Ameen Qudir
Published:2018-10-30 16:34:33 BdST
আয় খুকু আয়
অধ্যাপক ডা.অনির্বাণ বিশ্বাস
_________________________________
আমার দাদুর বাড়ির দোতলায় একটা ছোট্ট ঘর ছিল। গুদামঘর টাইপের আর কী। আদ্যিকালের তেপায়া চেয়ার,ফুলদানি, পুরনো ম্যাগাজিন(সবুজপত্র,শুকতারা),পুরোনো খবরের কাগজ, রঙের ব্রাশ, আধখোলা তেলের শিশি, রঙচটা পাপোশ...এইইসব। আর ছিল একটি কলের গান।হাত দিয়ে হাতল ঘুরিয়ে রেকর্ড চালাতাম।মনে আছে ওতে আমি যুথিকা রায়, কানন দেবির গান শুনতাম।ছোটথেকেই এঁচড়ে পাকা ছিলাম কিনা !
এসব হত, বৃষ্টির দিনে ।আমি ডাঁই করা জঞ্জালের দিকে তাকিয়ে তখন অনেক উচ্চমার্গীয় ভাবনাচিন্তাও করতাম।সত্যি বলছি,একদিন মনে হয়েছিল জীবনটাও এরকম... আয়ুর সিঁড়িঘর। একধাপ থেকে অন্যধাপে যেতে যেতে কতকিছু জমে যায়..কান্না কেবলি ঝরে, বাইরের বৃষ্টির মত !
মানুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাও কঠিন কাজ, যেহেতু সম্পর্ক আটকে রাখা যায় না,নিত্য পরিবর্তনশীল। বেঁচে থাকলে বদলায় সে, মরে গেলে মিলিয়ে যায়। আর হারিয়ে গেলে?
জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি যেদিন ওপারে চলে গেল,কেউ বিশ্বাস করবে কিনা জানি না,আমার তাঁর হোস্টেলের ঘরে ঘুরে ঘুরে বিড়ির মোথা খাওয়ার কথা মনে আসছিল ! কতো কথা জমে আছে, হয়নি বলা.. হবেও না আর কোনদিন ।
পিজি করার সময় ,একদিন অনেক ধোঁয়াশায়, অপেক্ষা এবং প্রতীক্ষায়-- বঙ্গভাষার দুটো শব্দকেই কাঁচকলা দেখিয়ে সুন্দরী বেলা পাঁচটার বদলে এলেন সন্ধে সাতটায়। এবং ছলছল চোখে জানালেন, তাড়াতাড়ি তাকে চলে যেতে হবে,কাল কেস প্রেজেন্টেশন আছে। কথা শেষ হলো,দ্রুত, নিরুত্তাপভাবে।আমি নির্বিকার।বললাম, ঠিকাছে, এবারে যা..(অতো সহজে ইমোশন দেখাব, বড় হয়েছি না?) চোখ টিপলাম।
এখনকার আধুনিকতায় আবেগ দেখানোর সুযোগ অনেক। আর্চিস গ্যালারি, ঘুরে ঘুরে মলে উঁকি দিতেই চোখে পড়বে কার্ড, চাবির রিং, হাবিজাবি।আজকের সময় হলে, সেই দেড়বছর ছুঁইছুঁই কল্পনার ঘর ছেড়ে আসার সময় কোন মেমেন্টোতে টুকরো নোটে লিখত-- উইল মিস ইউ অনি।
মনে হয়,আমরা আসলে মিস করি অভ্যস্ততাকে। অনভ্যস্ততায় অভ্যস্ত হওয়াটা কঠিন কাজ।
সম্পর্ক, সে যেমনই হোক না কেন ধরনে-- সারাজীবনই একই রঙের থাকে না। শাড়ির পাড় ,কাজকরা পাঞ্জাবীর গলার মতো অনেকটা। সুতো বুনতে হয় রঙ মিলিয়ে, অযত্নে ফেঁসে যেন না যায় তাতে মনোযোগ দেওয়া চাই, পোকায় কাটা ঠেকাতে দিতে হয় ন্যাপথলিন । আর এক্কেবারে গুঁড়িয়ে যাওয়ার আগে ফেলে দিতে হয় বাইরে।
'Better to get hurt by the truth than comforted with a lie.'
দেরিতে বুঝতে শিখেও বড় বড় চোখ আর বোকা মুখে আমি তবু এখনো মানুষ দেখি। কী অসাধারণ হতে পারে একেকটা মানুষ, কী মায়াময় হতে পারে একটা মানুষ, কী প্রচণ্ড ক্লীব..নোংরাও হতে পারে সেই মানুষ-ই!
১৭ মাসের শিশুর শরীরকেও ভোগ্য ভাবা যায় তবে? জানোয়াররা ছিঁড়ে খায় ১১ বছরের বাচ্চা একটা মেয়েকে ! সংসার বাঁচাতে মা- ভাই
পর্যন্ত বলেন-- হিশশশ, চুপ চুপ! স্বামী তো !
সত্য বড়ই কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম বললেই আয় খুকু আয় সুর এড়ানো সহজ নয় ।
জীবন যদিও বহমান,তবে অবিমিশ্রিত সুখ বলে পৃথিবীতে কিছু নেই।
লাইফ ইজ নট এনটায়ারলি বিউটিফুল।
____________________________
-অধ্যাপক ডা.অনির্বাণ বিশ্বাস । কল্যাণচিন্তক। কবি। সুলেখক।
আপনার মতামত দিন: