Ameen Qudir

Published:
2017-08-10 04:11:54 BdST

তাতে তোমার কি আসে যায় বলো


 

 

 

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

__________________________________

রবি ঠাকুর গো । আবার একটা বাইশে শ্রাবণ এসে গেল । তোমার অন্ত তো ছিলোই না , এবার তুমি অনন্ত হলে । এবারো ফাংশান হবে তোমায় নিয়ে । মহড়া দিব্যি চলছে তোমার গান আর কবিতা নিয়ে । কি আর করা -- তোমার মত ছবি আঁকার এলেম নেই বলে ঐটা বাদ । তাপ্পরে কত্ত ক্যান্ডিডেট । সব্বাই কে সুযোগ দিতে হবে গণতন্ত্রে । মামাটিমানুষের রাজত্ব না একোন । নাটক গুলো যে বড্ড বড় আর অনেক মুখস্থ করতে হয় । ক্লাস টেস্ট আচে না ইনরিজি মিডিয়াম ইস্কুল গুলোর । গান নাচ -সব থাকবে । পাড়ার মোড়ে বাঁশ দিয়ে একটা মঞ্চ আমরা নির্ঘাত খাটিয়ে ফেলবো । মাঠ তো আর বাকি নেই ,যে একফালি পড়ে ছিলো , তাতেও প্যাচপেচে কাদা । আর সব তো তোমরা জানোই - স-অ-ব ফ্ল্যাট করে দিয়ে ফ্ল্যাট হচ্চে যে । একটা সন্ধে লোকজনের অসুবিধে হলে পাড়ার দাদারা বুঝে নেবে বলেচে ।

 

 


টেবিলের ওপর থাকবে তোমার ছবি । ছবিতে চন্দন লাগাবো , ধূপ পিদিম জ্বলবে - আর একটা বড় , ভালো মালা - ঠিক থাকবে দেকো ।

 


সোন্দেবেলায় প্রধান অতিথি আসবেন । দেকে শুনে এক মালদার ( জেলার নয় ) মানুষ কে পেয়েছি আমরা । নইলে স্পনসরের টাকা - নানারকম খরচ খরচা দেবেন কে বলুন । ইনি যে- সে নন , মানুষ কে মাটি আর মাতার ওপরে ছাত দিয়েচেন - এইটে কম বড়ো কতা হোলো - বলো । অন্ধজনে দেহ আলো , মৃতজনে দেহ প্রাণ আর মধ্যবিত্তে দেহ ফ্ল্যাট - কেমন মিল হল না বলো । আর হ্যাঁ - এমন নয় যে তোমার নামটি পর্যন্ত শোনেননি , এমনকি অনেক ক্যালেন্ডারে ছবি পর্যন্ত দেকেচেন
যাক সে কতা । শুরুটা তো হোলো ।

 

 

এবারে তিনি যা বোললেন শুনে দূক্কু পেওনা যেনো । তিনি একবার তাকালেন তোমার ছবির দিকে , তারপরেই এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন সক্কলের দিকে --' আপনারা কি জানেন রোবিন্দনাত কত বড় সাধক ছিলেন '? । হ্যাঁ সাধক তো তিনি ছিলেন-ই , তবে শিল্প -সাহিত্যের । - পাশ থেকে ফিস ফিস করে বললেন একজন। ' রোবিন্দনাত এমন কঠিন সাহিত্য সাধনায় ব্যস্ত ছিলেন যে দাড়ি কামানোর সময় টুকু পর্যন্ত পাননি' - এই বলে প্রায় গর্জে উঠলেন তিনি । এমোন একখানা খবোর । হাততালি আর থামেই না যেন । শুদু সামনের দিকে বসে থাকা কয়েকজন বয়স্ক মানুষজন , যাঁরা তোমার লেখা পড়েছেন -টড়েছেন তাঁরাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন । সে যাক । এবারে শুরু মূল অনুষ্ঠান । গান গাইতে মঞ্চে উঠলেন এক শিল্পী ,আর সঙ্গে বাপরে - কি কনসার্ট । একোন নাকি এটাই স্টাইল । বলতে যাও তো বলবে - শতবর্ষের পরে সব নিয়ম কানুন অন্যরকম হয়ে গেছে । ঠিক আচে , ঠিক আচে বাবা - কিন্তু গানটা কোতায় হাইরে গেলো গো ।

 


এরপর আবৃত্তি । কচি কচি বাচ্চাদের স্টেজের ভয় ভাঙানো হচ্চে তোমার কবিতা পাঠ করিয়ে । সে আরো মজা । অনেক বাচ্চা ই বাংলা হরফ চেনে না , তাদের হয় দেবনাগরী নয় রোমান হরফে লিখে দিতে হচ্ছে তোমার লাইনগুলি। তোমারি সাধের বাংলায় । ফলে হোলো কি ? কে কি বলে গেল মাথামুণ্ডু । তবে হ্যাঁ ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বললো খুব । বাবা মায়েদের খুশীর সীমা নেই । রবিবাবু গো - তুমি হারিয়ে গেলে তোমারি প্রয়াণ - সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে ।।


______________________________

লেখক ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়