Ameen Qudir

Published:
2018-12-12 05:11:19 BdST

জেগে থাকা অবস্থায় আমরা খেয়েই চলেছি: বেড়েই চলেছে রোগ ব্যাধিও


 

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_____________________________

হার্টের অসুখ, আলঝাইমার্স ডিমেনশিয়া, T2 ডায়বেটিস, লো সেরাম টেস্টোস্টেরন, পিসিওডি,(PCOD) ফ্যাটি লিভার, মিগ্রেন, অস্টিও আর্থ্ররাইটিস, স্ট্রোক, স্থূলতা বা মেদবাহুল্য, এমনকি ক্যানসার, এই সব অসুখ ই অধিক ইনসুলিন ক্ষরণের সঙ্গে জড়িত।
অবাক হবেন না। এইসব ই প্রমাণিত।
আমাদের ভুল জীবনশৈলী ই এর কারণ। জেগে থাকা অবস্থায় আমরা খেয়েই চলেছি। খাদ্য এখন পর্যাপ্ত, সুলভ, সুস্বাদু।
গোদের ওপর বিষফোড়ার মত এর সঙ্গে আছে বিভিন্নভাবে তামাক ও তামাকজাত পদার্থের ব্যবহার।
শুধু কারণ জেনে তো লাভ নেই, যদি না আমরা এর কিছু নিরাময় অন্তত করতে পারি।
প্রথম টিই হলো ওজনবৃদ্ধি ও মেদাধিক্য। সাধারণত অবহেলিত বা সৌন্দর্য সচেতন দের ক্ষেত্রে লিপোসাকশন কিংবা জিম এ গিয়ে ক্যালরি খরচ করা ব্যায়াম করা। তবে এইগুলি সবই সাময়িক। কারণ চিরকাল ব্যায়াম করে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
আমরা মূলেই ফিরি বরং।
আমাদের শরীরে দু রকম মেদ আছে
ব্রাউন ফ্যাট ও হোয়াইট ফ্যাট। এই দুরকম ফ্যাটে একে অপরে পরিবর্তিত হয় কিন্তু । এর মধ্যে তুলনামূলক বদ ফ্যাট হলো সাদা ফ্যাট। বাদামী ফ্যাট তুলনায় ভালো। শিশুর জন্মের পরে তার শরীরে প্রচুর থাকে এই বাদামী ফ্যাট। এজন্য দেখবেন একেবারে শিশু, শীতকালে ঠাণ্ডা জলে স্নান করে উঠলে তেমন বা আদৌ কেঁপে ওঠে না। কারণ এই বাদামী ফ্যাট নিজে ধ্বংস হয়ে তাপ উৎপন্ন করে। যতো বয়স বাড়ে, এই বাদামী ফ্যাট কমতে থাকে, এবং বয়ঃসন্ধিকালে যৎসামান্য হয়ে যায়। বাড়ে সাদা জমাট ফ্যাট। এর লয় বা ক্ষয় প্রায় নেই।
আগেও লিখেছি হয়তো, লিভার বা যকৃৎ কে বাদ দিয়ে রক্তক্ষরা ( Endocrine) বা বহিঃক্ষরা ( Exocrine) কোনরকম বিপাকীয় কাজই সম্ভব নয়। অথবা অন্যভাবে বললে লিভার টি বাদ দিয়ে বাঁচাই সম্ভব নয়।
আমরা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় Acetyl - CoA কোথা হতে আসবে সেটিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থির করে লিভার, আমাদের অজ্ঞাতে। লিভার গ্লুকোজ থেকেও এই Acetyl - CoA তৈরী করে, করে ফ্যাট ( লিপিড) থেকেও। যখন যা সহজলভ্য।
যদি ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকে তখন এই ACA লিপোজেনেসিস করে, বা আরো সাদা ফ্যাট তৈরীতে সাহায্য করে।
আর ইনসুলিনের মাত্রা কম হলে ও গ্লুকাগন বেশি হলে এই ACA থেকে তৈরী হয় কিটোন। এর মধ্যে বিটা হাইড্রক্সি বিউটরিক অ্যাসিড ই প্রধান। অ্যাসিটোন ও আছে বৈকি। এইগুলো সাদা ফ্যাট কে বাদামী ফ্যাটে পরিবর্তিত করে। এবারে মিটোকন্ড্রিয়াল কার্যকারিতা বাড়িয়ে, শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়ার হার বাড়িয়ে, এই বাদামী ফ্যাট থেকে তাপ উৎপন্ন করে, এবং তার সঙ্গে কিটোন বডি বা অ্যাসিটোন এর নিষ্কাষণ ৫-২০ গুণ বাড়িয়ে দেয়, আমাদের শ্বাসের সঙ্গে এবং আমাদের মূত্রের সঙ্গে। মনে রাখুন ইনসুলিনের মাত্রা রক্তে বেশি থাকলে এটি আদৌ হবে না। এভাবেই শরীরের পাওয়ার ব্যাংক, বাদামী ফ্যাট গলে যাবে শক্তির যোগান দিতে দিতে।
তাহলে মেদাধিক্য কমানোর প্রথম এবং প্রধান শর্ত ই হোল ইনসুলিনের ক্ষরণ কমানো।
সেটি সম্ভব কম কার্ব, বেশি প্রোটিন,বেশি ফ্যাট খাদ্য খেয়ে। এবং বারে কমবার খেয়ে।
আমাদের শরীর এক বিবর্তনের নিয়মানুযায়ী সব রকম অবস্থার সঙ্গেই নিজেদের কে মানিয়ে নিতে পারে। প্রথমদিকে অস্বস্তি হলেও পরে বেশিবার খেতেই অস্বস্তি হবে।
হিন্দিতে একটি প্রবাদ আছে -- " কম খাবে, না মরে, না মুটাবে "। এই হিন্দি উপভাষা টি বাংলার এতই নিকট যে এর আর অনুবাদের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না ।
_____________________________


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়