Ameen Qudir

Published:
2017-02-22 16:08:56 BdST

ওষুধের দোকানদারও যখন ডাক্তার



 

ডা. রক্তিম সাহা
_____________________

এই খবরগুলো ডাক্তারদের নজরে আসে না। না আসলে কিছু অাসে যায় না। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি , তাতে নজরে না নিয়ে উপায় নেই। সরকার কোয়াকদের রীতিমত ডাক্তার টাইটেল দিয়ে দিচ্ছে।

এর ফলে কী অবস্থা হচ্ছে দেখুন।

ওষুধ দোকানদার, কবিরাজ , ওঝা তারাও ডাক্তার সেজে বসে যাচ্ছে।

সরকার এমবিবিএস ডাক্তারদের সাইজ করতে কঠিন কঠিন সব আইন করতে বদ্ধপরিকর। খুব ভাল কথা।

কিন্তু এই দোকানদার সেকান্দার 'ডাক্তার' সাহেবদের কি হবে। কোয়াকদের ডাক্তার বানিয়ে দিচ্ছেন। তারা তো চেম্বার নিয়ে বসে যাচ্ছে।
তার ফলে কি কঠিন অবস্থা , তার নমুনা দেখুন। নীচের রিপোর্টটি কালের কন্ঠ পত্রিকার। আপনাদের সময় হলে পড়ে দেখবেন।

______________________


গোয়ালন্দে ওষুধের দোকানিও চিকিৎসক!

গণেশ পাল, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) _----------

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ডাক্তার নামধারী এক ওষুধ দোকানির ‘ভুল চিকিৎসায়’ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবাসী নাজমা বেগম। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। চিকিৎসক বলেছেন, নাজমা ‘আননোন ড্রাগ পয়জনিংয়ে’ (বিষ) আক্রান্ত হয়েছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য ওষুধের দোকান। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অসাধু দোকানিরা মুনাফার জন্য নিজেদের ‘ডাক্তার’ পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে অবাধে সংবেদনশীল ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার করে আসছেন। এতে রোগীদের বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

নাজমার পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়ালন্দ পৌর শহরের প্রধান সড়কে অবস্থিত ‘মোন্নাফ ডাক্তার’ নামের এক ওষুধের দোকান। পল্লী চিকিৎসক মোন্নাফ ডাক্তারের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আসাদুজ্জামান পিন্টু দীর্ঘদিন ধরে ওই দোকানে বিভিন্ন রোগীর চিকিৎসাসহ ওষুধ বিক্রি করছেন। পৌর এলাকার জুড়ান মোল্লাপাড়ার মো. নাজিম উদ্দিন প্রামাণিকের সৌদিপ্রবাসী মেয়ে নাজমা বেগম (৪৫) গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় হঠাৎ অস্থিরতা অনুভব করেন। দ্রুত তিনি ব্লাড প্রেসার মাপাতে দ্রুত ‘মোন্নাফ ডাক্তার’-এর দোকানে যান। সেখানে প্রেসার মাপার পর দোকানি পিন্টু চিকিৎসার কথা বলে নাজমাকে দুটি ট্যাবলেটসহ পাউডারজাতীয় ওষুধ গুলিয়ে খাওয়ান। পাশাপাশি নাজমার দেহে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে নাজমা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে দ্রুত গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে নাজমা অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলে গত মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফেরেন। পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার রাতে তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শাহেদা পারভীন বলেন, ‘আননোন ড্রাগ পয়জনিং হওয়ার কারণে নাজমা বেগম মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে চিকিৎসার নামে তাঁকে কোন ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল তা আমরা জানতে পারিনি। ’

নাজমা বেগমের বাবা নাজিম উদ্দিন প্রামাণিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডাক্তার নামধারী আসাদুজ্জামান পিন্টুর ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার মেয়ের এ অবস্থা হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় আমার মেয়েটি অল্পতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের খরচ বাবদ পিন্টু আমাকে তিন হাজার টাকা দিয়েছে। ’ অভিযুক্ত পিন্টু বলেন, ‘রোগী নাজমাকে আমি গ্যাসট্রিকের ট্যাবলেট ও ইনজেকশন পুশ করে সঠিক চিকিৎসাই দিয়েছি। ’ তিন হাজার টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নয়, আমাকে ফাঁদে ফেলানোর ভয় দেখিয়ে ওরা আমার কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছে। ’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাজমা বেগমের মতো এমন অপচিকিৎসার ঘটনা গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় অহরহ ঘটছে। শুধু অ্যান্টিবায়োটিক নয়, স্টেরয়েড, উচ্চমানের পেইনকিলারসহ অনেক ওষুধ আছে, যা প্রেসক্রাইব করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও চিন্তাভাবনা করেন। অথচ ডাক্তার নামধারী অনেক ওষুধের দোকানি বিভিন্ন রোগীর শরীরে সংবেদনশীল ওই সব ওষুধ অহরহ ব্যবহার করছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মুনাফার লোভে একশ্রেণির অসাধু দোকানি ও নামধারী ডাক্তার বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে সংবেদনশীল ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার করে আসছেন। রোগীকে পুঁজি করে তাঁরা গড়ে তুলেছেন অপচিকিৎসার বিশাল আয়োজন। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোয়ালন্দ শহরসহ উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে অনুমোদনহীন ছোট-বড় দুই শতাধিক ওষুধের দোকান আছে। এই দোকানিরা ‘ডাক্তার’ পরিচয় দেওয়ায় সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য তাঁদের কাছেই যায়। রোগীর লক্ষণ যাই হোক, দামি অ্যান্টিবায়োটিক গছিয়ে দেন ওই দোকানিরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষমতাহীনতার সুযোগে চিকিৎসার নামে অনেকেই রোগীদের অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়াসহ অপচিকিৎসা করছেন। এতে রোগীদের বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। ’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ‘সব ওষুধ দোকানির নামে ড্রাগ লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকার অধিকাংশ ওষুধ দোকানির তা নেই। এদিকে রাজবাড়ী জেলায় কোনো ড্রাগ সুপারও নেই। তাই বিষয়টি কারো নজরে আসছে না। ’ চিকিৎসাসেবা পেতে রোগীদের সরাসরি হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেন তিনি।
_______________________

লেখক ডা. রক্তিম সাহা । লোক সেবী ডাক্তার । ফরিদপুর।

আপনার মতামত দিন:


কোথায় ডাক্তার এর জনপ্রিয়