Ameen Qudir

Published:
2018-09-25 20:10:04 BdST

মানুষের চাঁদে পা ফেলা নিয়ে মূর্খদের অবিশ্বাস ও পৃথিবীব্যাপী অজকুলের ম্যাৎকার


 

 

আজিজুল শাহজী
_____________________

সম্প্রতি এই অনুজপ্রতিম খোমাখাতার (ফেসবুক ) বন্ধুর পাতায় এক সার্টিফায়েড ব্ল্যাক বেঙ্গল ম্যাৎকার করছিল এই বলে যে চাঁদে মানুষ মোটেই পা ফেলেনি। সব মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্র। প্রথমে তাকে মারখোর এর মুরিদ এবং তার অজ গুণাবলীর কথা স্মরণ করালেও মনে হলো সত্যি তো , এই বিষয়ে একটু পয়েন্ট ধরে বলা দরকার না হলে বাঁশ এবং অন্য সব কেল্লার কাঁঠালপাতার বাগান সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই পারে। এর উপর দেখতে গিয়ে প্রথমেই একটা খবর দেখে বুঝলাম ছাগল সর্বত্র একই ভাবে আছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আর্মস্ট্রং এর সঙ্গী যিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে নেমেছিলেন , সেই বাজ অলড্রিন এইরকম এক ছাগলের জ্বালাতনে অতিষ্ট হয়ে ছাগল টি কে শেষ পর্যন্ত যা দরকার ওটাই করেছেন। সভ্য দেশ তাই ঐখানে ছাগল কে অকারণে গদাম দেওয়া ও যায় না ফলে বিষয়টি আদালতে ওঠে। প্রমান হয় এই মার্কিন ছাগল Bart Sibrel যা করেছে তাতে অলড্রিনের কোনো দোষ ছিল না। ভিডিও শেষেই দিলাম , মার্কিন ছাগলটি একটি বাইবেল নিয়ে উত্যক্ত করছিল বাজ অলড্রিন কে , তার দাবি ছিল ওতে হাত রেখে শপথ করতে হবে যে চাঁদে সত্যিই তিনি নেমেছিলেন।

 

একটা জিনিস খুব পরিষ্কার যে আপনি এই সকল ছাগ সন্তানকে যতই বোঝান হবে না কারণ তারা আপনাকে একটি গোল ঘরের মধ্যে কৌণিক কোনো কিছু দেখানোর চেষ্টা করেই যাবে যাতে আপনি ওদের দলভুক্ত হন। তাই , সাধারণ মানুষের জন্য এই লেখা। কারোর ছাগানুভূতিতে লাগলে তথ্য উপাত্ত নিয়ে আসবেন না হলে ভার্চুয়াল গদাম দেবো বলে রাখলাম !

প্রথমে চন্দ্রাভিযানের ঐতিহাসিক ঠান্ডা লড়াই আর এর পর্যায়গুলোর উপর সংক্ষিপ্তসার :

পঞ্চাশ এর দশকের শুরুতেই (১৯৫০) আমেরিকা এবং পূর্বতন সেভিয়েত ইউনিয়ন মিলে একটি প্রতিযোগিতা শুরু করে। কে সেরা তার উপর। এই সেরা হওয়ার লড়াইয়ে দুই পক্ষই বেছে নেয় মহাকাশকে। প্রাথমিক পর্যায়ে নভোশ্চর ইত্যাদি বা মহাকাশে স্যাটেলাইট ইত্যাদিতে সেভিয়েত ইউনিয়ন সফল হয়ে মার্কিনিদের অহং এ বেশ ভালোই আঘাত দেয়। অতঃপর তারা কেনেডির মানে জন কেনেডির নেতৃত্বে ঠিক করে চান্দের গাড়ি বানাবে এবং চাঁদে নামবে।

মে মাসের ২৫ তারিখ , ১৯৬১ সালে মার্কিন কংগ্রেসে জন কেনেডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদে মানব অভিযান এর ঘোষণা করেন। তিনি ওই ৬০ এর দশকের মধ্যেই এই কাজ শেষ করার চ্যালেঞ্জ কে সামনে রাখেন। এই মাঝখানের প্রস্তুতি গুলো ওই ষড়যন্ত্র তত্বের হওয়া গরম করার লোকগুলো এড়িয়ে যায়। ছাগল রা কি করে ? তারা খবর ও নেয় না। যাক ছাগল প্রসঙ্গ থাক , বিষয়ে আসি।

 

১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত মার্কিন মহাকাশ বিভাগ নয়টি অভিযান করে যা ছিল প্রস্তুতিমূলক। রেঞ্জার নামের এক ঝাঁক মহাকাশযান তৈরী হয়। ১৯৬২ তে এই উপলক্ষে পাঠানো মানব বিহীন মহাকাশযান রেঞ্জার ৪ চাঁদে তো নামে কিন্তু কোনো তথ্য পাঠাতে সক্ষম হয় না এবং ধ্বংস হয়। এরপর রেঞ্জার ৭ দুই বছর পরে মানে ১৯৬৪ এ তথ্য মানে অনেক ছবি পাঠায় তবে চাঁদের উপর নামতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। তার আগে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ ৪ হাজারের উপর ছবি পাঠায়।

 

সেভিয়েত ইউনিয়ন ও পিছিয়ে ছিল না। তাদের লুনা ৯ সফল ভাবে সর্বপ্রথম চাঁদে মানুষ বিহীন ক্যাপসুল অবতরণ করায়। এর কয়েকমাস পরে মার্কিনিরা একই ভাবে সার্ভেয়র ১ বলে তাদের ক্যাপসুলটি নিয়ন্ত্রিত ভাবে নামাতে সক্ষম হয় কোনো ক্ষতি ছাড়া। এর মধ্যেই আমেরিকার পরীক্ষামূলক কেন্দ্র এপেলো কমান্ড মডিউল এ আগুন লাগে একটি পরীক্ষামূলক অভিযানের সময়। যাতে তিন মহাকাশচারী Virgil Grissom, Edward White এবং Roger Chaffee মারা যান। নাসা দমে যায় নি , বরং ওই এপেলো কেন্দ্রের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রধান চন্দ্র অভিযানের নাম রাখে এপেলো ১। অতঃপর এই নামাঙ্কিত এপেলো ৭ উৎক্ষেপণ করা হয় অক্টোবর ১১ , ১৯৬৮ তে। এতে মহাকাশ অভিযাত্রী ছিলেন Walter M. Schirra Jr., Donn F. Eisele এবং Walter Cunningham , তারা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন ১৬৩ বার এবং ১১ দিন কাটান মহাকাশে।
এরপর অভিযান হয় এপেলো ৮ এর। ডিসেম্বর ২১ , ১৯৬৮ তে সেই প্রথম মানুষ বহনের জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক আর শক্তিশালী স্যাটার্ন ৫ ( Saturn V , মোমিন ভাবুন কি ষড়যন্ত্র ! শয়তানের নামে নাম রেখেছিল ! ) রকেটে Frank Borman, James A. Lovell Jr. এবং William A. Anders চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে চক্কর মারে এবং সফল ভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

এরপর মার্চ ৩, ১৯৬৯ এ এপেলো ৯ অভিযান চালায়। এতে James A. McDivitt, David R. Scott এবং Russell Schweickart অংশ নিয়েছিলেন। তারা ১৫২ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মানে লুনার মডিউল আর কমান্ড মডিউল মানে মূল মহাকাশযানের মধ্যে আসা যাওয়ার সফলতা হাতে কলমে কতটা সম্ভব ওটা পরীক্ষা করেন।

শেষ রিহার্সাল মানে অন্তিম পরীক্ষামূলক কাজ হয় এপেলো ১০ উৎক্ষেপন হয় মে মাসের ১৮ তারিখ , ১৯৬৯ এ। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কমান্ডার Thomas Stafford , John W. Young ছিলেন ওই কমান্ড মডিউল এর দায়িত্বে আর ওই লুনার মডিউল এর পাইলট ছিলেন Eugene Cernan , তিনি এই লুনার মডিউল কে একদম চাঁদের কাছাকাছি আনেন মানে ভূপৃষ্ট (চাঁদের ) থেকে ৫০ হাজার ফিট বা ১৫ হাজার মিটার এর মধ্যে।

অবশেষে চাঁদের মাটি ছোঁয়া :

অবশেষে জুলাই ১৯৬৯ এ সেই দিন চলে এলো। এই অভিযানের নভোশ্চররা যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন ,তারা হলেন , কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রং , কমান্ড মডিউল পাইলট মাইকেল কলিন্স এবং লুনার মডিউল এর পাইলট এডুইন বাজ অলড্রিন। জুলাই ১৬ , সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে এপেলো ১১ যাত্রা শুরু করে স্যাটার্ন ৫ ( Saturn V ) রকেটের প্রযুক্তি দিয়ে। এরপরের ইতিহাস এবং ওই সব ঘটনা আমরা অনেকেই জানি। আমি খালি তাদের কয়েকটা কাজ যা তারা চাঁদে করেছিলেন ঐগুলো বলেই এই পৃথিবীব্যাপী ষড়যন্ত্রের তত্বের উপর আলোচনা করবো।

উৎক্ষেপণের ১০২ ঘন্টা পরে , মার্কিন সময় বিকেল ৪ টা ১৭ মিনিটে চাঁদের পিঠে নামেন আর্মস্ট্রং আর অলড্রিন। ওই জায়গাটা নামকরণ হয়েছে সি অফ ট্র্যাঙ্কুলিটি মানে শান্ত সমুদ্র বলে। আসলে ওটা একটা লাভা দিয়ে সৃষ্টি চ্যাপ্টা জমি।

মনে রাখবেন , চাঁদে ওই লুনার মডিউল অবতরণের পর ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিট পরে এই দুজন চাঁদের মাটিতে পা ফেলেন। প্রথমেই যেটা অনুভব করেন ওটা হলো চাঁদের কম অভিকর্ষ মানে পৃথিবীর ৬ ভাগের এক ভাগ হওয়ার ফলে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এরপর ঘটনা হলো চাঁদে ওই বিশেষ ভাবে তৈরী আমেরিকার পতাকাটিকে পুঁতে ফেলা। প্রথম ৫/৬ ইঞ্চি পুঁততে অসুবিধা হয় নি তারপর প্রবেশ করতে চায় নি তাই একটু কাত করে ঢুকাতে হয়েছিল।

অতঃপর চাঁদের মাটি আহরণ করা। প্রায় ২৩ কেজি মাটি দুজনে সংগ্রহ করেন। এরপর অজস্র ছবি তোলেন , কিছু বৈজ্ঞানিক স্যাম্পেল টেস্ট এর যন্ত্রাদি রাখেন এবং একটি তথ্যপুঞ্জি ইলেক্ট্রনিক ডিস্কে রেখে আসেন যাতে ৭৩ টি দেশের বার্তা , সেভিয়েত এক নভশ্চরের কিছু মেডেল এবং মার্কিন জাতীয় প্রতীক ঈগল এর মুখে অলিভ পাতার একটি প্রতীক রেখে আসেন।

জুলাই ২১ তারিখে ওই লুনার মডিউল যাত্রা শুরু করে আকাশে ,মার্কিন সময় দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে। এরপর তারা চাঁদের কক্ষপথে চক্কর খাওয়া মূল কমান্ড মডিউলে যুক্ত হন। আগের ওই লুনার মডিউল কে পিছনে রেখে মূল মডিউল যাত্রা শুরু করে পৃথিবীর দিকে।

জুলাই ২৪ তারিখে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে ওই মডিউল। অবতরণ করে প্রশান্ত মহাসাগরে।

এই চাঁদে অবতরণ বা পুনরায় মূল মডিউলে ফিরে আসা এবং সফল ভাবে পৃথিবীতে নেমে আসার উপর আলাদা করে দিস্তা দিস্তা লেখা যায় ,আপাততঃ তাতে যাচ্ছি না কারণ ওই ষড়যন্ত্র তত্ব বা ছাগলের ম্যাৎকার এর উপর বলা বাকি আছে।

 

কতবার মানুষ চাঁদে গিয়েছে ?

পাঠক , রাগ করবেন না , আমরা অধিকাংশ মানুষ জানি না আর্মস্ট্রং বাদে আর কে কে চাঁদে নেমেছিলেন। অনেকে হয়তো ওই অলড্রিনের নাম বটে পারবেন কিন্তু তারপর ? কতজন সর্বমোট চাঁদে নেমেছে জানেন ? নেমেছেন ১২ জন ! হ্যা , নামগুলো হলো : Pete Conrad, Alan Bean, Alan Shepard, Edgar Mitchell, David Scott, James Irwin, John Young, Charles Duke, Eugene Cernan, এবং Harrison Schmitt

পরবর্তী অভিযানের সংক্ষিপ্ত সার :

