Ameen Qudir

Published:
2018-09-11 16:16:40 BdST

মানসম্মত মেডিকেল শিক্ষা :পর্ব-৪মেডিকেল একাডেমিক ক্যালেন্ডার এবং চতূর্থ বর্ষের তথা কথিত স্ট্যাডি ট্যুর


মেডিকেল ট্যুর মানে শিক্ষার অংশ। কিন্তু চিড়িয়াখানা ঘোরাঘুরি কোন কাজে লাগবে তাদের! প্রতিকী ফাইল ছবি

 

ডা. আজাদ হাসান
_______________________________


মেডিক্যাল শিক্ষা কারিকুলাম প্রসংগে আরো দু'টো প্রসংগ আলোচনা না করলে তা অপূর্ণ রয়ে যাবে, আর তা হলো একাডেমিক ক্যালেন্ডার এবং চতূর্থ বর্ষের তথা কথিত স্ট্যাডি ট্যুর।
প্রথমে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রসংগে আশা যাক। প্রতিটি শিক্ষা বর্ষের শুরুতে যদি ছাত্রদের হাতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তুলে দিলে ছাত্ররা বুজতে পারে তাদের পাঠ্যক্রম কেমন হবে এবং শিক্ষকদেরও দায়বদ্ধতা বাড়ে। এতে করে ছাত্ররা যেমন পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী হবে তেমনি সম্মানিত শিক্ষকরাও ছাত্রদের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হবেন।

এবারে ৪র্থ বর্ষ এমবিবিএস কোর্সে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধীনে হাইজিন ট্যুর বা স্টাডি ট্যুর নামে যে ট্যুর এর ব্যবস্থা আছে সে প্রসংগে আসা যাক। যার উদ্দেশ্য ছিলো, আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সব মিল, কল-কারখানা আছে সেখানে যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাদের কি কি "হেলথ হ্যাজার্ডস্" হতে পারে, সেগুলো প্রতিরোধ কল্পে কারখানা কর্তৃপক্ষ কি ধরনের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা যথেষ্ট কিনা? এ সব বিষয়ে প্রাকটিক্যাল অভিজ্ঞতার জন্য বস্তুতঃ এই ট্যুরটি, এবং ট্রেনিং শেষে ফিল্ড ভিজিটের উপর একটি রিপোর্ট তৈরী করতে হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় সম্প্রতি হাইজিন ট্যুরের নামে ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের দেশের কল কারখানা ভিজিট করার পরিবর্তে বিদেশ ভ্রমনে বেশী আগ্রহী যা কিনা স্ট্যাডি ট্যুরের পরিবর্তে প্লেজার ট্যুরে পর্যবসিত হয়েছে। এতে করে যে সব ছাত্র ছাত্রী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার হতে মেডিক্যাল কলেজে পড়তে আসে তাদের জন্য খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিরর উদ্ভব করে। আমি মেডিক্যাল কলেজে অনেককে দেখেছি, যারা প্রাইভেট ছাত্র পড়িয়ে নিজের পড়াশুনার খরচ প্লাস হোস্টেলের খরচ চালাতো, একবার ভাবুন তো সেই ছাত্রটির কথা। যদিও এই ট্যুরের জন্য সরকারী বরাদ্দ আছে তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।
অথচ ঢাকা শহরের কাছেই সাভারে বেশ কয়েকটি মান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠিত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী রয়েছে, যে গুলো দেখলে আমাদের দেশে কিভাবে মান সম্মত ঔষধ তৈরী করা হয় সে সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেমন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, সার ফ্যাক্টরি রয়েছে। সিলেটে যেমন সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। খুলনায় যেমন পেপার মিল, জুট মিল রয়েছে, এভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সব ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে সে গুলো আগে দেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সুতরাং আমাদের মেডিক্যাল কারিকুলাম প্রণেতাদের এ বিষয় সমূহ ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।

মান সম্মত মেডিক্যাল শিক্ষার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো উপযুক্ত ক্লাস রুম:

মেডিক্যাল শিক্ষা আর দশটা শিক্ষা পদ্ধতি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই গতানুগতিক ধারার ক্লাস রুমে পূর্ণাংগ ভাবে এবং মান সম্পন্ন শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয় বিধায় এর জন্য আলাদা আলাদা এবং বিশেষ মান সম্পন্ন শ্রেণী কক্ষের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন "লেকচার গ্যারীর" জন্য অডিও ভিজুয়েল এইডস্, ওভার হেড প্রজেক্টর, উন্নত মানের মাইক্রোফোনসহ প্রয়োজন সাউন্ড প্রুফ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। টিউটোরিয়াল ক্লাস এবং ডেমোন্সট্রেশন ক্লাসের জন্য আলাদা আলাদা শ্রেণী কক্ষ, তা ছাড়া এনাটমীর জন্য স্বতন্ত্র ডিসেকশন হল, হিস্টোপ্যাথলজির জন্য স্বতন্ত্র ল্যাব, ফিজিওলজির প্রাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য আলাদা ল্যাব ও টিউটোরিয়াল রুম, বায়োকেমিস্ট্রি প্রাকটিক্যালের জন্য আলাদা ল্যাব, প্যাথলজির জন্য স্বতন্ত্র টিউটোরিয়াল ক্লাস রুম ও ল্যাব। পোস্ট মোর্টেম দেখার জন্য আলাদা শ্রেণী কক্ষ। তা ছাড়া ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী বা কেস নিয়ে আলোচনার জন্যও প্রতিটি ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে টিচিং কর্নার থাকা আবশ্যক। তাছাড়া প্রয়োজনে ফাইনাল পরীক্ষার আগে বিশেষ ক্লাস কনডাক্ট করার জন্যও টিচিং হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোরে প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট-এর একটি করে ক্লাসরুম থাকা আবশ্যক।

প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ:
ইতিপূর্বে মেডিক্যাল শিক্ষার জন্য কি ধরনের ক্লাসরুম এবং এগুলোর অবস্থান কেমন হওয়া উচিত তা আমি আলোচনা করেছি। এবার ক্লাস রুম বা শ্রণী কক্ষে কি ধরনের শিক্ষা উপকরণ থাকা আবশ্যক তা আলোচনা করছি।
ইফেক্টিভ শিক্ষারর জন্য প্রয়োজন "স্মল গ্রুপ" ডিসকাশান। তাই প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে এক বছরে ১২০-১৩০ জনের বেশী ছাত্র ভর্তি করা উচিত নয়। কেননা, এই সব ছাত্রদেরকে আবার টিউটোরিয়াল ক্লাস এবং প্রাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য ৩০-৩২ জনের গ্রুপে ভাগ করতে হবে। নতুবা এনাটমির ডিসেকশন রুমে ডেড বডি দেখার জন্য, হিস্টোপ্যাথলজি প্রাকটিক্যাল ক্লাসে মাইক্রোস্কোপে স্লাইড দেখার সময়, তা ছাড়া ফিজিওলজি কিংবা বায়োকেমিস্ট্রি অথবা প্যাথলজি প্রাকটিক্যাল ক্লাসে দারুন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এনাটমি ডিসেকশন হলের জন্য পর্যাপ্ত ডেড বডি এবং ভিসেরার সরবরাহ, হিস্টোপ্যাথলজির জন্য পর্যাপ্ত স্লাইড এবং মাইক্রোস্কোপ, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্র এবং প্যাথলজির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব থাকা আবশ্যক।
বস্তুতঃ এখানে আমি যেসব বিষয় উল্লেখ করেছি তা যে কোনো মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার জন্য পূর্ব শর্ত। এই শর্ত পূরণে কোনো মেডিক্যাল কলেজ ব্যর্থ হলে সেই মেডিক্যাল কলেজকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া উচিত নয় আর যদি ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে থাকে তা হলে উক্ত রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়া উচিত।

(চলবে)
____________________________

ডা. আজাদ হাসান।
সিওমেক
২১ তম ব্যাচ।
ই-মেইল:
[email protected]

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়