Ameen Qudir

Published:
2017-06-11 14:40:08 BdST

প্রধানমন্ত্রী হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কি খবর? কি কর ?


 


ডা. তারিক রেজা আলী
____________________________

আজ সন্ধ্যায় গণভবনে ইফতার শেষে যখন বিদায় নিচ্ছি সবার থেকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সুরাইয়া আপা হঠাৎ বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাও? কথা বলতে চাও? আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এটা কিভাবে সম্ভব ? কি বলব আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে? আমার মৌণতা কে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে আমাকে সহ এগিয়ে গেলেন গণভবনের ভিতরে, যে করিডোর দিয়ে নেত্রী আসবেন সেখানে।

গণভবনের এদিকে তো আর আসা হয় নি কখনো, তাকিয়ে দেখি আধো আলো আঁধারিতে আম গাছের দীর্ঘ ছায়া। একটু আগে শেষ বিকেলের আলোতে দেখেছিলাম গাছে গাছে পাকা আমের সমারোহ। জেনেছিলাম এই আম পাড়া নিষেধ, কোন মনুষ্য খাবে না, নেত্রীর আদেশ, খাবে শুধু পাখী আর অন্যান্য প্রাণীকূল।

করিডোরের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে ঘামছিলাম। এমন তো নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আগে কখনো কথা বলি নি, বলেছি, তবে তা অনেক অনেক দিন আগে। আজ তো পরিস্থিতি ভিন্ন। কি জিজ্ঞাসা করবেন তিনি? আর আমি কি জবাব দেব?

ধীর পদক্ষেপে তিনি এলেন। সাথে কত মানুষ। কিভাবে বুঝলেন এই অর্বাচীন দাঁড়িয়ে আছে শুধু তাঁকে দেখবে বলে? হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কি খবর? কি কর?

হৃদয়ে লাগিল দোলা। চোখের সামনে ১৬ কোটি মানুষের অভিভাবক। আগে আমরা বলতাম আপা। এখন তাঁকে কি নামে ডাকেন সবাই? হু হু করে বয়ে গেল ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬। কত স্মৃতি। কতবার তাঁর সামনে যাবার সুযোগ হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়ীতে আর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ অফিসে। দুই বার এসেছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের সম্মেলন আর নবীনবরণ উৎসবে। তখন ছাত্রলীগ সলিমুল্লাহ মেডিকেলের বড় দুর্দিন। দু'বারই ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার থেকে মিটফোর্ডে আসার সময় নেত্রীর গাড়ীর সামনের সিটে বসে তাঁর সাথে আসার দুর্লভ সুযোগ হয়েছিল আমার। যাক সে প্রসঙ্গ । আমি চোখের ডাক্তার আর রেটিনা বিশেষজ্ঞ শুনে খুশি হলেন নেত্রী। ঐ চোখে আগেও তাকাতে পারতাম না, আজও পারি নি। মনে পড়লো ১৫ আগষ্ট রক্তদান শেষে নিজ হাতে খাওয়াতেন আমাদের ঐ খাবার ঘরে বসিয়ে, যেটা ছিল তাঁদের পারিবারিক রান্না আর খাবার ঘর, যা আজ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের অংশ। আরো পরে জেনেছি প্রতিটি ১৫ আগষ্টে রোজা রাখতেন তিনি, কিন্তু আর সবার খাবারের তদারক করতেন পরম মমতায়।

 

আমাকে তো আর চিনতে পারার কথা নয়। সব শেষে হেসে বললেন, এখন আর রক্ত দিতে পারি না, একটা বয়সে এসে রক্তদান করা যায় না। মনে মনে বললাম আর কত রক্ত দিবেন মাননীয় নেত্রী? যে ঋণে আবদ্ধ করেছেন এ জাতি কে ৭১ এর ঘাতকদের বিচার সত্যি সত্যি বাস্তবায়ন করে, শুধু এটুকু ঋণ কি এ জাতি শোধ করতে পারবে? সব মানুষের অর্থনৈতিক আর সামাজিক অন্যান্য উন্নতির কথা না হয় বাদই দিলাম।

ফিরতি পথে ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখনো আছি। আমি কি বুঝাতে পেরেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কত ভালবাসি আপনাকে? আমার মতো কত লক্ষ পুরনো কর্মী প্রতিনিয়ত আপনার জন্য শুভ কামনা মাগে। তারা কোন কিছুই চায় না, শুধু চায় মহান আল্লাহ্ আপনাকে সুস্থ রাখুন। আপনি বেঁচে থাকলেই বেঁচে থাকব আমরা সবাই। কারণ, আপনিই তো বাংলাদেশ !
_______________________________

 

ডা. তারিক রেজা আলী

সহকারী অধ্যাপক, রেটিনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়