মজার কথা হলো , এই ১২ জন কিন্তু প্রত্যেকেই এক বার করে গিয়েছেন ,দুবার কেউ যান নি ! যাই হোক অভিযান গুলো ছিল যথাক্রমে :
১. এপেলো ১২ : ছিলেন Pete Conrad এবং Alan Bean - উৎক্ষেপিত হয়েছিল ১৯৬৯ এ নভেম্বর ১৪ তারিখে। তারা দুদিন ছিলেন নভেম্বর ১৯ এবং ২০ তারিখ পর্যন্ত।

২. এপেলো ১৩ : মহাকাশচারীরা চাঁদে নামতে পারেন নি কারণ অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেঁটে গিয়েছিল তাই নিরাপত্তার কারণে তারা ফিরে আসেন।

৩. এপেলো ১৪ : যাত্রা শুরু জানুয়ারি ৩১ , ১৯৭১ ,যাত্রী Alan Shepard এবং Edgar Mitchell , অবতরণ করেন ৫ই ফেব্রুয়ারি। এবার তারা চাঁদে ভূমিকম্পর উপর কয়েকটা পরীক্ষা করেন।

৪. এপেলো ১৫ : জুলাই ৩১ অবতরণ করে , ১৯৭১ এ যাত্রা শুরু ,যাত্রী David Scott and James Irwin , তিনদিন থাকেন। এই প্রথম মানুষ একটি বিশেষ গাড়ি নিয়ে যায় যার ফলে তারা অনেক বেশি ঘুরতে পারেন।

৫. এপেলো ১৬ : যাত্রী John Young এবং Charles Duke এপ্রিল ২১ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত চাঁদে থাকেন ,১৯৭২ সালে। তারা প্রায় ২৭ কিমি চাঁদের মাটিতে বিশেষ গাড়িতে করে ঘুরেছিলেন।

৬. এপেলো ১৭ : Eugene Cernan এবং Harrison Schmitt ছিলেন সর্বশেষ চন্দ্রাভিযানকারী। তাঁরা চাঁদে অবতরণ করেন ডিসেম্বর ১১ , ১৯৭২ সালে। তিনদিন থাকেন এবং অবশেষে ১৯শে ডিসেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এইসময় Cernan তার আদরের কন্যা ট্রেসির নামের আদ্যক্ষর খোদাই করে আসেন চাঁদের পাথরে। যেহেতু চাঁদে আমাদের মতো ঝড় বৃষ্টি হয় না বা বায়ুমন্ডল নেই তাই ওটা অনেক বেশি টেকসই হবে। ছবিরআর খবরের লিংক ও দেওয়া হলো। https://en.wikipedia.org/wiki/Tracy%27s_Rock

ষড়যন্ত্র তত্ব এবং পরবর্তী কর্মকান্ড :

শুরুতে যা বলেছিলাম , যেই দিন মানুষ চাঁদে পা দিয়েছে সেই দিন থেকেই একটা প্রচার শুরু হয়েছে ,ইহা ষড়যন্ত্র ! ইহা সহি না ! এই চাঁদ সেই চাঁদ না। ব্যাবাক হলিউডি চিত্র ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই কর্মকান্ডে এই সহস্রাব্দের গোড়ায় মানে ২০০০ সালে আরো ভালো করে ঢাক বাজাতে শুরু করে ফক্স টেলিভিশন। নাম ছিল : ষড়যন্ত্র তত্ব , আমরা কি সত্যিই চাঁদে নেমেছিলাম ? (Conspiracy Theory: Did We Land on the Moon?) , ইউটিউবে আছে দেখে নিতে পারেন। যাই হোক , এরপর আর বাকি মুরিদবৃন্দকে পায় কে ! হাউ কাউ শুরু হয়ে যায়। আসুন দেখি , ওই ফক্স এর শেয়াল সুলভ ত্যানা পেঁচানো কি কি ছিল :

মূল কথা ছিল এই যে ঠান্ডা লড়াই এর সময় আমেরিকার আর সেভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মহাকাশ অভিযানে কার প্রযুক্তি বেশি উন্নত বা কে সেরা ওটার প্রতিযোগিতা জিততে আমেরিকা এই সাজানো খেলা খেলে কারণ আমেরিকার এতো টাকা ছিল না ,সেভিয়েত ইউনিয়ন কে ছোট করার জন্য ওই খেলা হয়। পয়েন্টগুলো ছিল :

