Ameen Qudir
Published:2018-01-07 17:43:53 BdST
বাংলাদেশের লোকসেবী ডাক্তারের সন্ধানে : এক সিনিয়র সাংবাদিকের কলামে
দীপঙ্কর গৌতম। বাংলাদেশের প্রথিতযশ সিনিয়র সাংবাদিক ও নিবেদিত প্রাণ সংস্কৃতিকর্মী।
তিনি তার কলামে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের। তিনি জানান, দেশের লোকসেবী ডাক্তারদের নিয়ে তিনি নিয়মিত লেখা চালিয়ে যাবেন। অাসুন পড়ি তার লেখাটি।
_____________________
এ শহরের ডাক্তাররা
-------------------------------------------
এ শহরে ডাক্তারদের নিয়ে অভিযোগের অন্ত নে্ই।অযথা ওষুধ লেখেন কোম্পনীর পার্সেন্টিজ খেতে,অযথা টেস্ট দেন ল্যাবের পার্সেন্টিজ খেতে,রোগীর কথা না শুনে ওষুধ লেখেন। ভর্তি করে দেখা দেন না। মৃত্যুর পরও লাইফ সাপোর্টে রাখেন। রোগীদের গলাকাটেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চিকৎসার মান ভালো না হলেো হাজার মানুষ প্রতিদন ভারত চলে যান চিকিৎসা করাতে। মন্ত্রী এমপিরাও যান।নিজ দেশের উপর আস্থা নেই।এর মধ্যেও দেবদূতেরা আছেন।তাদের নিয়ে লেখা-----
আমি তখন আজকের কাগজে চাকরি করা অবস্থায় মানে সাংবাদিকতার প্রথম দিকে। রাত জেগে পড়াশুনা করতে করতে। ঘুম বন্ধ হয়ে গেলো। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতাম। ঘুমের ওষুধে মনে হলো আসক্ত হলাম। ১০টা ট্যাবলেট খেয়েও ঘুমাতাম। এত ওষুধ খাই ভেবে ছাড়লাম। আরো অনেক সমস্যা বাড়লো, বিবমিশা, দ্রুত রাগ হয়ে যাই। একদম নিয়ন্ত্রন নেই।আজেকর কাগজ থেকে চাকরি ছাড়লাম অযথা রাগ করে । তও কাইকে না বলে। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় একটা চিঠি খাম রেখে চলে এলাম। কিছুদিন ঘুরে এসে সংবাদে যোগদান করলাম ।
সেখানে বসে সমস্যার কথা খেলাঘরের এক বন্ধুকে বললাম। তিনি বললেন এটা কোন সমস্যা না। নিয়ে গেলেন শান্ত,বিনয়ী অসম্ভব বাগ্মী , সাংগঠনিক শক্তিতে বলীয়ান। তিনি প্রায় আড়াইঘন্টা বসে কথা বললেন। আড্ডার স্টাইলে। খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা । দিনের পর দিন চললো। ফোনে বিরক্ত করি, যখোন -তখন হাজির হই সিরিয়াল ছাড়া। কখনো একটু রাগ করেন। কখনোবসিয়ে রাখেন, আড্ডার জন্য। অসুখের ওষুধের বদলে আড্ডা। যে যে বিষয়ে যে অনুরক্ত সে বিষয়েই তার জ্ঞানের পরিধি ঈর্ষনীয়। আজও আমি সেই জীবন দেবতার আড্ডার একজন। ভিজিট ছাড়া আরো খেয়ে দেয়ে আসা। তাকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানালে বলেন, আসেন আড্ডা দেই। ওষুধের বদলে আড্ডা্। হেলথ এ্যান্ড হোপে সেই চিকিৎসক মহারাজার প্রাসাদ। কঠিন বলে মানুষের রোগ নেই। তিনি যেকোন অসুখ হলে রোগীকে বোঝাতে পারেন ,আসলে এটা কোন অসুখ নয়। এসেছেন, তাই এই ওষুধটা দিলাম।
৩ দিন পর আমাকে একটা ফোন দেবেন। যত বড় অপারেশন হোক,তাঁর কানে দিলেই হলো। তিনি বরবেন যেটা আছে দিয়ে যান, পরে আমি দেকছি। আমরা সবাই তার কাছে এমন বহু অভিজ্ঞতা নিয়ে আছি। আমরা যে গ্রুপটা তার কাছে যাই, গেলে রুদ্ধ দ্বার বৈঠক চলে। অন্য রোগীদের দিকে ভুলেও তাকাইনা। অপেক্ষমান রোগীরা আমাদের দেখলেই... তিনি প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের ডাক্তার লেলিন চেৌধুরী। সবার লেলিন ভাই। মাঝখানে তার হৃদয় অপারেশন হরে বোঝা গিয়েছিলো লেলিন ভাই কতলোকের আত্মীয়।
২. ঢাকা শহরে আসার পরে পত্রিকার একটা কাজ ছিলো লেখা সংগ্রহ করা। এ কাজে একবার গেলাম মহীয়সী নারী শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চেৌধুরীর কাছে। যাওয়ার পরে বিস্মিত হরাম। এতো নিপাট একজন মা। পরিচয় নিয়ে কাছে বসিযে বাবারে সোনারে কত প্রানের ডাক। তারপর তেকে তার কাছে যাই। তার উদ্দীপন বিদ্যালয়ে গেলে বললেন , তোমার চোখে ঘনঘন টিপ মারছো কেন? এটা একটা সমস্যা। তুমি পিজিতে যাও।বলরাম কা্বুকে চিনিনা আপা। বললেন নুজহাত আছে আমার মেয়ে। ও চোখের ডাক্তার গেলেই বুঝবা। আমি বলে রাখবো।ওর বাবা শহীদ ডাক্তার আলীম চেৌধুরীও বিপ্লবদের চোখ দেখতেন। কমরেড মনি সিংহ, মুকুল সেন , সত্যেন দা, সবাকে তিনি দেখতেন। আমি রাতে ফোন করলাম, নুজহাত চেৌধুরীর কণ্ঠ। বললেন, মা আপনার কথা বলেছেন- সকালে চলে আসেন। গেলাম। তিনি চা খাওয়ালেন ,আর বিভিন্ন কথার মাধ্যমে চোখের চেৌদ্দ পুরুষের খবর নিলেন। এরপর টেস্ট করাতে টেকনিশিয়ানদের বরে ক্রাস নিতে গেলেন। আমি টেস্ট করে তার রুমে বসলাম। তিনি আসরেন,এসে নিজে টেকনিশিয়ানদের কাছে গিয়ে রিপোর্ট আনলেন। আমাকে আবার মশিনের সামনে বসালেন নিজে আবকার সব দেখলেন। একটা ড্রপ, চশমাও এটা জেল দিলেন। যেখান থেকে যখোন ফোন করি তিনি ফোন ধরে সব খবর নেন। আমি ভিজিট চাইলে তিনি বললেন,মা পাঠিয়েছেন তাছাড়া আপনি সংগঠন করা লোক এটা কি? পিজিতে টাকা লাগে না। এই শহীদ সন্তান তার সর্বস্ব মেধা দিয়ে রোগীর সেবা দেন। দে;শের প্রতি দায় পালন করেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
৩. অনেক দিন ডাক্তার নুজহাত চেৌধরী দেশে ছিলেন না। দুটো ওষুধ মার্কেট আউট। চোখের অবস্থা ভাো না। ফেসবুকে একজন চোখে ডাক্তারকে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। তিনি একসেপ্ট করলেন। আমি তাকে চ্যাট বক্সে জানই আমার সমস্যার কথা। তখন মৃৎ ভাস্কর্যের একটা কমর্শালা চলছে। আমি অফিস আর কর্মশালা নিযে ব্যস্ত। চোখের অবস্থা ভালো না। ডাক্তার যিনি তিনিইসলামি চক্ষু হাসপাতালে যেতে বললেণ। আমি লাইনে দাঁড়াতে রাজী হলাম না। তিনি বললেন লাইনে দাঁড়াতে হবে না। হাসপাতের গেটে গিয়ে তাকে ফোন দিলে হব্ আমি ফোন দিলে তিনি পিওন পাঠালেন।আমি গেলাম ।
শান্ত, সেৌম্য এক লক্ষী দিদি বসা। রোগী দেখার মধ্যেই বসতে বললেন। বসলাম। তিনি সব কথা শুনে চোখ টেস্ট করতে বললেন।এজন্যআমাকে নিয়ে যেতে লোক দিলেন। রিপোর্ট যারা দিলেন তাদের ডেকে শুনলেন। আবার নিজে দেখে বললেন। কোন সমস্যা নেই।ওষুধ লিখে দিলেন। আমি ঢাকার বাইরে থাকি অনেক জায়গায় যেখানে নির্ধারিত ওষুধ পওয়া যায় না। তাকে ফোন দিলে তিনি ধরেন বা ব্যাক করেন। তিনি দেশবরেন্য কোর্নিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. চন্দনা সুক্তি।পরে শুনেছ্এই ডাক্তার দিদির বাবা বরেন্য ভাষা সংগ্রামী ও ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাকালীণ সভাপতি মোহাম্মদ সুলতান।এবং শ্বশুড় শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন। আর জীবসংগীআমিাদের শ্রদ্ধেয় জাহিদ ভাই ( জাহিদ রেজা নূর) । তিনি তার মেধার শেষটুকু দিয়ে মানুষের সেবা করেন। তাঁর কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
৪. আবুল কালাম আজাদ স্বপন। পিজির ক্যানসার বিভাগের ডাক্তার তার ব্যবহারেও মুগ্ধ হতে হবে যে কারো্ যেকোন সময় ফোন করেও বিরক্ত হননা। যে কেউ গেলে যতোটা ভদ্র ব্যবহার করা যায় তা তিনি করেন। সঠিক পরামর্শ দেন। পারসেন্টিজ খাননা। আপাদমস্তক সৎ একজন নির্ভেজাল চিকিৎসক।
৬. ডা. সুলতানা আলগিন -র কথারও তুলনা নেই। ডাক্তার প্রতিদিন নামে একটা অনলাইনের সম্পাদক যখোন তখন বললেই তিনি সেবা দিতে প্রস্তুত। অথবা যে ডাক্তারকে বলরে রোগী ভালো হবে তিনি সে ডাক্তারকেও বরে দেন। নিজে না পারলে রোগীকে আটকে রাখেন না। পেশার প্রতি ১০০ ভাগ কমিটেড এই চিকিৎসকের প্রতি নিরন্তর শ্রদ্ধা।
. ডা, ফজলুল ইসলাম। অমাদের ফজলু ভাই। কমিউনিস্ট পার্টি করেন। অনেক উচু মাপেরে এই চিকিৎসক সোজা -সাপটা কথা বলেন। প্লাস্টিকের জুতা কম দামী পোশাক পরে চলা মানুষটিকে অনেকেই পাগল বলেন। আসলে তিনি মেহনতী মানুষের সেবা দেয়ার জন্য পাগল। তার সঙ্গে রোগ বিষয়ক আলাপে তিনি সব শুনে পরে নিজে চিকিৎসা দেন। নিজে না পারলে যিনি ওই রোগের জন্য ভালো তাকে ডেকে রোগীকে দেখতে বলেন। ডাক্তারের দেখা হলে নিজের রুমে নিয়ে এসে একটা একতা তুলে দেন। এটা তার পার্টির মুখপত্র। এটা কিনতে হবে। খরচ এটাই। এমপি দাঁড়াতে গিয়ে পিজির চাকরি ছেড়েছেন। নওগাঁর মানুষের চিকিৎসার জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য।
এই দুঃসময়ে এত ভালো ডাক্তাররা সেবা দেন বিনা পয়সায় এবং মানব সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করেন। তারা অনুকরনীয়।
__________________
লেখায় লেখকের ধারাক্রমে ছবি প্রকাশ হল।
আপনার মতামত দিন: