Ameen Qudir

Published:
2017-02-15 17:43:45 BdST

এই লেখাটি সকল চিকিৎসকের অবশ্য পাঠ্য : পড়তে ভুলবেন না


 

 

ডাক্তার প্রতিদিন
_______________________________

 

প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য সেবা আইন ২০১৬ঃ একটি আইনগত সমীক্ষা । লিখেছেন চিকিৎসক পরিবারের সন্তান কাজী ওয়াসিমুল হক। লেখাটি তিনি তার পিতা প্রয়াত চিকিৎসক পিতা ডাঃ কাজী মোঃ শাহজাহানের (DMC K-26) স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন। ।লেখাটি সুলিখিত , সুব্যখ্যাত। সুপাঠ্য। দেশের সকল ডাক্তারের জন্য অবশ্য পাঠ্য। যখনই সময় হয়, পুরো লেখাটি পাঠ করা দরকার।

ডা. তারিক রেজা আলী, সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিশিষ্ট চিকিৎসকগন লেখাটি সকল ডাক্তারপাঠ্য বলে সুপারিশ করছেন।
ডা. তারিক রেজা আলী বলেছেন, " বিএমএ নেতৃবৃন্দ সহ সর্বস্তরের চিকিৎসকবৃন্দ যদি সময় নিয়ে এই লেখাটা পড়তেন। হয়তোবা আমার অনুমান ভুল, অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যেই পড়েছেন।

আশা করি সবার সম্মিলিত প্রয়াসে ভাল কিছু বের হয়ে আসবে।"

অামরা লেখাটি সকলের পাঠের জন্য পেশ করলাম।

_____________________________


প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য সেবা আইন ২০১৬ঃ একটি আইনগত সমীক্ষা ।
Kazi Wasimul Haque

___________________
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আইনটা নিয়ে প্রতিশ্রুত সময়ের পর লেখাটা প্রকাশ করার জন্য, প্রকৃতপক্ষে এই আইনের উপর এটা আমার দ্বিতীয় লেখা, প্রথম লেখাটা কলেবরে ‘থিসীস’ আর জটিলতায় ‘কৌটিল্য’ শ্রেনীর হয়ে যাওয়ায় সেটাকে আর প্রকাশ করা হল না।
বলে রাখা ভাল এই আইনটা এখনো পাশ হয়নি কিন্তু সরকারকে এই আইনের দুর্বলতার ব্যাপারে এখনই যথাযথ ফিডব্যাক না দিয়ে রাখলে এই আইন প্রস্তাবিত ফর্মেই পাশ হয়ে যাবে, আর তাই যদি হয়, তার পরিনতি কি হবে সেটাই এই লেখার মূল উপজীব্য।

 

 


এই আইন আলোচনা করার সময় আমি মূলত চিকিৎসকদের সম্ভাব্য সমস্যাগুলির ওপর আলোকপাত করেছি, এই লেখায় সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্ভাব্য সমস্যাগুলি আলোচনা করা হয়নি বললেই চলে, কারন আমার ধারনা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব আইনজীবি আছে (বা থাকা উচিৎ), কাজেই তাদের জন্য বিশদ ব্যাখ্যা করার কোন কারন দেখিনা।

 


যতদূর বুঝতে পারলাম, এই আইনের সম্ভাব্য আইনী সমস্যাগুলি চিকিৎসক ভাই-বোনেরা এখনও টের পাননি, তাদের দোষ দেয়া যায়না, ট্রায়াল এডভোকেসী ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে আমি নিজেও টের পেতাম না। আসুন এবার ধাপে ধাপে এই আইনের বিশ্লেষণ করা যাক।

 


কাগজে কলমে এই আইন পাশ হয়েছে স্বাস্থ্য সেবায় জড়িতদের (রুগী, ডাক্তার, চিকিৎসা সহযোগী, সেবাদান কারী প্রতিষ্ঠান) অধিকার, দায়দায়িত্ব এবং স্বাস্থ্যসেবা জনিত অবহেলার প্রতিকার বিষয়ে, তবে এই আইন পুরোটা পড়লে এই আইনের উদ্দেশ্য এবং সার্থকতা নিয়ে সন্দেহ জাগাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
এক কথায় বলতে গেলে এই প্রস্তাবিত আইনটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাস্তবতারহিত, অদূরদর্শী, অস্পষ্ট , বৈষম্যমূলক এবং অপব্যাবহারের ব্যাপক সম্ভাবনাযুক্ত। না এগুলি অপবাদ নয়, নিচের বিশ্লেষনগুলি পড়লেই আমার এরুপ বক্তব্যের সত্যতা দেখতে পাবেন।

 

 

প্রথম পরিচ্ছদ

এই আইনের প্রথম পরিচ্ছদের ২ ধারায় এই আইনে ব্যাবহৃত বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং এই ধারাটি আপনাদের বিশেষ মনোযোগের দাবীদার। আমাজন নদীতে লুকানো পিরানহা মাছের মতই এই আইনে আপাত দৃষ্টিতে দেখতে ‘নীরিহ’ কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে, যা দেখতে নীরিহ, কিন্তু ধরলে খবর আছে!
এই আইনের ধারা ২(খ) তে দেয়া আছে ‘মেডিক্যাল সার্ভিস’ বলতে কি বোঝাবে তা, বলে রাখা ভাল এই আইনে যেসব উদাহরন দেয়া আছে সেগুলিই কিন্তু সব না, আইনে সরাসরি বলা হয়নি এমন অনেক কিছুই কিন্তু এই আইনের অধীনে ‘মেডিক্যাল সার্ভিস’ হিসেবে গন্য হতে পারে।

 


এই আইন অনুসারে মোটের উপর ‘মেডিক্যাল সার্ভিস’ হচ্ছে ‘স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট যেকোন সার্ভিস’, তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এই আইনের ২(ঙ) ধারাতে MBBS টু কবিরাজ (and everything in between) সবাইকে ‘চিকিৎসক’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করলেও ‘মেডিক্যাল সার্ভিস’ বলতে এই আইনে যেসব সার্ভিসের কথা বলা হয়েছে (দন্ত চিকিৎসার ব্যাপারটা বাদ দিলে) তা মোটের ওপর MBBS ঘরানার ডাক্তারদের কার্য্যক্রম, সম্ভবত চক্ষুলজ্জার খাতিরেই ধারা ২খ(XIII) তে ‘আরও অন্যান্য চিকিৎসা’ র কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এই আইনটা পড়লে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে যায়, যে বা যারা এই আইনটা তৈরী করেছে, তারা চিকিৎসক হিসেবে অনেক ঘরানাকে ঢালাও স্বীকৃতি দিলেও ‘মেডিক্যাল সার্ভিস’ এর ব্যাপারে ফোকাস এবং টার্গেট করেছে মূলত MBBS ঘরানার ডাক্তারদের।
এই আইনে আরো বেশ কিছু বিষয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তবে ডাক্তার ভাই বোনদের যে ধারার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দেয়ার সাজেশন দেব সেটা হচ্ছে এই আইনের ধারা ২(ড), যেখানে ‘পেশাগত অবহেলা’র সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, প্রথম দৃষ্টিতে আইনে যা বলা আছে তা ভালই মনে হবে, তবে পিরানহার ঝাক আসলে এখানেই।

 


এটা একটু বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে, তাই এই বিশেষ ধারার পুরোটাই এখানে তুলে ধরছি _

২(ড): “পেশাগত অবহেলা” অর্থ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত যে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কতৃর্ক পেশাগত বা প্রাতিষ্ঠানিক অযত্ন,অসচেতনতা, পেশাগত মানদন্ড বা মূল্যবোধ বহির্ভূত চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন কাজ করা বা আইন দ্বারা আরোপিত কোন দায়িত্ব পালন না করা বা বারিত কোন কাজ করা এবং সাধারণভাবে কোন রোগীকে তার অধিকার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান না করা বা বিলম্বিত করা বা ভুল চিকিৎসা করা, যাহার দ্বারা রোগীর রোগ মুক্তি ঘটে না বা বিলম্ব ঘটে বা অঙ্গহানীসহ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মৃত্যু ঘটে।
তাহাছাড়া নিম্নবর্নিত বিষয়গুলিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা:- (১) সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তিকৃত বা বহির্বিভাগীয় রোগীকে সময়মত পরীক্ষা না করা; (২) গুরুতর বা মুমূর্ষু রোগীকে আবশ্যকীয় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান না করা; (৩) ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রদান; (৪) ভুল বা নিম্নমানের ঔষধ প্রয়োগ বা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান; (৫) মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র প্রদান

 

 

২(ড) ধারার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ‘পেশাগত অবহেলা’ বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করা, তবে লক্ষনীয় ব্যাপার এই যে, প্রচলিত অর্থে ‘পেশাগত অবহেলা’ বলতে সচরাচর কোন কাজ করা বা না করাকেও বোঝালেও এই আইন অনুসারে পেশাগত অবহেলা বলতে বোঝায়_ (এই আইনে বর্নিত কিছু কাজ => সুনির্দিষ্ট কিছু ফলাফল) = পেশাগত অবহেলা।
জনগন (বা ফেসবুকের আতেল সমাজ) কোন কাজকে অবহেলা বলে রায় দিলেই সেটা ‘পেশাগত অবহেলা’ হয়ে যাবেনা, আর সেই কাজের ফলাফল এই আইনে যেসব ফলাফল দেয়া হয়েছে তার বাইরে কিছু হলেও হবে না। চিকিৎসকদের জন্য বেশ ভাল একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে না? আসলে তা নয়, দেখাচ্ছি কেন ও কিভাবে_

 

 


আসলে আইনী অস্পষ্টতা কত প্রকার ও কি কি হতে পারে, এই বিশেষ ধারাটি তার একটি ক্লাসিক উদাহরন। পেশাগত অবহেলা হিসেবে যেসব উপাদান এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসুন ধাপে ধাপে সেগুলিকে বিশ্লেষন করা যাক_

পেশাগত অবহেলার উপাদানসমূহঃ

অযত্নঃ কার দৃষ্টিভঙ্গিতে, কোন পরিমাপে, কখন এবং কি পরিস্থিতিতে কোন কিছু করা বা না করাকে ‘অযত্ন হিসেবে বিবেচনা করা হবে? এমন লোকও বাংলাদেশে আছে যারা ডাক্তার সারাক্ষন রুগীর পাশে বসে না থাকলে সেটাকে ‘অযত্ন’ হিসেবে বিবেচনা করবে। কোনটা ‘যত্ন’এবং কোনটা ‘অযত্ন’সেটার মাপকাঠি কি হবে এবং সেটা কে বা কারা নির্ধারণ করবেন? কোন মাপকাঠি না দিয়ে সরাসরি এই বিধান দিয়ে দিলে ব্যাপারটা ‘আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা’ টাইপ ব্যাপার হয়ে যাবে না?

