Ameen Qudir

Published:
2017-02-25 17:27:38 BdST

দেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়লে লাভ কার


ডা.শাব্বির হোসেন খান

________________________________

 

এ দেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়লে লাভ কার?
সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে না ক্ষতিগ্রস্ত?

প্রথম আলো সহ আরো কিছু মিডিয়ার মিথ্যা ও মনগড়া সংবাদ পরিবেশন, বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কিছু অপসাংবাদিকের এতদসংক্রান্ত সংবাদকে তাদের ভাষায় "পাব্লিক খায়" টাইপে মডিফাই করে পরিবেশন, চিকিৎসাশাস্ত্রের ন্যূনতম জ্ঞানহীন আইন কমিশন কতৃক "চিকিৎসা সেবা আইন" প্রস্তাবনা, প্রশাসন ক্যাডার কতৃক স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনাকে করায়ত্ত্ব করার পায়তারা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কিছু কথা, কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা এদেশের চিকিৎসক, চিকিৎসা পেশা, চিকিৎসা ব্যাবস্থা, এক কথায় দেশের পুরো স্বাস্থ্যব্যাবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

বিশেষতঃ মিডিয়ার নেতিবাচক ও মিথ্যা খবরের মাধ্যমে চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরোক্ষে উসকে দেয়া হচ্ছে সাধারন মানুষকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী / বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চিকিৎসক নির্যাতন এবং অন্যান্য ভাংচুরের ঘটনাগুলো এই উসকানীর-ই ফলশ্রুতি। এতে চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা একেবারেই ভেংগে পড়েছে।

 

এবছরেরই ঘটনা। বগুড়ায় মোবাইল কোর্ট একটি ক্লিনিককে জেল জরিমানা করেছিল, যেটির মালিকের এক নিকটাত্মীয় হচ্ছে বগুড়া প্রেস ক্লাবের এক নেতা। আর, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী মেজিষ্ট্রেট ছিলেন একজন ডাক্তার, যিনি প্রশাসন ক্যাডারে চাকরী করেন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের পার্মিশন নিয়ে পাশাপাশি প্রাইভেট প্র‍্যাকটিসও করেন বগুড়ায়।


( ডাক্তার প্রতিদিন এ নিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । লিঙ্ক শেষে দেয়া হল )

প্রেস ক্লাবের ওই নেতার তদবির এবং ঘুষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারনে মেজিষ্ট্রেট ডাঃ তায়েব উর রহমান আশিক এর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে সেখানকার কিছু সাংবাদিক। তারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে অবস্থান কর্মসূচী, মানববন্ধন, মিছিল ও আন্দোলন করে। ২০১৭ র ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহের ঘটনা এটা। একই সাথে ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও নেতিবাচক এবং মিথ্যা খবর প্রচার করতে থাকে তারা ( কারনটা কিছু পরেই জানতে পারবেন)।


এরই মধ্যে তারা সুযোগ নেয় শজিমেক হাসপাাতালের ঘটনার। মূল কাহিনী আড়াল করে তারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ঘটনাটিকে। পরবর্তী ঘটনাক্রম দেশবাসী জানে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোন তদন্ত না করেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ইন্টার্নীশিপ বাতিলের আদেশ দিয়েছেন। হায় রে, নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রতি যদি এমন ত্বরিত রিএ্যাকশন দেখাতেন আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তাহলে ট্রল আর অভিশাপের বদলে তিনিও অধ্যাপক রুহুল হকের মত শ্রদ্ধার আসন পেতেন আমাদের হৃদয়ে।

মূল কথায় আসি।

এই যে মিডিয়ার চক্রান্ত এবং অবিবেচনা প্রসূত ঘটনা, কার্যক্রম এবং উসকানী প্রদান, এর ফলশ্রুতিতে যেটা ঘটবে, তাতে কি দেশের সাধারণ মানুষ লাভবান হবে আদৌ? ইতোমধ্যেই দেশের বেশ কিছু সিনিয়র চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এদেশ ছেড়ে যাবার। সোশ্যাল মিডিয়া ফেবু জুড়েই তাদের এই ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা। জুনিয়রদের মধ্যেও কর্মস্থলের নিরাপত্তার অভাবজনিত হতাশা কাজ করছে এবং তাদেরও অনেকেই আর এদেশে থাকার এবং ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিনে দিনে। ক্যারিয়ারের জন্য বিকল্প দেশ খুজছে তারা, যেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের পাশাপাশি সম্মানের সাথে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবে। ধাবিতও হচ্ছে সেদিকেই।

একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে জাগে। দেশের চিকিৎসক, চিকিৎসা পেশা, এক কথায় দেশের পুরো চিকিৎসা ব্যাবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, এমন ভূমিকায় এরা সবাই একসাথে কেন অবতীর্ণ হলো? কি স্বার্থে? কার বা কাদের স্বার্থে?

 

একটু বিশ্লেষন করি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী কেন ঘটনা শুনেই কয়েকজন ইন্টার্নী চিকিৎসকের ইন্টার্নীশিপ বাতিলের নির্দেশ দিলেন শজিমেকহা এবং বিএমডিসি কে? ঘটনা ঘটেছে রোববার, আর সোমবার সকালেই নির্দেশ দিয়ে দিলেন মন্ত্রী। বাহ বাহ! বিএমডিসি তো একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। প্রাপ্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধ প্রমানিত হলেই শুধুমাত্র তারা আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারবে, এর আগে নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেটা জানেন না, আমার তা মনে হয় না। এখানে তো আগেই শাস্তির ঘোষনা দিয়ে দিলেন তিনি। তার মানে, একটা সাজানো অভিযোগ তৈরী করে কার্যক্রম শুরু করতে হবে বিএমডিসি'র।


শজিমেক হাসপাতালের পরিচালককেও তাই করতে হবে, এটাই বিশ্লেষন। কিন্তু এটা কি করে করবে বিএমডিসি'র মত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা, তা আমার মাথায় আসে না। শজিমেক হাসপাতালের পরিচালকের অবশ্য চাকরীর/ গদীর চিন্তায় মন্ত্রীর নির্দেশ পালন করার একটা বিষয় থাকতে পারে, হোক সে নির্দেশ নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক! কিন্তু পরিচালক যদি ত্যাড়া কিসিমের ( প্লাস/ মাইনাস) আর্মী পার্সোন্যাল হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো তিনি কোন অনিয়ম না ও করতে পারেন। হোক না মন্ত্রীর নির্দেশনা!

 

আসলে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা এখান থেকেই আসে। রোগীর বাড়ী সিরাজগঞ্জ, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাড়ীও সিরাজগঞ্জ। সবচে বড় কথা, রোগীর মেয়ে ( শজিমেকহা 'র মহিলা চিকিৎসককে টীজ করে উত্তম মধ্যম খেয়ে কানে ধরে "জীবনে আর ওই কাজ করবে না" বলে প্রতিজ্ঞা করা সেই বখাটের বোন) ঘটনার দিন নিজেই হুমকী দিয়েছে মন্ত্রীর নাম উচ্চারন করে। এবং সেটা সর্বসমক্ষে।

 

 

মিথ্যা অভিযোগ এনে মেজিষ্ট্রেট ডাঃ আশিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার সহ আন্দোলন শুরু করে

_____________________

 

আসি বগুড়ার কিছু সাংবাদিকের অপসাাংবাদিকতা প্রসঙ্গে। মেজিষ্ট্রেট ডা: আশিক বগুড়ার কয়েকটি মানহীন ক্লিনিক / ডায়াগনোষ্টিকের সাথে বগুড়ার এক সাংবাদিক নেতার নিকটাত্মীয়ের ক্লিনিককেও ( আসলে এটার নেপথ্য মালিক বগুড়ার কিছু সাংবাদিক) জরিমানা ও দন্ডাদেশ দেন। ঘুষের প্রস্তাব এবং হুমকীতেও যখন সেই আদেশ বাতিল হলো না, তখন সেই নেতার সহযোগী সাংবাদিকরা মিথ্যা অভিযোগ এনে মেজিষ্ট্রেট ডাঃ আশিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার সহ আন্দোলন শুরু করে ( ছবি দেখুন)।

 


আর, আগে থেকেই বগুড়ার ডাক্তাদের অপছন্দ করতো তারা; সুযোগ পেলেই নেতীবাচক এবং বিকৃত সংবাদ ছাপাতো বগুড়ার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। কারন আর কিছুই না, তাদের সেই নিম্নমানের ক্লিনিকে রোগী পাঠান না বগুড়ার ডাক্তাররা। শজিমেক হাসপাতালের ওই দিনের প্রকৃত ঘটনা তাই বগুড়ার সব সাংবাদিক বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে, মহিলা চিকিৎসককে উত্যক্ত করার এবং আরেকজন ইন্টার্নী চিকিৎসকের কলার ধরার ( মন্ত্রীর এলাকায় বাড়ী হওয়ার দুঃসাহসে) ঘটনা সম্পূর্ণ গোপন করে।

 

 

সবচে' বড় কথা, ওই রোগীর বিছানার মাথার উপরেই ছিল ফ্যানের সুইচ, যা খুজে দেখার কোন প্রয়োজন নেই, এম্নিতেই চোখে পড়ে ( শজিমেকহা' র ওই রোগীর বিছানার ছবিটি দেখুন, তাহলেই বুঝবেন, আসলেই ফ্যানের সুইচ খুজছিল ওই বখাটে, না কি ঘটনা আর কিছু ) !

আসি এবার আমার দেশ ( বর্তমানে বন্ধ) , প্রথম আলো,ডেইলি ষ্টার সহ কিছু হলুদ মিডিয়া এবং সেগুলোর সম্পাদক ও সাংবাদিক নামধারী কুলাঙ্গার প্রসঙ্গে। এরা অনেকেই কিন্তু পবিত্র ক্বাবা শরীফের গীলাফ পরিবর্তনের ছবিকে বিকৃতভাবে ছাপিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে এবং অন্যান্য আরো মিথ্যা সংবাদের কারনে আদালত কতৃক প্রমানিত মিথ্যাচারী।

 

প্রথম আলো আর ডেইলি ষ্টার তো এই বিষয়ে সবার উপরে। মিথ্যা এবং বিকৃত সংবাদ পরিবেশনে তাদের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও সেটা বলেছেন ( লিংক দেখুন- https://www.amadershomoy.biz/unicode/2016/03/01/76337.htm… ; প্রথম আলোর আরো মিথ্যাচার সম্পর্কে জানতে চাইলে গুগলে "প্রথম আলোর মিথ্যাচার" লিখে সার্চ দিন)। আর এসব প্রমানিত মিথ্যাচারীই চিকিৎসক এবং চিকিৎসা পেশা বিরোধী সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে লাগাতার এবং পরিকল্পিতভাবে। প্রথম আলো এবং ডেইলী ষ্টার, দু'টো পত্রিকাই লতিফুর রহমানের ট্রান্সকম গ্রুপের । ২৫/৩০ টি কোম্পানী আছে এই গ্রুপের। মিডিয়া ব্যাবসা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোম্পানীগুলো হচ্ছে- ট্রান্সকম ফুডস লিঃ( Pizza Hut ও KFC), ট্রান্সকম বেভারেজ লিঃ (কোমল পানীয়- Pepsi ও 7-up আর মিনারেল ওয়াটার Aquafina) , ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী SK+F ইত্যাদি।


জানা গেছে, নিম্ন-মানসম্পন্ন হওয়ায় এবং কাংখিত ফলাফল না পাওয়ার কারনে দেশের বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকেরা নাকি ইদানীং SK+F এর বেশ কিছু ঔষধ ( বিশেষতঃ Losectil নামক এক সময়ের "বহুল প্রচলিত গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ" এবং কয়েকটি এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা বন্ধ করে সেগুলোকে আগের মত মানসম্মত করার পরামর্শ দিয়েছেন কোম্পানীর লোকজনকে। SK+F এর ফিল্ড প্রমোশন ষ্টাফরা নিজেরাই এক সময় বলতো যে, Losectil হচ্ছে তাদের কোম্পানীর "ব্রেড এন্ড বাটার"। পুরো কোম্পানীর যাবতীয় খরচ নাকি উঠে আসতো এই Losectil এর বিক্রি থেকে। ঔষধটি তার মান হারানোর কারনে প্রেসক্রিপশন একেবারেই কমে যাওয়ায় তাদের এক সময়ের এই "ব্রেড এন্ড বাটার" এখন আর তাদের কোম্পানীর "ব্রেড বাটার" সরবরাহ করতে পারছে না। এ বিষয়টাও ট্রান্সকম গ্রুপের পত্রিকার চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশা বিরোধী ভূমিকার পিছনে কারন হিসাবে বিবেচনা না করে পারছি না আমরা।

তাছাড়া ট্রান্সকম গ্রুপ হচ্ছে বেনিয়া প্রতিষ্ঠান। হসপিটাল সেক্টরে তাদের ভবিষ্যত কোন পরিকল্পনা আছে কি না, সে স ন্দেহ করছেন অনেকে; থাকলে সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। স্বার্থ ছাড়া প্রথম আলো এবং ডেইলী ষ্টার কোন নিউজ করে না। জরুর ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!

ইতোমধ্যেই বিদেশের চিকিৎসকেরা হাটি হাটি পা পা করে বানিজ্যিক ভিত্তিতে এদেশে আশা শুরু করে দিয়েছেন। স্বাগতঃ তাদেরকে। এখন যদি দেশের চিকিৎসকরা আস্তে আস্তে বিদেশের দিকে ঝুকে পড়েন, তাহলে ৫/১০ বছর পর অবস্থা কি দাঁড়াবে? সরকারী হাসপাাতালগুলো চালানোর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক কি খুজে পাওয়া যাবে? আমার জানামতে গত ১ মাসে জেলা পর্যায়ে উচ্চ প্রশাসনিক পদে চাকুরীরত ১ জন চিকিৎসক সহ মোট ১৩ জন চিকিৎসক সপরিবারে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে; বেড়াতে নয়, স্থায়ীভাবে থাকার উদ্দেশ্যে। এই মৌলভীবাজারেরই আরো ২ জন চিকিৎসক ( স্বামী- স্ত্রী) আগামী ৪ মার্চ চলে যাবে কানাডায়, সপরিবারে।

 

আর এই মাইগ্রেশন বা ব্রেইন-ড্রেইন ঘটছে শুধুমাত্র কর্মস্থলের নিরাপত্ত্বার অভাবে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই নিরাপত্ত্বা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে, যাতে দেশের চিকিৎসকেরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। দেশের চিকিৎসকদেরকে সংখ্যালঘু জ্ঞান করে এই কাজটি করে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আর বুঝে হোক না বুঝে হোক তাদের মদত দিচ্ছে অন্য আরো অনেকে। রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেও যদি এতে সামিল হয়ে যায়, তাহলে কর্মস্থলের নিরাপত্ত্বা যে আগামীতে আরো খারাপ হবে , এটা বুঝতে চিকিৎসকদের বেশী কষ্ট হবার কথা না। একজন মন্ত্রী যখন জন-প্রতিনিধিদেরকে বলেন একজন গেজেটেড অফিসারকে শাসন করার জন্য, তখন কি বুঝতে হবে আমাদেরকে ? তিনি কি সফল হন নি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে?আসলেই চিকিৎসকদের কাজের পরিবেশের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হ য়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র। নয়তো কেন বার বার এধরনের ঘটনা ঘটবে? কেন চোর ধরার মত ক্যামেরা দিয়ে ডাক্তার ধরতে হবে? মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদার মিঠুকে তো ধরতে পারছেন না আপনি, মাননীয় মন্ত্রী! কয়েকটা টিভি চ্যানেলেই মিঠুর সাথে একজন এ পি এস এর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন দেখেছি। তাকে ধরতে তো ক্যামেরা দূরে থাক, কোন পদক্ষেপই সরকার থেকে নেয়া হচ্ছে না। যদিও টিভি চ্যানেলগুলো পরোক্ষভাবে আপনাকেও জড়াতে চেয়েছে মিঠুর দূর্নীতির সাথে। নানান কথা বলাবলি করে দূর্জনে, কানে আসে আমাদের।

ধান ভানতে শীবের গীত চলে আসে; কি করবো? অবস্থা এই পর্যায়ে না এলে আমার তো রোগী দেখার কথা ছিল, এগুলো লেখার কথা ছিল না।

জনগনকে যারা আজ চিকিৎসক এবং চিকিৎসা পেশার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করিয়ে দিয়েছে, তাদের অবশ্য ই একটা পরিকল্পনা আছে, একটা স্বার্থ আছে, একটা উদ্দেশ্য আছে। আমরা সন্দেহ করতে বাধ্য হচ্ছি, এরা চায় এদেশের রোগীরা যাতে দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা হারিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেয়; এরা চায় দেশের সরকারী এবং বেসরকারী চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভেংগে পড়ুক। দেশের চিকিৎসকেরা আস্তে আস্তে দেশ ছেড়ে চলে যাক অথবা অন্য পেশায় মুভ করুক।


চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে প্রশাসন ক্যাডার। তারাও চায় স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা ভেংগে পড়ুক, যাতে তারা সহজে তাদের লক্ষ্য হাসিল করতে পারে। আর এই সুযোগে বাইরের কর্পোরেট হাসপাতালগুলো এদেশে এসে বাণিজ্য শুরু করুক ( এরি মধ্যে বেশ কয়েকটি ওইরকম হাসপাতাল সেই পায়তাড়া শুরু করে দিয়েছে)। বিদেশের চিকিৎসকরা যে হাটি হাটি পা পা করে আশা শুরু করেছে, তা আরো বাড়ুক, এটাই এদের লক্ষ্য। এসব ডাক্তার কিন্তু দেশের দরিদ্র সাধারন জনগোষ্ঠির নাগালের বাইরে, এবং এরা প্রত্যেকেই কোন না কোন কর্পোরেট হাসপাতালের প্রতিনিধি।

 

৯৮/৯৯ সালের কথা। মৌলভীবাজার বিএমএ'র ব্যাবস্থাপনায় এবং মৌলভীবাজার পৌরসভার আয়োজনে সে সময়ের পৌর চেয়ারম্যান, প্রয়াত সমাজকল্যান মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলি ২/৩ বছর আমন্ত্রন জানিয়ে এনেছিলেন কোলকাতার সে সময়ের নামকরা কার্ডিয়োলজিষ্ট, তার ব্যাক্তিগত বন্ধু ডাঃ শুভ দত্ত 'কে।


এখানে রোগী সে দেখতো বিনা পয়সাতেই। তখন দেশে এনজিওগ্রাম এত সহজলভ্য ছিল না, ঢাকার কয়েক যায়গায় হতো শুধু। মৌলভীবাজার বিএমএ র চিকিৎসকরা রোগী দেখায় শুভ দত্তকে সহযোগিতা করতাম সেসব ফ্রী-মেডিকেল ক্যাম্পে। কিন্তু যখন আমরা দেখলাম যে, সে সুযোগ পেলেই রোগীকে এনজিওগ্রাম এডভাইস করে আমাদেরকে দিয়ে ইন্ডিয়ায় তার কাছে এনজিওগ্রাম করানোর জন্য রোগীকে মোটিভেট করাতে চাচ্ছে, তারপর থেকে আমরা তাকে আর সহযোগিতা করি নি। এবং এরপর আর কোন ক্যাম্পে তাকে আনা হয় নি। এখন যারা আসছে, তারাও সেই প্রজেক্ট নিয়েই আসছে বলে আমার বিশ্বাস।

 

মোদ্দা কথা, দেশের চিকিৎসক, চিকিৎসা পেশা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, এককথায় গোটা স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাকে হুমকীর মুখে ফেলে দিয়ে একে ভেংগে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যাতে এই সেক্টরটার পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় গুটিকয় মানুষ এবং কিছু বিদেশী কর্পোরেট হাসপাতালের এজেন্টের হাতে।

আপসোস! আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে এদেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে প্রমোট করেন, আর আমাদের কিছু নেতা এবং কিছু আমলা গভীর ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত এদেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে ভেংগে দেয়ার জন্য। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজের চিকিৎসা নেন দেশের বাইরে গিয়ে...!

বিএমএ' র ৩৪০০০ সদস্য সহ দেশের প্রায় ৪২০০০ চিকিৎসক এবং আরো প্রায় ৪৫০০০ মেডিকেল ষ্টুডেন্ট এটা এত সহজে মেনে নেবে কি?

______________________________

ডা.শাব্বির হোসেন খান
প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা । সুলেখক। লোকসেবী ডাক্তার। মৌলভীবাজার।


___________________________

লিঙ্ক :https://daktarprotidin.com/manusher-jonno/742/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়