Ameen Qudir

Published:
2017-03-27 16:27:15 BdST

৭১এর রনাঙ্গণে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতেন একজন নারী ডাক্তার


ডা. সাইফুল আলম
____________________

মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিলেন জীবনের আশ্বাস। তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ মাদার তেরিজা।
তার চিকিৎসায় প্রান ফিরে পান বাংলাদেশ ও মিত্র ভারতীয় বাহিনির মহান বীর আহত যোদ্ধারা। যাদের ত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেলাম, তাদের জীবনের স্পর্শ দিয়েছেন একজন নারী ডাক্তার।
ডা. সিতারা রহমান একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর প্রতীক উপাধিতে ভুষিত হন ।

 

১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সালে কিশোরগঞ্জে জন্ম সিতারা বেগমের৷ বাবা মোহাম্মদ ইসরাইল এবং মা হাকিমুন নেসা৷

তবে বৈবাহিক সূত্রে তিনি সিতারা রহমান নামে পরিচিত৷ এসময় তাঁর বড় ভাই এটিএম হায়দারও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন৷ স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন সিতারা৷


তিন বোন ও দুই ভাইয়ের ভেতর তিনি ছিলেন তৃতীয় ।তাঁর বাবা মোঃ ইসরাইল মিয়া পেশায় ছিলেন আইনজীবী। তাঁর সাথে কিশোরগঞ্জে সিতারা বেগম শৈশব কাটান।সেখান থেকে মেট্রিক পাশ করার পর হলিক্রস কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।


ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করার পর তিনি তৎকালীন সেনাবাহিনীর সেনামেডিকেলে (Army Medical) লেফটেন্যান্ট হিসাবে যোগ দেন।

১৯৭০ সালের উত্তাল দিনগুলোতে সিতারা বেগম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সময় তাঁর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা মেজর এ.টি. এম.হায়দার পাকিস্তান থেকে কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন। তিনি কুমিল্লার ৩য় কমান্ডো ব্যাটেলিয়নে যোগ দেন।


১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারীতে সিতারা ও তার ভাই হায়দার ঈদের ছুটি পালন করার জন্য তাদের কিশোরগঞ্জের বাড়িতে যান।কিন্তু সেই সময়ে দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।হায়দার তার বোনকে ক্যান্টনমেন্টে আর ফিরে না যাবার জন্য বলেন।পরবর্তিতে তিনি তার বোন সিতারা ,বাবা-মা ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাঠান।কিশোরগঞ্জ থেকে মেঘালয়ে পৌছাতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়।


যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য সেখানে বাংলাদেশ মেডিকেল (The Bangladesh Medical)নামে প্রায় ৪০০ শয্যার একটি হাসপাতাল ছিলো। ঢাকা মেডিকেলের শেষ বর্ষের অনেক ছাত্র সেখানে ছিলো।ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা সেক্টর-২ এর অধীনে সেখানের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন।


তাঁকে নিয়মিত আগরতলা থেকে ঔষধ আনার কাজ করতে হতো। হাসপাতালে একটি অপারেশন থিয়েটার ছিলো।যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা,বাঙালি ছাড়াও সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লোক জন চিকিৎসাসেবা নিত। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ডঃ সিতারা রেডিওতে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সংবাদ শুনে ঢাকা চলে আসেন।পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে তাঁর ভাই মেজর হায়দায় খুন হলে ডা. সিতারা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগমের অবদানের জন্য তৎকালীন সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভুষিত করে।
# লেখার বিভিন্ন তথ্য মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়