Ameen Qudir

Published:
2018-04-27 01:18:16 BdST

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লড়াইয়ে ২৪ ডাক্তার: কে কোথায় :মিডিয়ার খবরে ব্যাপক কৌতুহল




মনোনয়ন যারা চাইবেন, তাদের কয়েকজন;ছবি সমকালের সৌজন্যে পাওয়া। 

 

নির্বাচন সামনেই। এতে অংশ নেবেন ডাক্তার পেশাজীবিরাও। তাদের নিয়ে "আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে দুই ডজন চিকিৎসক" শিরোনামে সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে দৈনিক সমকাল। এতে রয়েছে নির্বাচনী নানা তথ্য। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাংবাদিক
রাজবংশী রায় । দৈনিক সমকালের সৌজন্যে রিপোর্টটি প্রকাশ হল।
_______________________


আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন প্রায় দুই ডজন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে রয়েছেন চলতি জাতীয় সংসদের আটজন সংসদ সদস্যও। এই চিকিৎসক প্রার্থীরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার বর্তমান এমপিসহ অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী এই চিকিৎসকরা। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক মহাপরিচালকও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এসব চিকিৎসক প্রার্থীরা সংশ্নিষ্ট এলাকায় সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। উচ্চ পর্যায়ে লবিং-তদবির অব্যাহত রেখেছেন। সংশ্নিষ্টরা জানাচ্ছেন, অন্তত এক ডজন চিকিৎসককে মনোনয়নের বিষয়ে দল থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত নির্বাচন করতে চাইছেন কুমিল্লা-৭ আসন থেকে। উপাচার্য হিসেবে বিএসএমএমইউতে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন ও অটিজম নিয়ে কাজ করার মধ্য দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করেছেন। আওয়ামী লীগের আলী আশরাফ বর্তমানে কুমিল্লা-৭ আসনের এমপি। ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত সমকালকে বলেন, এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। চিকিৎসক হিসেবে তিনি সবসময় মানুষের পাশে থেকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান মনোনয়ন চাইছেন টাঙ্গাইল-৩ থেকে। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আমানুর রহমান খান রানা জেলহাজতে থাকায় ডা. কামরুলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ডা. কামরুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও গণস্বাস্থ্যসেবামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক।

স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান নির্বাচন করতে চাইছেন রাজবাড়ী-২ থেকে। এলাকার উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তিনি। তার বাবাও এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ জন্য এলাকায় তার পারিবারিক অবস্থান রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও তিনি এলাকায় সুপরিচিতি। ডা. আর্সলান বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে এবং দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি ওই আসন থেকে এমপি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজও ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বর্তমানে ওই আসনে এমপি। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ নূরুল ইসলামেরও নির্বাচনী এলাকা এটি। তবে ডা. এমএ আজিজ এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী। তিনি এলাকায় নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকার চরাঞ্চলে তার প্রায় দেড় লাখের মতো ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংক রয়েছে। ডা. আজিজ বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে ইচ্ছুক।

গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার গাজীপুর-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি এ আসনের বর্তমান এমপি। ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার সমকালকে বলেন, গণতন্ত্রী পার্টি ১৪ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত। তাই জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন। জামাল

কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়ন চান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক। আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন বর্তমানে এ আসনের এমপি। এর আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮ সালে অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এ এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। আওয়ামী লীগের সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বর্তমানে এ আসনের এমপি। ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। জয়ী হন আওয়ামী লীগের সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ডা. ডাবলু সমকালকে বলেন, নেত্রীর নির্দেশে আমি দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করছি। তিনি যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই মনোনয়ন দেবেন। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে দিলেও আমি তার জন্য কাজ করব।

স্বাচিপ সহ-সভাপতি ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এমএ রউফ সরদার নরসিংদী-৪ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০০৭ সালে বাতিল হওয়া নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালেও তিনি এমপি হন। ডা. রউফ সরদার বলেন, নির্বাচনী এলাকায় তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক তিনি।

হবিগঞ্জ-১ থেকে প্রার্থী হতে চান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। তিনি সমকালকে বলেন, ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। মাত্র ১০০২ ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম। ২০১৪ সালে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিলাম। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রস্তুত রয়েছি।

বিএমএর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম-৩ থেকে নির্বাচন করতে চান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশার কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মাহফুজুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। ডা. জামাল সমকালকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

বিএমএর দপ্তর সম্পাদক ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ শেখ শহীদ উল্লাহ খুলনা-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। ওই আসনের বর্তমান এমপি মো. নুরুল হককে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকেই 'বিতর্কিত' মনে করেন। ডা. শহীদ উল্লাহ সমকালকে বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের প্রথমে সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। তখন থেকেই এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছি।

বিএমএর খুলনা বিভাগীয় সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলম খুলনা-২ এবং খুলনা-৩-এর যে কোনো একটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। এ দুটি আসনের এমপি বর্তমানে যথাক্রমে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান মিজান এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। ডা. শেখ বাহারুল আলম সমকালকে বলেন, খুলনার দুটি আসনেই তার বাড়ি রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে এ দুই এলাকায় তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজ করছেন। দল থেকে মনোনয়ন দিলে আগামী নির্বাচনে যে কোনো একটি আসন থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে চান।

পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ডা. কেএম শফিউল আলম। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য তিনি।

ডা. এম নজরুল ইসলাম পিরোজপুর-৩ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। আরেক চিকিৎসক ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বর্তমানে এ আসনের এমপি। বিভিন্ন দল বদলের পর গত দুই নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। অবশ্য আগের নির্বাচনে তিনি আনোয়ার হোসেনের কাছেই পরাজিত হয়েছিলেন। বিএমএ ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. নজরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি দলকে আসনটি উপহার দিতে পারবেন। ডা. রুস্তম আলী ফরাজীও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিএমএর বর্তমান সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সাবেক এই এমপি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি সেলিমের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে এবারও তিনি মনোনয়ন পেলে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে সমঝোতার ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি বাদ পড়েন। তিনিও মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী।

আশাবাদী আট এমপি :বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. দীপু মনি, অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ডা. আফসারুল আমিন, ডা. এনামুর রহমান, ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, ডা. মোজাম্মেল হোসেন, ডা. ইউনুস আলী সরকার ও অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্লাহ। তারা প্রত্যেকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে রয়েছেন ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। তিনিও নির্বাচনে অংশ নেবেন।
________________________
রিপোর্টটি সমকালে র সৌজন্যে প্রকাশ হল।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়