Ameen Qudir

Published:
2016-11-17 23:27:58 BdST

ডাক্তার লাঞ্ছনা,হামলা, ভাংচুর : দায়িত্বহীন মিডিয়াও দায়ী


    

        ভুল রিপোর্টের জেরে মারাত্মক প্রহৃত এক চিকিৎসক

 

 

 

ডা. বাহারুল ইসলাম
_____________________________

সংবাদ প্রকাশে, সংবাদকর্মীরা সত্য উৎঘাটনে দায়িত্বশীল না হলে, রোগীর মৃত্যুতে জনগণ মারমুখী হয়ে ওঠে- হাসপাতাল ভাংচুর , স্বাস্থ্যকর্মীদের শারীরিক লাঞ্ছনা ও প্রমাণের আগেই হাজতবাস হয় ।

চিকিৎসক ও সংবাদকর্মীদের পরস্পর বৈরী সম্পর্কের অবসান প্রয়োজন। তার জন্য উভয়পক্ষকে সহনশীল ও সহিষ্ণু হতে হবে। পেশাজীবী হয়ে উভয়ের মধ্যে এ দূরত্ব প্রতিক্রিয়াশীল বা অপরাধীকে লাভবান করবে।

গণমাধ্যমে চিকিৎসা দুর্ঘটনার সংবাদ প্রকাশের সূচনা লগ্নে যখন উল্লেখ করা হয়, ‘চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু’- তখন জনগণ, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও দেশের রাজনীতি - সেটি বিশ্বাস করে ফেলে। ফলে পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তোলে। পরবর্তীতে ভাংচুর, চিকিৎসক লাঞ্ছনা ও খুনের আসামী হিসাবে থানায় মামলা এবং চিকিৎসকদের হাজতখানায় অবস্থান করতে হয়।

সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সাংবাদিক বন্ধুরা যখন সত্য উৎঘাটনে দায়িত্বশীল না হয়ে কেবল পত্রিকার বহুল প্রচারের বাণিজ্যিকতার দিকে তাকিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে, তখনই চিকিৎসক পেশাজীবীদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য জনগণ মারমুখী হয়ে ওঠে।

চিকিৎসক ও জনগণ কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় এবং আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সর্বাগ্রে তদন্ত-পূর্বক নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। নিশ্চিত হওয়ার পরে সঠিক সংবাদ প্রকাশ হওয়াই সমীচীন ।রাষ্ট্র তখনই কেবল অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারবে।

‘চিকিৎসা অবহেলায়’ রোগীর মৃত্যু হলে – অবহেলা ‘চিকিৎসকের’ নাকি ‘চিকিৎসা ব্যবস্থা’র – এটি নির্ধারিত হওয়ার পূর্বেই ‘চিকিৎসাব্যবস্থা’ আড়াল হয়ে কেবল ‘চিকিৎসকের অবহেলা’ সংবাদ প্রকাশিত হলে কখনও কখনও সত্য চাপা পড়ে ।

চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয় তাতে রোগীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। কেবল চিকিৎসকের জ্ঞান ও ইচ্ছায় তা ঠেকানো যায় না। এ অবস্থায় সংবাদ মাধ্যম কেবল চিকিৎসককে অপরাধী করে সংবাদ প্রকাশ করলে বিবেকের তাড়নায় চিকিৎসক কোথায় দাঁড়াবে?

তথ্য প্রযুক্তির যুগে সংবাদ প্রকাশ একটি শক্তিশালী মাধ্যম। চিকিৎসা ব্যবস্থাও একটি শক্তিশালী মাধ্যম। উভয় মাধ্যমে দুই শ্রেণীর পেশাজীবীই কাজ করে থাকে। অনেক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিক্রিয়াশিলতার মধ্য দিয়ে উভয় পেশাজীবীকে কাজ করতে হয় তা পরস্পরের জানা। তা সত্ত্বেও চিকিৎসক ও সাংবাদিক উভয়ে পরস্পরের বান্ধব না হয়ে বৈরী হলে প্রতিক্রিয়াশীলরাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানাধীন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ত্রুটি বিচ্যুতি বিশদভাবে অবহিত হয়ে কেবল 'চিকিৎসকের অবহেলা' প্রমাণিত হলেই এ সংবাদ প্রকাশে কোন বাঁধা থাকবে না। পেশার, রাষ্ট্রের , রাষ্ট্রের চিকিৎসার ও সাংবাদিকতা বিকাশের স্বার্থে উভয়কে পারস্পরিক ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে সঠিক কাজটি করা ও সত্য প্রকাশে অনুরোধ রইলো।

কেবল -- ‘চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু’ – একঘেয়েমি ও পক্ষপাতিত্বমূলক সংবাদ পরিবেশনে চিকিৎসকদের মাঝে ক্রোধ, অবিশ্বাস ও অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্রোধ প্রশমনের দায়িত্ব সংবাদ কর্মীদেরই পালন করতে হবে। সেই সাথে চিকিৎসকদেরকেও সংবাদকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আস্থাশীল হতে হবে। চিকিৎসকরা যেমন মানুষের জন্ম, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার রক্ষা কবজ তেমনি সংবাদ কর্মীরাও রাষ্ট্র এবং সমাজের দর্পণ ও বিবেক।

উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াসেই অসত্য দূর হবে, সত্য প্রকাশিত হবে। প্রগতির চাকা এগিয়ে যাবে। কেবল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, মানবতাবাদী কল্যাণকামী রাষ্ট্র সৃষ্টি হবে। চিকিৎসক ও সাংবাদিক সকলের প্রতি ভাল-থাকার শুভেচ্ছা।

 


__________________________


লেখক ডা. বাহারুল ইসলাম । প্রখ্যাত চিকিৎসক । রোগীদরদী মানবসেবী । সুলেখক । সুবক্তা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়