 


অসচেতনতাঃ কোন বিষয়ে, কার বিষয়ে? কখন? রোগ বিষয়ে, রুগী বিষয়ে নাকি অফিসের কম্পিউটারে যে ভাইরাস আছে সেটার বিষয়ে? কতখানি অসেচতনতা? চিকিৎসকের নিজ লেভেলের একজনের যতটুকু জানা উচিৎ সেই তুলনায় অসেচনতা নাকি তার বিষয়ের একজন প্রফেসরের যতটুকু জানা উচিৎ সেই তুলনায় অসেচতনতা? অসেচতনতার মাপকাঠি কি? কারা এটা নির্ধারন করেছেন বা করবেন?
সাধারণভাবে কোন রোগীকে তার অধিকার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান না করা বা বিলম্বিত করা বা ভুল চিকিৎসা করাঃ অধিকার অনুযায়ী চিকিৎসা করার মানে? অধিকারের মাপকাঠি? কার অধিকার কতখানি সেটা কোথায় জানা যাবে বা কোথায় দেয়া আছে? অধিকারের সেন্স তো আবার সবার সমান না। সবাই কি সমান? না মনে হয়, তাহলে আলাদা করে অধিকারের কথা আইনে বলা হত না।

 


বিলম্বিত চিকিৎসাঃ রুগী দেখতে কতখানি দেরী হলে সেটাকে ‘বিলম্বিত’ চিকিৎসা বলা হবে? আউটডোরে রুগীর বন্যা হয়ে যাচ্ছে, রুগীর আত্মীয়-স্বজন কাউকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, চিকিৎসা সেবা দিতে বিলম্ব হয়ে গেল, তখন?
ভুল চিকিৎসা করাঃ চিকিৎসা ভুল হয়েছে কি হয়নি সেটা কে কিভাবে বিচার করবেন? যে পেসক্রিপশন দেখিয়ে দাবী করা হবে যে ভুল চিকিৎসা করা হয়েছিল, সেটা সেই অভিযোগকারীকেই দেয়া হয়েছিল কিনা তার কি প্রমান কি হবে? বিশেষত যেখানে ঘটনার এক বছরের ভেতর যে কোন সময় কেস করা যাবে (ধারাঃ ১৯ দ্রষ্টব্য)। এই আইনে ডাক্তারদের বুগা বুগা (মানে জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না প্লীজ) দেয়ার একটা অতি সরল কায়দা বলে দেই, ডাক্তার সাহেব কারো লেজ মাড়িয়েছেন, কলিমুদ্দি মিয়া ‘ছলিমুদ্দি’ সেজে সেই ডাক্তারের কাছে যাবে, ছলিমুদ্দি নামে পেসক্রিপসন নেবে, স্বাভাবিক ভাবেই সেই ঔষধে আসল ছলিমুদ্দির রোগ সারবে না, তারপর সেই ডাক্তারের নামে এই আইনে কেস দেয়া হবে, ইয়েপ, এজ সিম্পল এজ দ্যাট!

 

 

যেসব ফলাফল হতে হবেঃ

যাহার দ্বারা রোগীর রোগ মুক্তি ঘটে না বা বিলম্ব ঘটে বা অঙ্গহানীসহ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মৃত্যু ঘটেঃ

মানে উপরে যা কিছু উপাদান হিসেবে বর্নিত হয়েছে সেসবের কারনে এসবের কিছু ঘটলে।
ইয়ে, কারো মাথায় কি এটা একবারও এসেছে যে উপরে বর্নিত কোন উপাদান ব্যাতীতও কোন রুগীর রোগ মুক্তিতে বিলম্ব হতে পারে, রোগমুক্তি নাও ঘটতে পারে, এমনকি অঙ্গহানী সহ রুগী সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা তার মৃত্যুও ঘটতে পারে?
আগেই দেখিয়েছি এই আইনটা কত ঢিলা টাইপ, উপাদান কোনটাই স্থির নয়, তার সাথে গোদের উপর বিষফোড়ার মত আবার এটাও দেয়া হয়েছে, সিরিয়াসলি! মনে করুন অবহেলার কোন উপাদান ছাড়াই রুগীর রোগ মুক্তি হয়নি বা হতে বিলম্ব (সুস্থ হবার কোন বাধা ধরা সময় আছে নাকি?) হয়েছে, অঙ্গহানি হয়েছে বা সাময়িক বা স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বা রুগী মারা গেছে (যার প্রত্যেকটা উপরের কোন উপাদান ছাড়াই হতে পারে), তখন যদি কেউ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কেস দায়ের করতে চায়, তাহলে?
বাংলাদেশের মত দেশে এ এরকম একটা আইন পাশ করা আর মুরগীর খোয়াড় খোলা রেখে শেয়ালকে দাওয়াত দেয়া কি একই কথা নয়?

 

 


দুঃখের সাথে জানাচ্ছি প্রথমে এক নিঃশ্বাসে কিছু উপাদান দিয়ে আরো কিছু উপাদান এই উপধারার লেজে যোগ করা হয়েছে (জী, রীতিমত কাকড়া বিছা টাইপ ব্যাপার), এবং এই উপাদানগুলিও পূর্ব ঐতিহ্য বজায় রেখেছে, অর্থাৎ অন্যান্যগুলির মত এগুলিও ঝাপসা, নিজেরাই দেখুন_

তাহাছাড়া নিম্নবর্নিত বিষয়গুলিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা:- (১) সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তিকৃত বা বহির্বিভাগীয় রোগীকে সময়মত পরীক্ষা না করা; (২) গুরুতর বা মুমূর্ষু রোগীকে আবশ্যকীয় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান না করা; (৩) ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রদান; (৪) ভুল বা নিম্নমানের ঔষধ প্রয়োগ বা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান; (৫) মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র প্রদান

আসেন দেখি এসবের আবার কি সমস্যাঃ

সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তিকৃত বা বহির্বিভাগীয় রোগীকে সময়মত পরীক্ষা না করাঃ ঠিক কোন সময় বা কতক্ষনের মধ্যে পরীক্ষা করলে কোন রুগীকে ‘সময়মত’ পরীক্ষা করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হবে? ডাঃ সাহেব যদি জ্যামের কারনে সময় মত পৌঁছাতে না পারেন? যদি বিপুল সংখ্যক রুগী সামলাতে যেয়ে সময়মত পরীক্ষা না করতে পারেন? যদি এক রুগীর মাস্তান আত্মীয়দের থেকে জান বাচাতে যেয়ে অন্য রুগীদের পরীক্ষাই না করতে পারেন, তখন?

 


গুরুতর বা মুমূর্ষু রোগীকে আবশ্যকীয় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান না করাঃ যদি এক সাথে অনেক রুগী চলে আসে (রানা প্লাজা বা বাস এক্সিডেন্ট টাইপ ব্যাপার)? যদি এত রুগী বা সেই ক্যাটেগরি রুগী সামলানোর মত দক্ষতা, উপকরন এবং যোগ্যতা সেই ডাক্তার বা প্রতিষ্ঠানের না থাকে? সেই ক্ষেত্রে দায়মুক্তি এই আইনে কোথায় দেয়া হয়েছে?
ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রদানঃ ছলিমুদ্দি-কলিমুদ্দি কেস খেয়াল আছে? প্লাস কোনটা ভুল আর কোনটা ভুল নয় সেটা কে ঠিক করবেন?
ভুল বা নিম্নমানের ঔষধ প্রয়োগ বা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদানঃ কোন ঔষধ ভুল ছিল সেটা কে নির্ধারন করবেন? কোন ঔষধ নিম্নমানের সেটা কে স্থির করবেন বা করছেন? প্লাস সরকার নিম্ন মানের ঔষধ বাজারে ছাড়তে দিলো কিভাবে?
মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র প্রদানঃ  আবার সেই সমস্যা, কোনটা মাত্রাতিরিক্ত সেটা কে স্থির করবেন? আদালত? এক্সপার্ট মতামত নিয়ে, একাধিক এক্সপার্টে যদি মতবিরোধ হয়, তখন? আর রুগীর সমস্যা যে মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করেই হয়েছে নাকি অন্য কিছুতে সেটা আদালতের সামনে প্রমান করার গুরুভার সম্পর্কে ধারনা আছে?

এর পর এই উপধারার যে অংশটি মনোযোগের দাবীদার সেটা হচ্ছে ২(ড়), এটা ‘অসদাচরন’ বিষয়ে, এবং এক্ষেত্রে এই আইন তার জন্মগত দোষ অর্থাৎ অপব্যাবহারের সম্ভাবনা কাটাতে পারেনি। ব্যাখ্যা করছি, তার আগে আইনটা দেখে নিন_

 

 


২(ড়) “অসদাচরণ” অর্থ কোন চিকিৎসক কতৃর্ক সরকারি কর্মচারি (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এ বর্ণিত অসদাচরণ; অধিকন্তু একজন চিকিৎসকের নিম্নোক্ত কার্যাবলীও ও অসদাচরণ হইবে-
(১) অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনষ্টিক টেস্ট দেওয়া এবং বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার হইতে আথির্ক সুবিধা গ্রহন; (২) ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় এবং বিভিন্ন কোস্পানীর একই ওষুধ বার বার প্রদান করা এবং বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানী হইতে আর্থিক বা অন্য সুবিধাদি গ্রহণ করা; (৩) নিজ ক্ষেত্রের বা এখতিয়ারের বাহিরে চিকিৎসা দেওয়া; (৪) চিকিৎসকের কাজ নিজে না করিয়া নার্স, আয়া, ওয়ার্ড বয় দ্বারা করানো

 

 

 

এবার দেখুন এই আইনের প্যাচ সমূহঃ

অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনষ্টিক টেস্ট দেওয়া এবং বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার হইতে আথির্ক সুবিধা গ্রহনঃ কোন টেস্ট প্রয়োজন এবং কোনটা প্রয়োজন নেই, এটা কে নির্ধারন করবেন বা এর গাইডেন্স কি হবে? আর্থিক সুবিধা না হয় একজন ডাক্তার গ্রহন করলেন না, কিন্তু সেই ডাক্তার অপ্রয়োজনীয় টেস্ট পাঠায় না দেখে কোন ডায়াগনিস্টিক সেন্টার যদি কাউকে রুগী সাজিয়ে সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা ঠোকে, তাহলে?
নিজ ক্ষেত্রের বা এখতিয়ারের বাহিরে চিকিৎসা দেওয়াঃ কোন ক্যাটেগরি চিকিৎসকের এখতিয়ার কতখানি ব্যাপারটা কোথায় পরিস্কার করে বলা আছে? নগরীর বাইরে যেখানে চিকিৎসক স্বল্পতা আছে বা চিকিৎসা না দিলে আক্ষরিক ভাবেই ‘খবর’ আছে, তখন?

 


ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় এবং বিভিন্ন কোস্পানীর একই ওষুধ বার বার প্রদান করা এবং বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানী হইতে আর্থিক বা অন্য সুবিধাদি গ্রহণ করাঃ কোনটা প্রয়োজনীয় এবং কোনটা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ, তা কে স্থির করবেন? প্লাস কোন কোম্পানী হতে কেউ আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন কিনা সেটা কিভাবে নজরদারী এবং প্রমান করা হবে? এই আইনের ভয় দেখিয়েই যদি ওষুধ কোম্পানীগুলি চিকিৎসকদের নিজেদের ওষুধ লেখার জন্য জোর করে তাহলে?
চিকিৎসকের কাজ নিজে না করিয়া নার্স, আয়া, ওয়ার্ড বয় দ্বারা করানোঃ এ রকম কোন তালিকা কোথাও আছে নাকি যে এই এই কাজগুলি কেবল ডাক্তারদের জন্য সুনির্দিষ্ট? কিছু কাজ (যেমন অপারেশন) যে কেবল ডাক্তাররা করবেন সেটাতো বোঝাই যায়, কিন্তু ব্যান্ডেজ করা, খোলা এবং আরো কিছু কাজ যেসব একজন ডাক্তার না করলেও চলে, সেসব ক্ষেত্রে এই আইনের কি বক্তব্য? যদি আচমকা জরুরী অবস্থা দেখা দেয় (যেমন ভূমিকম্প, গন পরিবহন দূর্ঘটনা, ইত্যাদি), তখন কি অন্যান্যরা বসে বসে আঙ্গুল চুষবে আর ডাক্তাররা দৌড়াবে? নাকি তখন তারা সাহায্য করলে ডাক্তার সাহেবরা এই আইনে ধরা খাবেন?

 

 

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনকারীর অধিকার ও দায়দায়িত্ব

এই পরিচ্ছেদে মূলত সরকারী এবং বেসরকারী চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূগীদের অধিকার এবং দায় দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে এবং আমার ভুল না হলে রুগীদের চেয়ে বরং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলি এই অংশ নিয়ে বেশী মাথা ঘামাবে (লাইসেন্স ক্যান্সেল হবার ভয় আছে না!), আগেই বলেছি এদের নিজস্ব আইনজীবি থাকার কথা, কাজেই এটা আর বিস্তৃত ব্যাখ্যা করলাম না, আইনের এই অংশটা তুলনামূলক ভাবে সহজ, ইচ্ছে হলে যে কেউ পড়ে জেনে নিতে পারবেন।
তবে এখানে একটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট উল্লেখ না করে পারছি না, এই আইনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে_

২(ঞ) “স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান” অর্থ যে প্রতিষ্ঠানে কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে তাহার সুস্থতার লক্ষ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত সেবা প্রদান করা হয়, যেমন- সরকারি এবং নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিংহোম, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ইত্যাদি;

 

 

কি বুঝলেন? ‘নিবন্ধিত’ না হলে এই আইনের বাইরে, অর্থাৎ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালিয়ে মানুষ মারলে আর যাই হোক, ‘লাইসেন্স তো আর ক্যান্সেল করতে পারবে না’ টাইপ ব্যাপার।
আরেকটা প্যাচ আছে, চিকিৎসক হিসেবে এই আইনে হোমিওপ্যাথ, হাকিম, কবিরাজ সবাইকে স্বীকৃতি দিয়ে উদাহরন হিসেবে MBBS ডাক্তাররা কাজ করে কেবল সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া কেন বাওয়া? অন্যগুলির নাম বলতে কি লজ্জা লাগে নাকি মনে থাকেনা ?
আরেকটা ব্যাপার, ৪(১) এ এটা আছে_

৪। (১) যে কোন রোগে আক্রান্ত এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণেচ্ছু ব্যক্তি দেশের যে কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল সহ সকল প্রকারের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হইতে স্বাস্থ্যসেবা পাইবার অধিকারী থাকিবেন।

 

 

উত্তম প্রস্তাব, তবে ইয়ে, যদি সেই রুগীর ফী এবং খরচাপাতি দেবার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ আর ইউনাইটেড হাসপাতালের রেট যে এক না সেটাতো সবাই জানে, এই অংশ পড়ে তো মনে হচ্ছে যে প্রতিষ্ঠানেই যাক না কেন, সেই প্রতিষ্ঠান তাকে চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য। আরো ব্যাপার আছে, ধরুন টাকা পয়সা নিয়ে রুগীর কোন সমস্যা নেই, কিন্তু তিনি একজন তালেবর টাইপ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, উনাকে রুগী হিসাবে ভর্তি করলে তার সমর্থকদের আসা যাওয়া আর হম্বি-তম্বির ঠ্যালায় অন্য রুগীদের চিকিৎসা লাটে উঠবে প্লাস উনার কিছু হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানই জ্বালিয়ে দেয়া হবে, তখন?
এমন একটা বিধান বা ব্যাবস্থা কি থাকা উচিৎ ছিল না যে অন্য রুগীদের সমস্যা হবে বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এই বিবেচনায় কোন চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোন রুগীকে সেবা দিতে অস্বীকার করতে পারবে?
এনিওয়ে, এ ব্যাপারে বাকি ব্যাখ্যার ভার প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজ নিজ আইনজীবিদের জন্য তোলা থাকলো।

 

 

তৃতীয় পরিচ্ছেদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির অধিকার ও দায়দায়িত্ব

এই পরিচ্ছেদ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ন, তবে যেহেতু এই লেখাটা সার সংক্ষেপ টাইপের, থিসীস না, সরাসরি ধারা ১২ তে যাচ্ছি যেখানে চিকিৎসকের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে_

১২। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি হিসাবে একজন চিকিৎসকের দায়দায়িত্ব নিম্নরূপ-
ক. রোগীর সকল তথ্য তাহার বা অভিভাবক বা পরিচর্যাকারীর নিকট হইতে বিশদভাবে জানিয়া লওয়া;
খ. চিকিৎসা শুরুর পূবের্ রোগী বা তাহার অভিভাবকের সম্মতি গ্রহন;
গ. মারাত্মকভাবে সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে সম্মতির অপেক্ষা না করিয়াই চিকিৎসা আরম্ভ করা;
ঘ. রোগী বা তাহার অভিভাবককে রোগীর অবস্থা, চিকিৎসা পদ্ধতি, সম্ভাব্য ঝুঁকি, চিকিৎসার সম্ভাব্য ব্যয় ইত্যাদি অবহিত করা;
ঙ. যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে অসমর্থ হইলে অবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসকের নিকট বা প্রতিষ্ঠানে রেফার করা;
চ. রোগীর চিকিৎসার তথ্যাদির (তারিখ, সময় ও চিকিৎসকের পূর্ণ নামসহ স্বাক্ষরযুক্ত) রেকর্ড সংরক্ষণ;
ছ. রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা;
জ. মাদকাসক্ত বা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব পালন না করা;
ঝ. রোগী বা তাহার প্রতিনিধির চাহিদামতে নিজ (চিকিৎসক) নাম, পরিচয়, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা;
ঞ. অপারেশন থিয়েটার হইতে বাহির হওয়ার পূবের্ই সম্পূর্ণ অপারেশন নোট লিপিবদ্ধ করা;
ট. আবশ্যিকভাবে নিজের ইনডেমনিটি ইন্স্যুরেন্সকরণ;
ঠ. প্রতিটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রটোকল (Protocol) মানিয়া চলা;
ড. যেইক্ষেত্রে কোন রোগীর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠিত হইবে সেইক্ষেত্রে বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য কর্তৃক যুক্তিসহ মতামত প্রদান এবং তাহাতে নিজ নাম স্বাক্ষর করা;ণ. রোগীকে তাহার চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে নির্দেশিত ঔষধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানো

 

 

আসুন এবার উপরের ধারাগুলি এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করা যাক_

ক. রোগীর সকল তথ্য তাহার বা অভিভাবক বা পরিচর্যাকারীর নিকট হইতে বিশদভাবে জানিয়া লওয়াঃ যদি বলতে না পারে? যদি বলতে না চায়? যদি ভুল তথ্য দেয়? দূর্ঘটনার শিকার রুগীকে অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে আসলে? যদি ভুল বা মিথ্যা পরিচয় দেয়? তারপর যদি অভিযোগ আসে যে চিকিৎসক এই ধারা অনুসরন করেননি, তখন?
খ. চিকিৎসা শুরুর পূর্বে রোগী বা তাহার অভিভাবকের সম্মতি গ্রহনঃ চিকিৎসা করলে ঠিক হয়ে যাবে, না করলে সমস্যা বাড়তে থাকবে, রুগী মারাও যেতে পারে, সম্মতি না দিয়ে হাউ মাউ করছে, কিছু হয়ে গেলে দোষ চিকিৎসকের উপরেই পড়বে, করনীয় কি ?
গ. মারাত্মকভাবে সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে সম্মতির অপেক্ষা না করিয়াই চিকিৎসা আরম্ভ করাঃ অত্যন্ত ভাল প্রস্তাব, কিন্তু বাংলাদেশে যা হয়, ‘কেউ আসছে’ বা ‘আগে ফোনে কথা বলেন’ টাইপ অবস্থায় করনীয় কি? সেই রুগী মারা গেলে না বড় ধরনের ক্ষতি হলে চিকিৎসকের দায়মুক্তি কোথায়?

 


ঘ. রোগী বা তাহার অভিভাবককে রোগীর অবস্থা, চিকিৎসা পদ্ধতি, সম্ভাব্য ঝুঁকি, চিকিৎসার সম্ভাব্য ব্যয় ইত্যাদি অবহিত করা; বুঝতে না পারলে বা বোঝার চেষ্টা না করলে? কতখানি বুঝাতে হবে? আউটলাইন নাকি ইন ডিটেল? কয়বার বোঝাতে হবে? এদেশে তো অভিভাবকের অভাব নেই, আত্মীয়, পাড়াতো, দলীয়, একেকবার একেক অভিভাবক এসে বুঝতে চাইলে? চিকিৎসকরা কি চিকিৎসা করবেন নাকি সারাদিন কেবল বোঝাবেন? সর্বোচ্চ কতক্ষন, কাকে, কতবার বোঝাতে হবে তার একটা প্যারামিটার থাকা উচিৎ ছিল না ?
ঙ. যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে অসমর্থ হইলে অবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসকের নিকট বা প্রতিষ্ঠানে রেফার করাঃ ডাক্তার কেন চিকিৎসা দিল না, পিডা! নিয়ে যাবার সময় রাস্তায় রুগী মারা গেল, ‘কসাই ডাক্তার’! এসব পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের দায়মুক্তি থাকা দরকার ছিল না? কোন পরিস্থিতিতে, কেন, কার কাছে রেফার করা হল তার একটা রেকর্ড থাকা দরকার ছিল।

 

 


ছ. রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা; অবশ্যই!
জ. মাদকাসক্ত বা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব পালন না করাঃ এটা কিভাবে বোঝা যাবে? প্রমান কিভাবে হবে? চিকিৎসক যত টাল ই থাকুক না কেন, টাল হয়ে সেইরাম কিছু না করলে এই অভিযোগ প্রমান করা যাবে? আজ পর্যন্ত শুনিনি কোন চিকিৎসক টাল হয়ে চিকিৎসা করেছেন বা তার বিরুদ্ধে এটা প্রমান করা গেছে।
ঝ. রোগী বা তাহার প্রতিনিধির চাহিদামতে নিজ (চিকিৎসক) নাম, পরিচয়, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা; উত্তম প্রস্তাব!
ঞ. অপারেশন থিয়েটার হইতে বাহির হওয়ার পূবের্ই সম্পূর্ণ অপারেশন নোট লিপিবদ্ধ করাঃ অপারেশন তো একজন করেনা, লিপিবদ্ধের কাজটা কে করবেন? মূল ডাক্তার নাকি তার কোন সহযোগী? তারপর সেটা কি করা হবে?, অফিসে রাখা হবে নাকি কোথাও পাঠাতে হবে? রাখা হলে কতদিন, আর পাঠাতে হলে কোথায়? যারা এই আইন বানিয়েছেন তারা অবশ্যই জানেন না যে একেকটা অপারেশন কত লম্বা এবং কত পরিশ্রম সাধ্য হতে পারে, অপারেশনের পর বিশ্রাম না নিয়ে তখনই লিখে ফেলতে হবে, সিরিয়াসলি! ভাল প্রস্তাব্‌ কিন্তু তারপর সেটা নিয়ে কি করতে হবে? সংরক্ষন নাকি পাঠিয়ে দেয়া, সংরক্ষন হলে কতদিন?

 


ট. আবশ্যিকভাবে নিজের ইনডেমনিটি ইন্স্যুরেন্সকরণ; সাধু! সাধু! আমি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মালিক হলে অবশ্যই সরকারকে এই আইন পাশের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতাম, সমস্যা হচ্ছে আমি তা নই এবং আরো বুঝতে পারছি যে প্রিমিয়ামের টাকাটা চিকিৎসকরা আমাদের কাছ থেকেই আদায় করবেন। দুষ্ট লোকেরা অবশ্য বলতে পারে বীমা কোম্পানীদের পরামর্শেই আইনে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যেসব চিকিৎসক এখনো বুঝতে পারেননি, আপনাদের সবাইকেই ক্লায়েন্টদের কেসজনিত ক্ষতিপূরন হতে বাচার জন্য বীমা করতে হবে (এবং এই জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীদের মোটা অঙ্কের প্রিমিয়াম দিতে হবে!)।
ঠ. প্রতিটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রটোকল (Protocol) মানিয়া চলাঃ নিজে চিকিৎসক নই দেখে ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না, এটা কি কোথাও বা কারো দ্বারা এর মধ্যেই সেট করা আছে নাকি, না থাকলে কারা এটা সেট করবেন?

 

 


ড. যেইক্ষেত্রে কোন রোগীর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠিত হইবে সেইক্ষেত্রে বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য কর্তৃক যুক্তিসহ মতামত প্রদান এবং তাহাতে নিজ নাম স্বাক্ষর করা; আগেও বলেছি, আবার বলছি, তারপর সেটা নিয়ে কি করতে হবে ?
ণ. রোগীকে তাহার চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে নির্দেশিত ঔষধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোঃ কিভাবে পরে প্রমান করা যাবে যে জানানো হয়েছিল নাকি হয়নি?

 

 

এরপর ধারা ১৪ তে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকালে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল কতৃপক্ষের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটা নিয়ে কেন বিস্তারিত আলোচনা করবো না সেটা আগেই বলেছি তবে এই ধারার একটা উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন না করলেই নয়, এই আইনের ধারা ১৪ (ট) এবং (ঠ) র বক্তব্য খেয়াল করুন_

১৪(ট). শুধুমাত্র রোগী বহনের জন্য নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা রাখা; ১৪(ঠ). প্রয়োজনে মৃতদেহ বহনের জন্য পৃথক বাহনের ব্যবস্থা রাখা;

 

 

কি বুঝলেন? মানে হচ্ছে প্রত্যেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালকে অন্তত রুগী পরিবহন করার জন্য এম্বুলেন্স অবশ্যই পুষতে হবে এবং এই আইন ডাক্তারদের ফী বেধে দেবার কথা বললেও এইসব এম্বুলেন্সের ফী কত হবে সেটা নিয়ে একেবারে চুপ (এসব ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায় মনে হয়!), যদিও বাস্তবে প্রায় সময় অন্য ডাক্তার পাওয়া গেলেও আরেক এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়না এবং টাকা পয়সার ব্যাপারে গলা কাটার সম্ভাবনা বরং এই এ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রেই বেশী।
বাই দি ওয়ে, এ্যাম্বুলেন্সের দাম আছে, ড্রাইভার সহ সেটা পোষার খরচ আছে, বাংলাদেশের সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য নেই এ্যাম্বুলেন্স কেনা এবং পোষার, তারমানে এন্ড অফ দি ডে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যাপারটা বড়লোকদের হাতে চলে যাচ্ছে। আর এই এ্যাম্বুলেন্স পোষার টাকা কোথা থেকে আসবে? রুগীদের পকেট থেকে অবশ্যই! ফলাফল? সার্বিক চিকিৎসা ব্যায় বৃদ্ধি!

 


ওহ! কফিনে শেষ পেরেক এখনো ঠোকা হয়নি, খেয়াল করলে দেখবেন এই আইনের ধারা ৪ এ উল্লেখিত স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনকারীর হাসপাতালে প্রাপ্য অধিকার সমুহের সাথে এই আইনের ধারা ১৪ তে বর্নিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল কতৃপক্ষের দায় দায়িত্বের কোন মিল নেই। আরো ব্যাপার আছে, হাসপাতাল যদি ৪ ধারায় বর্নিত রুগীর অধিকার পূরন না করে, তাহলে তা এই আইনে অবহেলা [ ধারা ১৭(৩) দ্রষ্টব্য] হিসেবে গন্য হবেনা। সোজা কথায় এই আইনে রুগীদের অধিকার আর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এক না। গুরু গুরু!
তবে আইন প্রনেতারা যে চিকিৎসকদের মানুষ না ভাবে ফার্নিচার ভাবেন, তার প্রমান পেয়েছি এই আইনের ১৫ ধারায়, যেখানে আছে_

 

 

১৫। সেবা গ্রহণকারী রোগী বা তাহার অভিভাবক ও প্রতিনিধি কতর্কৃ চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীর বা প্রতিষ্ঠানের কোনরূপ ক্ষতিসাধন করা হইলে তাহারা ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য প্রতিকার প্রাপ্তির অধিকারী হইবে

আজ্ঞে হ্যা, চিকিৎসকদের কোনরূপ ক্ষতি হলে, যেমন ধরুন পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিলে এই আইনে পড়বে, কিন্তু চিকিৎসকদের কুৎসিততম ভাষায় গালাগালি করলে, তাদের সাথে দূর্ব্যাবহার করলে, আক্রমন করলে, এমনকি তাদের শ্লীলতাহানি করলেও এসব ব্যাপারে এই আইনে কিছু নেই। যে পর্যন্ত এসবের ফলে কোন ‘ক্ষয়ক্ষতি’ না হবে, সে পর্যন্ত অন্তত এই আইনে এসবের জন্য চিকিৎসকদের কোন প্রতিকার নেই।
আরেকটা ফাক আছে, রুগী দাবী করলো যারা চিকিৎসকদের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তাদেরকে সে চেনেনা (প্রতিনিধি তো অনেক দূরের ব্যাপার), তখন? তখন আর কি, বাইম মাছ যেভাবে পিছলে যায়, চিকিৎসক পিটিয়েও বা থাবড়া মেরেও অপরাধীরা পিছলে যাবে, বিশ্বাস হচ্ছে না? পরীক্ষা প্রার্থনীয়!
বেশী বুঝে যারা ‘মানসিক ক্ষয়ক্ষতির’ কথা বলতে চাইবেন তারা এটা চাখেন_

২(দ) “ক্ষতি” অর্থ চিকিৎসা সেবা গ্রহণকালে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও অন্য সকল প্রকার ক্ষতি;

মানে এই আইনে মানসিক ক্ষয় ক্ষতির ব্যাপারটা রুগীদের একচেটিয়া ব্যাপার।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ সরকারের দায়দায়িত্ব

আলোচনা করার কিছু নেই, কিছু টিপিক্যাল গতবাধা কথা! তবে ভাষায় বাহাদুরী আছে, বাই দি ওয়ে, সরকার যদি এই আইনে তার দায়িত্ব পালন না করে তাহলে কি করতে হবে বা করা যাবে সেটা কোথায় আছে? চিকিৎসকদের অধিকার সংরক্ষনের কথা না বলে মঙ্গল গ্রহে টোম্যাটো গাছের অধিকারের কথা বললেও কোন সমস্যা ছিল না, কারন সরকার যদি তার দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে কি হবে সেটা এই আইনে কোথাও নেই, আসলেই নেই!

পঞ্চম পরিচ্ছেদ অবহেলা ক্ষতি ইত্যাদি


##
লেখাটা আমার প্রয়াত চিকিৎসক পিতা ডাঃ কাজী মোঃ শাহজাহানের (DMC K-26) স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত।
## প্রথমবার এই নোট প্রকাশের সময় প্রস্তাবিত আইনের লিঙ্কটা দেয়া হয়নি, আপনাদের সুবিধার্থে এবার দিয়ে দিলাম_


https://www.lc.gov.bd/reports/HS-23....

 

________________________________________________

 লেখাটি দুপর্বে প্রকাশ হবে। প্রথম অংশ অাজ প্রকাশ হল। বাকি অংশ আগামী কাল প্রকাশ হবে। সম্পাদক । 

লেখক কাজী ওয়াসিমুল হক ।চিকিৎসক পরিবারের সন্তান । Lawyer at Supreme Court of Bangladesh
Chief Lawyer at Wasimul Haque & Associates

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়