Ameen Qudir

Published:
2017-04-24 16:59:09 BdST

'একটি শুভ বিবাহ' টিকিয়ে রাখার সামাজিক সালিশি তে বসে লিখছি


 

ডা. নাসিমুন নাহার
__________________________________

জামাই বৌ দুজনেই ডাক্তার।দশ বছরের বিবাহিত জীবন।তারও তিন বছর আগের থেকে প্রেম।দুটো ফুটফুটে সন্তান আছে তাদের।তাদের পরষ্পরের পরষ্পরের প্রতি এত এততত অভিযোগ। জামাই তো মাশাল্লাহ সমস্যাগুলো ছোট একটা স্লিপ প্যাডে লিখে নিয়ে এসেছে দেখতে পাচ্ছি।বৌ আমার পাশি বসে আছে অন্য দিকে মুখ করে।আপুর অনুরোধ আমি তার সাথে এসেছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি সমাজের so called সালিশতে কখনোই বিশ্বাস করি না।সালিশি করে জমি সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব।কিন্তু ঘর সংসার দুজন মানুষের মনের দূরত্ব সমাধান কিছুতেই সম্ভব না।

সব শুনে যা বুঝলাম মূল অভিযোগ হচ্ছে--- জামাই নাকি ঘর সংসারে খরচ দেয় না,বৌ পিটায় , বাচ্চাদের সাথেও ঠিকমতো কথা বলে না।আর বৌর নাকি ঘর সংসারে মন নাই।খালি বাবার বাড়ি পরে থাকে।
----- দেখা যাক সমাজের গণ্য মান্য মুরব্বীরা কি সমাধান করেন !

আমি বরং এই ফাঁকে একটা স্ট্যাটাস লিখে ফেইসবুকে আপলোডাই -----

আমাদের দেশে মানুষের বিবাহিত জীবনের বয়স যত বাড়তে থাকে ততই যেন সে বুঝতে পারে ---জীবনে বিবাহ করা অত্যন্ত জটিল একটা সিদ্ধান্ত ছিল।অবশ্য আমাদের দেশে কজনই বা নিজে বিবাহ করার সুযোগ পান ?! বেশির ভাগই বিবাহ বসে/বেশিরভাগকেই বিবাহ দেয়া হয়।

আমাদের দেশে অনেক দম্পতিই আছে যারা সারাজীবন একসাথে এক ছাদের নিচে একই বিছানায় পাশাপাশি বসবাস করেও যোজন যোজন দূরত্ব বজায় রেখে এক জীবন পাড়ি দিয়ে ফেলে। দীর্ঘসময় এক সাথে থেকেও তাদের আত্মার মিলন হয় না।

ছেলেদের জন্য বিয়ে যত পুরোনো হতে থাকে শারীরিক আকর্ষণ তত কমে আসতে থাকে। সেখানে ভর করে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং দৈনন্দিন জীবনের অভ্যস্ততা।মেয়েদের ক্ষেত্রে সম্ভবতঃ কাজ করে প্রবল মায়া আর অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অবশ্যই অভ্যাস।

প্রেম বা বিয়ে কোন সম্পর্কই আসলে জোর করে টিকিয়ে রাখা যায় না, রাখার কোন কারণও নেই। ঐ সম্পর্কে ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান থাকে না।পরিবার সমাজের ভয় দেখিয়ে সালিশি করে জোরা তালি দিয়ে টেকানো সংসার কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। এক সময় সমাজ-সংসারের সবাই এসব ঝড়-ঝাপ্টা ভুলে গেলেও স্বামী স্ত্রী এই দুজন মানুষের মন কখনও ভোলে না এ বিষয়টি।সমাজকে আই ওয়াশ দেবার জন্য হয়তো তারা একসাথে সংসারের অভিনয় ঠিকই করে যায় ।কিন্তু মনের সাথে মনের মিল আর কখনোই হয় না।

বিবাহিত জীবনে শারীরিক, মানসিক, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সব ধরনের সম্পর্কই জোরালোভাবে গড়ে ওঠা জরুরি। যাতে সময়ের সাথে সাথে যখন মানুষের শারীরিক আকর্ষণ কিছুটা কমে আসে তখন যেন মানসিক এবং নির্ভশীলতা সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ায়। শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে কোন সম্পর্কই বেশী দূর আগাতে পারে না----হোক তা বিয়ে কিংবা প্রেম।

আরও একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হলো--- কোন বিয়েই সন্তানের দোহাই দিয়ে টিকিয়ে রাখা উচিত নয়। কেননা সে বিয়েতে দম্পতিদের পাবার তেমন কিছুই থাকে না।সন্তানদেরকেও অসুস্থ পরিবেশ ছাড়া কিছুই দিতে পারে না তখন বাবা মা।অজস্র উদাহরণ আছে আশেপাশে।

বিয়ের গভীরতা শারীরিক নয় বরং মানসিক বন্ধনে।মনের বন্ধন তৈরি না হলে সারাজীবন এক বিছানায় বসবাস করার পরেও মন থাকে অন্য কোথাও, অন্য কারো কাছে !

আবার এমনও কিন্তু দেখা যায় বহু বিবাহিত ছেলে/মেয়ে অনেক জায়গাতেই উঁকিঝুঁকি দিলেও দিনশেষে ঘরে ঠিকই ফিরে আসে।তারা বাইরে যাই করুক না কেন বিয়ের ব্যাপারে পুরোই টনটনা। কেননা তাদের পক্ষে দীর্ঘদিন একসাথে বসবাস করার ফলে তৈরি হওয়া অভ্যাস , কমফোর্টজোন ছেড়ে বের হয়ে আসা খুব একটা সহজ হয় না ।

সবশেষে এক লাইনে উপসংহার টানতে চাই----- আমার কাছে মনে হয় 'বিবাহ' পৃথিবীর সব থেকে "বুঝে উঠতে না পারা" রহস্যময় এক সামাজিক সম্পর্ক।

__________________________

লেখক নাসিমুন নাহার পেশায় চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়