Ameen Qudir

Published:
2016-12-01 22:24:24 BdST

ডাক্তার হয়েও কুচিকিৎসা থেকে তোমায় বাঁচাতে পারি নি মাগো


     


______________

ডা. অপূর্ব পন্ডিত
________________________


মা'র ফোনটি সেরকমই আছে। এখন আর এই ফোন বাজেনা- মা আমাকে জিজ্ঞেস করেনা- কিরে অপু কি করছিস?
আমার মা রত্নগর্ভা সুচিত্রা দেবীর আজ ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। না ফেরার দেশে যেখানেই আছ -
মা, আমায় ক্ষমা করো তুমি। তোমার ডাক্তার সন্তান অপুও তোমার জীবন বাঁচাতে পারেনি।
পারেনি তোমার মৃত্যুযন্ত্রণা এতটুকু কমাতে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হঠাৎ মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আমি তখন দেশে ছিলাম না। ছোটভাই মাকে নিয়ে ভর্তি করায় স্কয়ার হাসপাতালে। বলা হয় মা'র মেনিনজাইটিস হয়েছে। বড় বড় এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা চলে। তারা ১১দিন ভর্তি রাখে। আড়াইলাখ টাকা বিল নিয়ে বলা হয় -বাসায় নিয়ে যত্ন আত্তি করলে মা ভাল হয়ে যাবেন। কিন্তু মার তখন স্মৃতিলোপ পেয়েছে প্রায়।সন্তানদের কখনো চেনে কখনো চেনেনা।
দেশে এসে মার সাথে কথা বলে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ দেখে আমার ধারনা হয়- মা'র চিকিৎসাটা ঠিক হয়নি। আমি নিজে স্কয়ারের ডাক্তারের সাথে কথা বলি। ডাক্তার যখন মা’র বিষয়ে ইউরোলোজীর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে বলেন তখন আমি নিতান্তই হতাশ হই। মনে পড়ে বাংলাদেশে এখন বিদেশী ডিগ্রী করা অনেক ডাক্তার আছেন, কাজ করছেন অনায়াসেই যাদের আসলে ডাক্তারি ডিগ্রী আছে কিনা দেখার কেউ নেই।
মা তখন ভায়োলেন্ট, সামনে আমরা গেলেও কখনো চেনে, কখনো চেনেনা। হুট করে বিছানা থেকে নেমে যায়, পরক্ষনে ব্যালেন্স রাখতে পারেনা- পড়ে যায়। সামনে কেউ গেলেই মারতে চায়।

                    

                                 এখন আর এই ফোন বাজেনা

 


আমি মাকে নিয়ে যাই নিউরোসাইন্স ইন্সটিটিউটে। স্নেহভাজন ডা.মুকুলের সহযেগিতায় দীন মো: স্যারের মেধাবী ডায়াগনসিসে এমআরআই করাতেই দেখা যায় মার ব্র্রেণ দখল করে নিয়েছে বিশাল দু'তিনটি টিউমার। যার কারনে মার স্মৃতি কেন্দ্রটিই নষ্ট হওয়ার পর্য়ায়ে। তারপর মা'র ব্রেণে অপারেশান করে দেখা যায় তা হাই ডেনসিটি টিউমার। তারপর মার কষ্ট কি পর্যায়ে ছিল- সেটা ভাবলে আমার এখনো কষ্ট লাগে। আমার মা'র হাত পা বেঁধে রেখে নল দিয়ে খাবার দিয়েছি। এভাবে প্রায় দেড়মাস কষ্টের পর মা আজকের এই দিনে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।
মা'র এই কষ্টকর মৃত্যু এখনো আমাকে কাঁদায়, আমাকে অপরাধী করে, স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তারের সেই কথাটি এখনো কানে বাজে- আমরা চিকিৎসা ঠিক করিনি- তাইলে আপনিই করেন না। কিন্তু....তারা ব্রেণ টিউমারের একজন রোগীকে ১৫ দিন আগেই যে মেনিনজাইটিস বলে চিকিৎসা করলেন তার উত্তর আসলে কি দেবেন আমি জানিনা।
আমি স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তারদের দোষ দেইনা তারা যদি সঠিক ডায়াগনোসিস করতোই তাহলেই কি আমার মাকে বাঁচানো যেতো?
অবশ্যই না তবে ডায়াগনসিসটা আগে ভাগে করতে পারলে মারনঘাতি রোগগুলোতেও চিকিৎসকদের অনন্য ভুমিকা রাখা সম্ভব হয়।
আমি তাই অসহায় ডাক্তার সন্তান হিসেবে বলি- মা তুমি আমায় ক্ষমা করো। তোমার এত আদরের,কষ্টের পরিশ্রমের ফসল এই ডাক্তার সন্তানও কুচিকিৎসার হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করতে পারেনি।

___________________________________


লেখক ডা.
ডা. অপূর্ব পন্ডিত, লোকসেবী চিকিৎসক। সম্পাদক, আমারহেলথ ডটকম ।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়