Ameen Qudir

Published:
2017-04-11 13:20:55 BdST

এরপর বেরিয়ে এলো ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিল


ডা. রাজীব দে সরকার
____________________________


গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালের একটা ঘটনা এখনো মনে পড়লে হাসি পায়।

আমার প্রথম পোস্টিং ছিলো ওখানেই। হয়তো একারনেই স্মৃতিগুলো কখনো অস্পষ্ট হবে না।

চেম্বারে করতাম না তখন। অনেক রোগী আমার বাসায় আসতো। ছুটির দিনে বেশী আসতো।

ঐদিনটাও ছুটির দিন ছিলো।

আউটডোরের ব্যস্ততাটা নেই। হসপিটাল কোয়াটারেই ছিলাম।

সকালের নাস্তা সেরে রুমে আসতেই দুজন লোক এলো, সাথে ৩ বছরের একটি মেয়ে। বুঝলাম মেয়েটাই রোগী, তারা আমাকে দেখাতে এনেছে।

জানতে চাইলাম কি সমস্যা। একজন ২ দিন আগের একটা আউটডোর প্রেসক্রিপশন বের করে দেখালেন। সেখানে আমারই একজন সহকর্মী চিকিৎসা দিয়েছেন এবং অ্যাপ্রোপ্রিয়েট ওষুধই লিখেছেন। অ্যাপ্রোপ্রিয়েট বলতে বোঝাচ্ছি, আমি লিখলে ওটাই লিখতাম।

তাদের কাছে জানতে চাইলাম, "রোগ কি সারে নি?"

তারা বললো সেরেছে কিন্তু তারা চাচ্ছে আরেকজন ডাক্তার ভালো করে দেখে চিকিৎসা দিক
আমি বললাম, "তার তো কোন প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা একদম ঠিক আছে। এই ঔষধ গুলোই চলবে, কোর্স শেষ করতে হবে।"

কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা, তারা আমাকে দিয়ে আবার রোগী দেখাবে।

আমি নিজেও ভালো করে বুঝতে পারছি, এ রোগী দেখার কিছু নেই। অযথা শুধু আমাকে দিয়ে আরেকটা প্রেসক্রিপশন লিখিয়ে নেবে।

তখন অনেকেই হয়তো মনে করতো আমরা হাসপাতালে ভালো করে রোগী দেখি না। যা খুশি তাই লিখে দেই।

আমার এখনও খুব জানতে ইচ্ছে করে, হাসপাতালে আমাদেরকে যারা ভরসা কম পেতেন, প্রাইভেট চেম্বারে তারা আমাদের প্রতি এতো ভরসা কোথা থেকে নিয়ে আসেন?

কিন্তু এখানে একটা 'কিন্তু' আছে!

যাই হোক, অগত্যা আমি নতুন করে রোগী দেখে দিলাম।

এবার এলো ভিজিট দেবার পালা।

মাত্র ৩ টাকা দিয়ে রোগী দেখাতে পারলেও এই সস্তার চিকিৎসাটা অনেকের কাছে সেই 'অ্যাপীল' করে না।

তাই তারা বাড়তি টাকা খরচ করে হলেও রোগী দেখাবে, এটা এক ধরনের বিলাসিতাও!

এবার আসি 'কিন্তু' সংক্রান্ত অংশে!

ভিজিট বের করা হলো ৫০ টাকা।
আমি বললাম, টাকা লাগবে না, আমি তো নতুন তেমন কিছু লিখিনি। বাচ্চাটাকে ফলমূল কিনে দিয়েন।

তারা উত্তর দিলো, বাচ্চাকে ভালো মন্দ কিনে খাওয়ানোর টাকা তাদের আছে।

এরপর বেরিয়ে এলো ১০০ টাকা

এবার বিরক্তি চলে এলো। বললাম, আমি ভিজিট নেবো না, ওষুধ গুলো নিয়ম করে খাওয়ালেই আমি খুশি হবো।

এই কথা শুনে লোক দুজনের এক জন আরেকজনের দিকে তাকালো।

এরপর বেরিয়ে এলো ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিল। আমি হলপ করে বলতে পারি সেখানে কম করে হলেও ৫০ টা ৫০০ টাকার নোট ছিলো।

এবার আমি পড়লাম বিপদে, কারন ৫০০ টাকার ভাংতি আমার মানিব্যাগ হাতড়ে আমি পাবো কিনা আমি সন্দেহে পড়লাম।

যাই হোক, তারা পুরো ভিজিট দেবার সামর্থ্য রাখেন।
কিন্তু কথা হলো - কেন তারা পুরো ভিজিট দেবেন?!
এই মানসিকতার কাছে কোন যুক্তিই দাঁড়াতে পারে না।

ডাক্তারদের পয়সা না দিয়ে পারাটা বা কম দিয়ে পারাটা সম্ভবতঃ কিছু মানুষের কাছে বেশ উপভোগ্য বিষয়।

পুনশ্চ ১ - অনেকেই জানেন আমি নিজের এলাকায় কীভাবে রোগী দেখতাম। তাই ভিজিট নিয়ে আমার স্ট্যাটাসকে অন্য খাতে ভাবার প্রয়োজন দেখি না

পুনশ্চ ২ - রোগী দেখিয়ে পুরো ভিজিট দেবার মানসিকতা আমাদের অনেকেরই নেই। 'একটু কম নেওয়া কি যায় না?' এই প্রশ্নের কাছে সব সময়ই আমরাই হেরে যাই।

অন্য কোন পেশার লোককে কিন্তু এই প্রশ্ন হারাতে পারে না।

দুঃখটুকু এখানেই...

সবার প্রশ্ন একটাই, "ডাক্তারদের সরকার বেতন দিচ্ছে, তাহলে রোগী দেখে ডাক্তারদের টাকা নিতে হবে কেন?"

এটুকুই লিখলাম... শুভরাত্রি।

__________________________

ডা. রাজীব দে সরকার
প্রাক্তন চিকিৎসক, গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজবাড়ী

বিশেষ কর্মকর্তা, কো-অর্ডিনেশন সেল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।

প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, রাজবাড়ী।

আহবায়ক, সুহৃদ সমাবেশ, গোয়ালন্দ উপজেলা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়