Ameen Qudir

Published:
2018-12-06 23:08:46 BdST

কথিত নকলের জন্য বাবা মাকে চরম অপমান এবং টিসি প্রদান উদ্দেশ্য প্রনোদিত মনে হয়



ডা শিরীন সাবিহা তন্বী
____________________________

তখন থ্রি বা ফোর এর ছাত্রী আমি।শহরের সবথেকে নামকরা এবং ঐতিহ্যবাহী স্কুলের ছাত্রী।যতটা না ভাব ছিল তার থেকে ভয়।

টিফিন পিরিয়ডে বকুল আপা গেটের কাছে আম গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে ঐ সময়ে গেটের বাইরে নাস্তা করতে যাওয়া কিংবা ছেলেদের সাথে দেখা করতে যাওয়া আপুদের তাড়া করতেন।
ঐ তাড়া খাওয়া টাকেই খুব ভয় লাগত।

একটু বড় হতেই বুঝে গেছি,শিক্ষকদের অপছন্দের কাজটি স্বযতনে এড়িয়ে গেলে ভয়ের কিছু নাই।
বরং পরিবারের পরে সবথেকে আপন বা সবথেকে আমার ভালো চায় যারা তারা আমার শিক্ষক।

একটা শিশু বড় হতে গিয়ে যতটা সময় তার পরিবারের সঙ্গে কাটায়, তার থেকে বেশি সময় কাটায় তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষক যদি আপনজন হয়ে না উঠতে পারে, শিক্ষক যদি হন কেবল ই একজন ব্যবসায়ী যিনি লাভের আশায় খাদ্যে ভেজাল মিশান কিংবা কম দামী দ্রব্য টি অধিক মুনাফাতে বিক্রি করেন - তাহলে আপনার আমার অতি আদরের কোমলমতি শিশুর জীবন টা যখন তখন মৃত্যু মুখে পতিত হলে অবাক হবার কিছু নাই।

আমাদের সন্তান চাই না।খুব ভালো ফলাফল করা রোবট চাই। আমরা অপারগতাকে মেনে নিতে পারি না। পরিবার থেকে ভালো ফলাফলের প্রেসার থাকে। নৈতিকতার শিক্ষা থাকে না।

স্কুল থেকে ভুলের জন্য মহাশাস্তির ব্যবস্থা থাকে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শূধরে যাবার সুযোগ থাকে না।
ছাত্র জীবনে নাইনে পড়া বাচ্চা মেয়ে ভুল বা অপরাধ করতেই পারে।আমরা সবাই করেছি।

গার্লস স্কুলের রাগী ম্যাডামদের বোম্বাই মরিচ/ছিচকা মরিচ নামকরন, ক্লাস পালানো তো রোজকার ইভেন্ট ছিল।
ক্লাসে অনেকে টুকটাক নকল করেছে। শেমিজে লিখে নিয়েছে। এদের শাস্তি পেতে দেখেছি। কিন্তু বাবা মার চরম অপমান /TC প্রদান টা উদ্দেশ্য প্রনোদিত মনে হয়।

আত্মহত্যা কখনোই সঠিক পথ নয়। অরিত্রী যদি শক্ত চিত্তে এই অপমানকে হজম করে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল করে এই অপমানের উপযুক্ত জবাব দিতো সেটাই হিরোচিত হতো। উপভোগ্য হতো।

কিন্তু, ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবার পর ওর আদৌ কি সুযোগ ছিল সেই চ্যালেঞ্জ নেবার?
আর তাহলে এত নামী দামী স্কুল কি তার এক সন্তানের ভবিষ্যৎ শেষ করে যেন ফাঁসির হুকুম ই দিয়ে দিলো - এইটাই ভাবনার বিষয়।

ছাত্র পড়তে তো শিক্ষক নিয়োগ হয়। পুলিশ নয়। পুলিশ জানে চোর/বাটপার/অপরাধী কেমনে দমন করতে হয়। শিক্ষক কে জানতে হবে দুষ্ট বাচ্চাদের কি করে সোজা করতে হবে। কি করে ভুল শুধরাতে হবে।

মানুষ মাত্রই ভুল করে। রোবট ভুল করে না। আজকাল সবাই কেবল রোবট শিশু চায়। রক্ত মাংসের মানুষ চায় না।নিজেদের তৈরি করা দুর্দান্ত গতিময় জীবন পথে নিজেদের মূল্যবান সন্তান রাই হোঁচট খাচ্ছে।
সময় এসেছে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক - প্রতেকের নিজেকে মূল্যায়ন করবার।

তবেই কেবল বাকী অরিত্রী দের স্বেচ্ছা ফাঁসি রোধ করতে পারব। নইলে এই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে। নিজেরাই আর নিজেদের ক্ষমা করতে পারব না।
_____________________________

ডা শিরীন সাবিহা তন্বী । সুলেখক। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
.

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়