Ameen Qudir

Published:
2017-08-27 17:46:18 BdST

২০ হাজারের বেশি সরকারি চিকিৎসক ৬ষ্ঠ এবং ৫ম গ্রেডের বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন না


 

 

 

ভুক্তভোগী চিকিৎসকবৃন্দ
___________________________

দেশের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি সরকারি চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে ৬ষ্ঠ এবং ৫ম গ্রেডের দুটি করে বর্ধিত বেতন সুবিধা (ইনক্রিমেন্ট) থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে এঁদের অনেকেরই অবসরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসায় তাঁরা চরম হতাশায় ভুগছেন ।

 


২০০২ সালে এ বিষয়ে এক কৃষিবিদ উচ্চআদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত ষষ্ঠ ও পঞ্চম স্কেল পর্যন্ত বর্ধিত বেতনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এক ব্যাখ্যা পত্রে উক্ত নির্দেশনাটি চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে মতামত দেন। সেই হিসেবে এরপর থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব কৃষিবিদ এবং প্রকৌশলী এই সুবিধা ভোগ করে আসছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে চিকিৎসাবিদেরা এখনো এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না অভিযোগ করেছেন।

 

এ প্রসঙ্গে একই সুবিধাবঞ্চিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এ এম মজিবুল হক মিডিয়াকে বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। এছাড়া তো আমাদের কিছু চাওয়ার নাই। কারণ এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা।’


বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, আদালতের রায়কে সম্মান দেয়া উচিত। কারণ আদালতের রায়ে সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত কৃষিবিদ ও প্রকৌশলীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু ষষ্ঠ ও ৫ম গ্রেডের ইনক্রিমেন্ট না পেয়েই অনেক চিকিৎসক ইতিমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এ ধরনের আরো কয়েকজনের অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।’

 

ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা জানান, চাকরিতে নিয়োগের ৫ বছর পরে ৬ষ্ঠ গ্রেডে এবং ১০ বছরের পরে ৫ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার বিধান রয়েছে। এই হিসেবে কমপক্ষে ২০ বছর পার করেও অনেকে বর্ধিত বেতনের সুবিধা বঞ্চিত বলে জানা গেছে। আবার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই প্রায় ৩০ বছর পার করে দিয়েছেন। এরপরেও তাঁরা ষষ্ঠ ও ৫ম গ্রেডের ইনক্রিমেন্ট পাননি এখনো।

 

বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার সময়ে প্রত্যেককে দুটি করে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে পদোন্নতির সময়ে এই দুটি ইনক্রিমেন্টের কার্যকারিতা আর থাকে না। কিন্তু এ বিষয়টি কৃষি ক্যাডার এবং সরকারি চাকরিরত প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ গেজেটে (মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫) প্রথম নিয়োগ প্রাপ্তিতে বেতনের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫–এ নির্ধারিত স্কেলে ন্যূনতম বেতন উক্ত অনুচ্ছেদ (৩) এ বর্ণিত বিধান সাপেক্ষে, প্রদান করা হবে এবং প্রথমে নিয়োগের পদটি যদি জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ২২০০০–৫৩০৬০ (৯ম গ্রেড) বা তদুর্ধ্ব স্কেলের হয় তাহলে একজন এমবিবিএস ডিগ্রিধারী বা ব্যাচেলর আব আর্কিটেকচার বা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি বা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সমপর্যায়ের ডিগ্রিধারীকে ১ (এক) টি অগ্রিম বেতনবৃদ্ধি প্রদান করা হবে, যদি এরূপ ডিগ্রি সংশ্লিষ্ট পদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে নির্ধারিত থাকে। গেজেটে আরো বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী যদি কোনো চিকিৎসা অনুষদের লাইসেন্সধারী হন এবং যদি উক্ত লাইসেন্স

তাঁর পদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে নির্ধারিত থাকে, তাহলে উক্ত কর্মচারী নিয়োগ লাভের সময় ১ (এক) টি অগ্রিম বেতন বৃদ্ধি পাবেন।

 

 

কারিগরি যোগ্যতার জন্য যেসব সরকারি কর্মকর্তা (প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা) চাকরিতে প্রথম যোগদানকালে প্রারম্ভিক বেতন নির্ধারণের ( পে ফিক্সেশন) সময় ১টি এবং চিকিৎসকগণ দুটি বর্ধিত বেতন (টেকনিকেল পে বা টিপি) পেয়েছেন, তাঁরা পদোন্নতি ছাড়া সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হলে বেতন নির্ধারণের সময়ে প্রতিবার অনুরূপ বর্ধিত বেতন (ইনক্রিমেন্ট) প্রাপ্য হবেন।
জানা যায়, ২০০২ সালে পাবনার চাটমোহরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একরামুল হকের উচ্চতর স্কেলে বেতন নির্ধারনের সময়ে ১টি বর্ধিত বেতন বা ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়। কিন্তু উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তাঁকে ইনক্রিমেন্টটি দিতে আপত্তি উত্থাপন করেন। তখন কৃষিবিদ একরামুল হক এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন করলে তা নাকচ করে দেয়া হয়। এরপর তিনি বিষয়টির সুরাহার জন্য বগুড়ায় প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা ( মোকদ্দমা নং–৪৩/২০০২) দায়ের করেন। মহামান্য আদালত ২০০৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আবেদনকারীর পক্ষে রায় দেন। পরবর্তীকালে চাটমোহর উপজেলার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ঢাকায় প্রশাসনিক এপিলেট ট্রাইবুনালে আপিল করেন। বিজ্ঞ আদালত ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর পূর্বের রায় বহাল রাখেন। এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহামান্য হাইকোর্টে লিভ টু আপিল করেন। গত ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট মহামান্য বিচারপতিরা লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।

 

এই রায়ের পরে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কৃষি সচিব বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে জানান, ‘কারিগরি যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তা জনাব মো. একরামুল হক উচ্চ আদালতের রায় পাওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন পুন: নির্ধারণের পূর্বে কারিগরি বেতনের পরিবর্তে প্রদত্ত ইনক্রিমেন্টটি বিয়োগ করে বেতন নির্ধারণের পর একটি ইনক্রিমেন্ট যোগ করে এ কার্যালয় কর্তৃক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও বেতন নির্ধারণের উক্ত পদ্ধতিটি প্রযোজ্য মর্মে প্রতীয়মান হয়।’
২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
এদিকে, উচ্চ আদালতের রায়ের সুফল কৃষিবিদদের পাশাপাশি চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরাও ভোগ করতে পারবেন বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তাঁর ঐ চিঠিতে নিশ্চিত করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেতন নির্ধারণের উক্ত পদ্ধতিটি সরকারি চাকরিরত সকল এমবিবিএস ডিগ্রিধারী বা ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার বা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’


এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় নীরব ভূমিকা পালন করছে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়টি নজরে আনার চেষ্টা করা হয়েছে বহুবার। কিন্তু এতো কিছুর পরেও আমরা এখনো পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাচ্ছি না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে।’

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়