Ameen Qudir
Published:2017-09-26 15:49:38 BdST
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে ১ম বিজ্ঞপ্তিটি জারি হলে ২য় বিজ্ঞপ্তির প্রয়োজন হত না
ডা. বাহারুল আলম
_________________________________
মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রের যুগ্মসচিব , স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রীর একান্ত সচিব , মন্ত্রীর ‘সদয় সম্মতি’র উদ্ধৃতি দিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি মন্ত্রীর অপেক্ষাগার থেকে মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা বা বিরক্তি সৃষ্টিকারীদের হুমকি দিয়ে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সদয় সম্মতিতে একান্ত সচিব এ বিজ্ঞপ্তি জারির পূর্বে আরেকটি জনস্বার্থে বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন নি। সেই বিজ্ঞপ্তিটি জারি হলে তার বর্ণনা এরূপ হত -
...........................
“মন্ত্রণালয়ে চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের অসংখ্য আবেদন-নিবেদন ও অবশ্যই করণীয় বিষয়সমূহ বছরের পর বছর ধরে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় মন্ত্রীর সদয় অনুমতি ব্যতিরেকে পড়ে আছে। ফলে মন্ত্রণালয় বহির্ভূত কর্মচারীদের মানসিক যন্ত্রণাসহ নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়াও রোগীর ভোগান্তি চরমে। সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সতর্ক করা হল, মন্ত্রীর সদয় অনুমতি ব্যতিরেকে কোন কাজ ও আবেদন নিবেদন যেন পড়ে না থাকে । তৃণমূল থেকে অনুমতি/বিনা অনুমতিতে তাদের ‘তদ্বিরের’ জন্য মন্ত্রণালয়ে এসে ভিড় করতে না হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের এরূপ কোন আচরণের নজির পাওয়া গেলে বরদাস্ত করা হবে না এবং বিধি মোতাবেক কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। মাননীয় মন্ত্রীর সদয় সম্মতিতে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল।”
..............................
আলোচিত সেই দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি
______________________
১ম বিজ্ঞপ্তি জারি না করে ২য় বিজ্ঞপ্তি জারি করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক কোন ধারায় চলছে না। কেবল আমলাতান্ত্রিক ধারায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যার চরিত্র ঔপনিবেশিক। গণপ্রজাতন্ত্র নাম হলেও কার্যত ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র। মন্ত্রণালয় কি ব্রিটিশ আমলের রাজবাড়ি না কি জমিদার বাড়ি? যার সামনে দিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে বা জুতো পায়ে হাঁটা অপরাধ ছিল । একই অবস্থা নাগরিকরা তাদের প্রয়োজনে (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হোক বা না হোক) মন্ত্রণালয়ে আসতে পারবে না , আসলে বিধি মোতাবেক শাস্তি হবে ! জমিদারি প্রথার ভিন্নরূপ বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে পারবে না।
অথচ প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রণালয় বহির্ভূত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় চরম স্বেচ্ছাচারিতার শিকারে পরিণত হয়ে আছে। মন্ত্রী এদেরকে কিছু বলেন না বা বলতে পারেন না। কেবল বললেন বঞ্চিত কর্মচারীদের, যারা প্রজাতন্ত্রের মালিক হয়েও আমলাতন্ত্রের কাছে অসহায়। মন্ত্রী স্বয়ং এ সকল কর্মচারীদের ভোটে নির্বাচিত এবং তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমলাতন্ত্রের দাপটে সে সব প্রতিশ্রুতি হারিয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় প্রজাতন্ত্রের , তার নাগরিকদের কাজের প্রয়োজনে সেখানে যেতে পারবে না। অথচ সকল সিদ্ধান্ত কুক্ষিগত করে ফেলে রাখবে। নাগরিকরা কথা বলতে গেলে আইনের ভয় দেখিয়ে জমিদারি প্রথার মত দূরদূর করে তাড়িয়ে দেবে। স্বাধীন রাষ্ট্রে নয়, উপনিবেশেই এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ‘দেশটা মগের মুল্লুক’। নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা বুঝেছে মগের মুল্লুক কাহাকে বলে !
মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তারা কাজ বাদ দিয়ে মন্ত্রীর সদয় সানুগ্রহ লাভের আশায় ‘কে এলো কে গেল’ – সেদিকে প্রখর নজর দিয়ে বসে থাকে। কারণ দর্শনার্থী বা তদ্বির-কারীদের চাপে, যে কারণে ফাইল আটকে রেখে কাজ দীর্ঘদিন অসমাপ্ত রেখেছে- সে কাঙ্ক্ষিত অর্জন আর হয় না। দর্শনার্থীরা বড়ই বেতমিজ – যে আশায় ফাইল ধরে রেখেছিল এদের ভিড়ে সে আশার গুঁড়ে বালি। মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় ঠিক হলে সমগ্র বাংলাদেশ ঠিক হয়ে যাবে। বিজ্ঞপ্তির কোন প্রয়োজন নাই। এখানে যেতে আসতে অনেকেরই অনেক কষ্ট হয়- সময়ের অপচয় হয়। সানন্দে বা স্বেচ্ছায় কেউই ওখানে যেতে চায় না।
চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বহুপ্রকার প্রক্রিয়া ও কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তির বক্তব্যে স্পষ্ট, সে সকল কৌশল বা প্রক্রিয়া অকার্যকর। অর্থের অপচয় করে আমলা পরামর্শে মন্ত্রণালয় এ সকল অকার্যকর কৌশল ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে । এসকল অর্থের অপচয় না ঘটিয়ে কেবল মন্ত্রণালয়ের সকল কাজ যথাসময়ে দ্রুত সম্পন্ন করে দিলেই - কোন কারণ নাই চিকিৎসক সহ অন্যান্য কর্মচারীরা প্রাসাদ মন্ত্রণালয়ে ভিড় করবে। মন্ত্রীর দোহাই দিয়ে ফরমান (বিজ্ঞপ্তি) জারি করে সেটাই প্রমাণ করেছে।
মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়কে যত বেশী মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে ততই মন্ত্রীর অপেক্ষাগারে ও সচিবালয়ের বারান্দায় ভিড় বাড়তেই থাকবে- কেউই ঠেকাতে পারবে না , বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঠেকানো যাবে না। কাজ করবে না যথা সময়ে , কাজের খোঁজ নিতে গেলে আবার হুমকি , রক্তচক্ষু। দর্শনার্থীরা তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নয়, এ প্রজাতন্ত্রের মালিক। জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ । মন্ত্রণালয় যেন তাদের কাজ কর্মস্থলে পৌঁছায় দেয় । তা না হলে উল্টো বিজ্ঞপ্তি হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অপরাধ ও আক্ষেপ খোদ সরকার প্রধান থেকে অনেকেরই মুখে উচ্চারিত হয়েছে, সে দিকেই নজর দেওয়া উচিত। বঞ্চিত চিকিৎসক ও হেলথ সার্ভিসে অপরাপর কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে লাভ নাই। আইন ভঙ্গ করলে মন্ত্রী, কর্মচারী বা নাগরিক যেই হোক শাস্তি সে পাবে।
কর্মস্থলে চিকিৎসক সহ সকল কর্মচারীদের অনুমোদিত অনুপস্থিতি শাস্তি যোগ্য অপরাধ- বিজ্ঞপ্তি জারির পূর্বেও এই বিধি চালু ছিল , এখনো আছে। একইভাবে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় মন্ত্রণালয়ে ফাইল ধরে রাখা বিধি মোতাবেক অপরাধ ও অন্যায়। সে বিজ্ঞপ্তিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাবরে ফরমান আকারে জারি হয় নি। হেতু সকলেরই জানা। দেশটা এখন আর সমাজতন্ত্রে, গণপ্রজাতন্ত্রের আইনে চলছে না। চলছে একটি তন্ত্রে তাহলো –‘আমলাতন্ত্র’ । হেলথ সার্ভিসে যে সকল চিকিৎসক ও অপরাপর কর্মচারী রয়েছে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের শিকার ।
মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতির ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হয়েও সমাজতন্ত্র , গণপ্রজাতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
_____________________________
ডা. বাহারুল আলম । প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা। লোকসেবী চিকিৎসক।
আপনার মতামত দিন: