Ameen Qudir

Published:
2017-08-08 19:37:04 BdST

বাংলাদেশের ডা. সায়েবা'স মডেল: মাতৃমৃত্যুহার হ্রাসে পৃথিবীর বুকে রোল মডেল


 

 

 

 

 

 

 

ডা. মোহাম্মাদ টিপু সুলতান

______________________________________

আমাদের দেশে আগে মাতৃকালীনমৃত্যু হার অনেক বেশি ছিল এবং তার অন্যতম কারণ ছিল প্রসবপরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,যেটাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি পোষ্ট পারটাম হেমোরেজ ( পি পি এইস)। বিগত বছরগুলোতে এই PPH কন্ট্রোল হওয়ার জন্য মাতৃকালীন মৃত্যুহার অনেকটাই কমে এসেছে...
কীভাবে এটা সম্ভব হল,সেই পেছনের কাহিনীটা অনেকেই জানেন না।
সারা দেশে প্রচুর মা মারা যাচ্ছিলো গর্ভপরবর্তী রক্তক্ষরণে,যে বিষয়টা ডাক্তারদের কপালে ভাজ পরিয়ে দিয়েছিলো। এরকম রক্তক্ষরণ রোধ করার জন্য ঐ মহিলার সম্পূর্ন জরায়ুটিই বাদ দিতে হত এবং এই সুবিধাটা কেবল সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ছিল। জরায়ু কেটে বাদ দেয়ারও অনেক সমস্যা ছিল। তা হচ্ছে,ঐ মহিলা পরবর্তীতে আর বাচ্চা নিতে পারতেন না,ফলে এই অপারেশন পরবর্তী বিবাহবিচ্ছেদ বা পারিবারিক অশান্তি লেগে থাকা ছিল একটা সমস্যা। এমতাবস্থায় এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পার্মানেন্ট একটা সমাধানের দরকার ছিলো।
সময়টা ২০০০ সাল। ঢাকা মেডিকেলের তৎকালীন গাইনী ও অবস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রোফেসর ডাঃ সায়েবা আক্তার একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করে বসলেন। তার এই আবিষ্কারটি হচ্ছে কনডম ক্যাথেটার!!! হ্যা নামটি শুনে একটু খটকা লাগতেই পারে,এবং লাগাটাও স্বাভাবিকও!! কারন কদিন আগে আপনারা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকদের কল্যানে "কনডম দিয়ে বাচানো যায় লক্ষ মায়ের জীবন" এরকম শিরোনামে কোন সংবাদ পড়ে থাকতে পারেন।

 

 

 

 

বলে রাখি "কনডম" আর "কনডম ক্যাথেটার" ২ তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এই নিউজের মমাধ্যমে সাংবাদিকেরা তাদের অজ্ঞতা,আপনাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো!!!
যাহোক কাজের কথায় আসি। ডাঃ সায়েবা কীভাবে কনডম ক্যাথেটার আবিষ্কার করলেন জানেন???
তিনি একটি কনডম,একটি ক্যাথেটার(প্রসাবের রাস্তার নল),একটি সুচার ম্যাটেরিয়াল(সুতা),একটি স্যালাইন সেট ও একটি ৫০০এম এল (যে কোন) স্যালাইন দিয়ে কনডম ক্যাথেটার আবিষ্কার করেছিলেন। ক্যাথেটারের মাথায় কনডমটি সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে লাগানো হয় এবং ক্যাথেটারের অন্য মাথায় স্যালাইন সেটের মাধ্যমে স্যালাইন লাগানো হয়। তারপর কনডমযুক্ত ক্যাথেটারের মাথাটা ঐ PPH হওয়া মহিলার জরায়ুতে ঢুকিয়ে স্যালাইন ঢুকিয়ে জরায়ুর ভিতরে ঐ কনডমটি ফুলিয়ে দেয়া হয়। ফলে কনডমটি জরায়ুর ভিতরে ফুলে,জরায়ুগাত্রে চাপ দেয়,এবং এই প্রেসারের জন্য জরায়ুর ভিতর থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।

 

 


ডাঃ সায়েবার এই আবিষ্কারে সারা বাংলাদেশজুড়ে বেচে যায় লক্ষ লক্ষ মায়ের জীবন। এই আবিষ্কারের জন্য ২০০০ সালের পরে ডাঃ সায়েবাকে নিয়ে সমগ্র বিশ্বের ডাক্তারদের মধ্যে সাড়া পরে যায় এবং তার এই আবিষ্কারের জন্য এই প্রোসিডিউরকে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী Doctor's Sayeba's Method/Sayeba's Condom Tamponade বলা হয়। এবং এই অন্যতম কারনেই আজ বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যুহার হ্রাসে পৃথিবীর বুকে রোল মডেল।

 

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে,ডাঃ সায়েবা এটা আবিষ্কার করেছিলেন ২০০০ সালে অথচ আমাদের বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এটা জানতেনইনা। আমাদের সংবাদগুলো যেখানে বিদেশী বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার নিয়ে ফেচার করে,অথচ বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে জানেইনা,এ লজ্জা আমরা রাখবো কোথায়????
কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে,
"বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।"
আসলেই গোয়ালের গরু উঠানের ঘাস খায়না.....


__________________________________

ডা. মোহাম্মাদ টিপু সুলতান ।
Medical Officer, ICU at Al Helal Specialized Hospital
Indoor Medical Officer at Reliance General & Renal Hospital Limited
Arogya Sadan Private Hospital
Former Duty Doctor at Shamrita General Hospital
Former Intern Doctor at Faridpur Medical College Hospital
Former যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক at বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ শাখা
Studied 19th Batch at Faridpur Medical College

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়