১. ছবির আকাশে এক খানা ও তারকা নেই কেন ?
চাঁদের তো কোনো বায়ুমন্ডল নেই। পিছনে তো অযুত নিযুত তারকার সমাহার থাকা উচিত ! বুজঝি বুজঝি ! বানানোর সুময় ভুল করসে ! ব্যাকগ্রাউন্ড এর তারার ছবি দিতে ভুইলা গেসে !
- না , কিছুই বোঝেন নাই ! অবতরণ হয়েছে সূর্যের আলো যেই দিকে পড়েছে ঠিক ওই দিকে। প্রবল আলো খেলা করে চন্দ্রপৃষ্টে যার ফলে আকাশের কোনো তারার ছবি প্রতীয়মান হয় না ,ক্যামেরা দিয়ে তোলা ও সম্ভব না। যদি তুলতে হয় তবে যেই সময় চাঁদের অন্য পিঠ চাঁদের উল্টো দিকে থাকে ওই দিকে অবতরণ করতে হয়। তা হলেই ঐগুলো দেখতে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে কাছের পৃথিবী দেখা যায়। একটা সম্পৃক্ত ছবি দিলাম।

২. চাঁদে হওয়া নেই , কোনো বায়ুমন্ডল নেই তবু পতাকা উড়ছে , কেন ?
এইটা বড় মজার সওয়াল , অনেকেই এতে বেশ উৎসাহিত হয়ে ওঠে ,সত্যিই তো ! ক্যামনে কি ! নিশ্চই স্টুডিওতে উৎসাহ দেখিয়ে পাঙ্খা বন্ধ করে নাই ! এইবার পাইসি !

একদম পান নি , ওই পতাকাগুলো তৈরিই হয়েছে হাওয়ায় কাঁপছে এমন একটা লুক দিতে ,ঐগুলো কাপড়ের ভিতর দিয়ে কিছু ধাতব তার দিয়ে বুনন হয়েছে না হলে ওই বায়ুমন্ডল ছাড়া পতাকা কোনোদিন দৃশ্যমান হতো না। একটা কাপড়ের টুকরোর মতো নেতিয়ে থাকতো।কারণ চাঁদে হওয়া নাই !পতাকার ছবি দিলাম।

৩. একটি ছবিতে জুম করলে 'C ' হরফ আছে। নিশ্চই সেট ডিজাইন করার সময় ওই নাম মুছতে ভুলে গিয়েছিল ব্যাটারা !
-একদম ভুল, ওটা একটা চুলের কারণে ক্যামেরার সামনে এসেছে। পরবর্তীতে প্রমাণিত। ছবিটি ও দিয়ে দিলাম।

৪. এইবার একটু টেকি মানে জ্ঞানের প্যাচ : পৃথিবীর সীমার বাইরে মহাকাশে একটি স্তর আছে নাম ভ্যান এলেন বেল্ট। ওই স্তরে বিকিরণ এর মাত্রা অতীব বেশি। বিরুদ্ধবাদীদের বক্তব্য ,এই স্তর পেরোতে মানে মহাকাশচারীদের সুস্থ সবল থাকতে মহাকাশযানটির একটি ৬ ফুটের আস্তরণ দরকার আর তারপরেও এর মধ্যে তো তাদের শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তাইলে !
- হ্যা ওই স্তর আছে এবং ওটা বিজ্ঞানীরা আগেই জানতেন ,আগের ট্রায়াল গুলো একদম পরিকল্পনা করেই করা হয়। কোনো ৬ ফুটের আস্তরণ লাগে নি কারণ ওই স্তরের সবচেয়ে দুর্বল বিকিরণ এর জায়গাটা আগেই খুঁজে বের করা হয়েছিল। আর ওই অঞ্চলের উপর দিয়ে মহাকাশচারীরা গেছেন মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে। কোনো বিকিরণের প্রতিক্রিয়া আগে বা পরে তাদের উপর পরে নি। সম্পৃক্ত ছবি দেওয়া হয়েছে।

৪. নীল আর্মস্ট্রং তো প্রথম মানুষ যিনি চাঁদে নেমেছেন তা হলে তার নামার ছবি কে তুললো ? নিশ্চই স্টুডিওর ব্যাটারা ! হে হে গাধারা জানে না ,আমরা আরো ইস্মার্ট ! পাইসি এইবার !!
- না , পান নি। ওই লুনার মডিউল এর গায়ে একটা স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা লাগানো ছিল। ছবি দেওয়া হলো। এবার চেপে যান !

৫. লুনার মডিউল একটা বাজে খেলনার মতো লাগে ! রাংতা মোড়া , একদম জোড়াতালি দেওয়া জিনিস। ব্যাটারা ভালো একটা নকল মহাকাশ ক্যাপসুল বানাইতে পারে না !

- সমস্যা হলো আমরা সবাই সব জানি তাই ওই বাইরের আস্তরণ কত দরকারি বা ওটা কি ওটার উপর খবর নিই না। না , ওই বস্তুটির উপরের মোড়ক ঐরকম দেখে অবহেলা করবেন না ,ওটা বিশেষ ইন্সুলেটর কেপ্টন আর ,মেইলার বলে বস্তুর আস্তরণ ,হ্যা উপরে বিছিয়ে দেওয়া আছে যাতে সৌর তাপ আর বিকিরণ থেকে মহাকাশচারীদের বাঁচানো যায়। এর ভিতরের যান তৈরি হয়েছে অনেক পোক্ত ভাবে ,এলুমিনিয়াম এর সংকর ধাতুর ব্যবহার করে। ছবি দেওয়া হলো ,বাইরের আর ভিতরের একটা স্ট্রাকচার এর। সঙ্গে মঙ্গল অভিযানের উপগ্রহের বাইরের একই আস্তরণ এর ছবি ও দিলাম

৬. এইবারের প্রশ্ন একটু পিনাকী বা জোকার এ নালায়েক এর মতো :

চাঁদে ছবি তুলেছে বোঝানোর জন্য ব্যাটারা স্লো মোশনে ছবি তুলে ওই গ্র্যাভিটির বস্তুর কারিকুরি দেখিয়েছে। আমায় ফাঁকি দেওয়া ? হুহু ! ধরেছি !
- না , ঐখানেও কায়দা করে লাভ নেই। স্লো মোশন এর ছবি প্রমান করতে অনেক মহান লোক এই স্লো মোশনে ছবি একই ভাবে তুলে প্রমান করতে চেয়েছে। কিন্তু ওই যে সত্য বড় কঠিন চিজ ! ভুলে গিয়েছিল যে চাঁদে হওয়া নেই তাই পৃথিবীতে ওই ধুলো উড়লে হাওয়া ভাসবে বেশ কিছুক্ষন কিন্তু চাঁদে অভিযাত্রীরা নামার সময় যে ধুলো উঠেছে ওটা সঙ্গে সঙ্গে নেমে গিয়েছে ,কোনো ভেসে থাকার কেস হয় নি।

এতো কিছু দেখানোর পরে ও শুনতে পারেন , কইলেই হইলো ! আপ্নে আমাত্তে বেশি জানেন ? সে ক্ষেত্রে চুপ করে থাকুন বা স্থান ত্যাগ করুন। ছাগ সংসর্গ নিজের অধঃপতন করায়। আর যদি একান্তে না পারেন তা হলে একটা ভিডিও জুড়ে দিলাম , ওই অলড্রিন বাজ যা করেছেন ওটা করতে পারেন কারণ ছাগল গদাম ছাড়া কিছু বোঝে না।

এতো বড় লেখা পড়া শেষ করা মানে অভিনন্দন এর যোগ্য আপনি ! কোথাও ভুল দেখলে ধরিয়ে দেবেন। উপকৃত হবো !

সবাইকে ধন্যবাদ !

তথ্যসূত্র :
১. https://www.thevintagenews.com/…/harassed-by-insults-of-mo…/
২. https://www.space.com/847-conspiracy-theories-spacecraft-sn…
৩.https://www.nasa.gov/mission_pages/apollo/apollo11.html
৪. https://edition.cnn.com/…/t…/moon-photos-nasa-feat/index.html
৫. https://www.universetoday.com/…/how-many-people-have-walke…/
৬. https://www.youtube.com/watch?v=FKl8g_Su880&feature=youtu.be
৭. https://www.space.com/12814-top-10-apollo-moon-landing-hoax…
৮. https://en.wikipedia.org/w…/Moon_landing_conspiracy_theories

ছবিগুলো ক্রমানুসারে দেখুন। সুবিধা হবে। আর সব শেষে দেখুন অলড্রিন এর ওই মার্। এই বয়েসেও জোর আছে !
_________________________

আজিজুল শাহজী। বাংলাভাষার প্রথিতযশ সরস বিজ্ঞান লেখক।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়