুতে এলার্জি রোগটার চিকিৎসা করান।
আমাদের মধ্যে যারা ব্যবসায়ী আছেন তাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা হার্টের রিং ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে আমদানি করা শুরু করুন, সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামুন, গুটিকয়েক অসৎ ব্যবসায়ীর হাত থেকে মেডিকেল ভিভাইসের বাজারটাকে মুক্ত করুন। একমাত্র হার্টের রিং আমদানিকারকদের মিথ্যা এবং ভুল তথ্য দেয়ার কারনেই আজকে ন্যায্য একটা দাম আমরা পেলাম না।
আমাদের মধ্যে যারা আইনজীবী আছেন তারা সম্ভব হলে দুর্নীতিবাজ রিং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের মামলা করুন। যারা কাস্টমসে আছেন তারা একই রিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের ইনভয়েস যোগাড় করুন, কোন অসংগতি পেলে ওষুধ প্রশাসনকে জানান। যারা দুদকের দায়িত্বশীল পদে আছেন তারা রিং বানিজ্য সিন্ডিকেটে সক্রিয় ব্যবসায়ী, ডাক্তার, কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব নিন, পাসপোর্ট চেক করুন, সব মিলিয়ে দুর্নীতিবাজদের চাপের মধ্যে রাখুন।
অবশেষে অস্বাভাবিক বেশি দামের কারনে যেসব হৃদরুগী হার্টের রুগি রিং বসাতে পারছেন বলে আমাদের জানিয়েছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা এখন দেড় দুই লাখ টাকার রিং অর্ধেক দামে পাবেন, সব হাসপাতালে। যেগুলো যথেষ্ট ভাল কোম্পানির তৈরি এবং চলতি মডেলের। যারা দাম কমলে মান কমে যাওয়ার গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন, তারা আজকে নিশ্চিন্ত হতে পারেন।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যতটুকু অর্জন তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশে ছিলেন Mahbub Kabir Milon ভাই, তাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর সামর্থ্য আমার নাই। চলমান আন্দোলনে যেমন দুর্নীতিবাজ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সচেতন ডাক্তারদের অবস্থান দেখেছি, তেমনি দেখেছি দেশের জন্য, মানুষের জন্য একজন আমলার দিনরাত খেটে যাওয়া।
__________________________
লেখক ডা. জাহিদুর রহমান মানবসেবী । সুলভ সেবা আন্দোলনের জনক।
আপনার মতামত দিন: