Ameen Qudir

Published:
2018-09-05 17:04:33 BdST

বহুকাল পুর্বে রক্তে বসবাস করত এক সালমান খান ওরফে পাতা সালমান


উপমহাদেশের মহানায়ক সালমান খান ও তার লাখো কোটি ভক্তর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই কমিক ছবি প্রকাশ করা হল। বিশ্বখ্যাত সেলিব্রেটিদের নিয়ে এধরণের কমিক ছবির রেওয়াজ প্রচলিত। বা/স

 

 

 

ডা. রাজীব হোসাইন সরকার
________________________________


বহুকাল পুর্বে রক্তে বসবাস করত এক সালমান খান।
সবাই তাকে “পাতা সালমান” বলে ডাকত। ডাকার পেছনে লজিক আছে। লজিক বেশ হাস্যকর।
পাতা সালমানের আসল নাম-মনোসাইট। তার বাবার নাম, হাড়হাড্ডি (অস্থিমজ্জা)।
জন্মের পর মনোসাইটের ইচ্ছে হল- মানবদেহের জন্য বিশেষ অবদান রাখবে। নিজেকে উৎসর্গ করে ফেলবে।
কিন্তু আকারে ছোট ও সংখ্যায় কম (৫%) হওয়ায় তেমন অবদান রাখতে পারছিল না। বিপদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতেও পারত না। শত্রুদের সামান্য ধাক্কা খেলেই পড়ে যেত। পাতার মত উড়ে যেত। তখন বাকী রক্তকনারা তাকে ‘পাতা সালমান’ বলে ডাকা শুরু করল।
সে সময় রক্তে বসবাস করত এক “উপদেশ বুড়ো”। একশত এক টাকার বিনিময়ে সবাইকে উপদেশ দিত। মনের দুঃখে পাতা সালমান (মনোসাইট) চলে গেল ‘উপদেশ বুড়োর কাছে।
পাতা সালমান (মনোসাইট) বলল,
‘বুড়ো, আমাকে পথ দেখান?’
‘কী হয়েছে বৎস? তোমাকে এত অস্থির লাগছে কেন?’
‘আমি লজ্জিত। মর্মাহত। জন্মের পর থেকেই আমি চেষ্টা করেছি, মানবদেহের জন্য বিশেষ অবদান রাখতে। কিন্তু পারছি না।’
‘কেন পারছ না?’
‘কারণ আমার সাইজ ছোট। দেখতেও সুন্দর নয়। মুখে ব্রণের দানা না থাকলেও (দানাহীন), দেখতে কিডনির মত (বৃক্কাকার)।’
‘চেহারা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার নয়। আর কী সমস্যা বলো?’
‘আমি রক্তে নামলে স্রোতের তোড়ে ভেসে যাই। দাঁড়াতে পারি না। আমাকে পথ দেখান (মনোসাইট রক্তপ্রবাহে ভেসে বেড়ায়)।’
বুড়ো কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। এরপর পাতা সালমানের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
‘আমি তোমাকে এক শর্তে উপদেশ দিতে পারি। আমার শর্তের মূল্য একশত এক টাকা।পারবে দিতে?’
‘এই নিন একশ একশত এক টাকা। এবার আমাকে উপদেশ দিন।’
হুজুর গম্ভীর মুখে বলল,
‘গৃহ ত্যাগ করো।’
‘এটা উপদেশ?’
‘হ্যা।’
‘এ কেমন উপদেশ। আমাকে ভালো উপদেশ দিন।’
‘এটাই ভালো উপদেশ।’
‘মানলাম। কিন্তু আমাকে আরেকটা উপদেশ দিন।’
‘সম্ভব নয়। নতুন উপদেশের জন্য একশত এক টাকা দাও।’
পাতা সালমান (মনোসাইট) বাড়িতে ফিরে আসল। তার কাছে একশত এক টাকা নেই। অনেক পরিশ্রম করে সে টাকা সংগ্রহ করল। আবার ফিরে গেল উপদেশ বুড়োর কাছে।
‘বুড়ো, আমাকে উপদেশ দাও। এই নিন আপনার একশত এক টাকা।’
বুড়ো কাঁপতে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
‘যাহাই পাইবা, তাহাই খাইবা।’
পাতা সালমান (মনোসাইট) বিরক্ত হয়ে বলল,
এসব কীসের উপদেশ? আমাকে ভালো উপদেশ দিন, যেন মানবদেহের কাজে লাগতে পারি।’
‘নতুন উপদেশ পেতে চাইলে, একশত এক টাকা লাগবে।’
পাতা সালমান (মনোসাইট) আবার বাড়িতে ফিরে গেল। অন্যের কাজ করে দিয়ে একশত এক টাকা জমাল। টাকা নিয়ে ফিরে আসল উপদেশ বুড়োর কাছে।
‘এই নিন একশত এক টাকা। উপদেশ দিন। এবার ভালো উপদেশ দিতেই হবে।’
বুড়ো ঝিমুতে ঝিমুতে বলল,
‘মশা মারো।’
বিরক্ত, বিব্রত, লজ্জিত ও অসহায় পাতা সালমান (মনোসাইট) বুড়োর সান্নিধ্য ত্যাগ করল। বাড়িতে বাবার কাছে (অস্থিমজ্জার স্টেমকোষ) ফিরে তার মন খারাপ হয়ে গেল। নিজের অপারগতা ও দূর্বলতার জন্য লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত টিকতেনা পেরে রাস্তা ধরল। রক্তনালীপথে।
রক্তে ভাসতে ভাসতে অজানার পথে পাড়ি জমাল। মাত্র ১০-২০ ঘন্টা পর সে কৈশিক জালিকা ভেদ করে এক নতুন জগতে চলে আসল। জগতের নাম- “টিস্যু”ওয়ার্লড।
যাত্রাপথে তার এত ক্ষুধা লাগল যে যা পেত তাই খেতে শুরু করল। খেতে খেতে সে অবাক হয়ে দেখল তার শরীর ফুলতে শুরু করেছে। রক্তে থাকা অবস্থায় যা ছিল, টিস্যুতে এসে তার আকার পাঁচগুন (৫গুন) আকার বেড়েছে। আকারে বড় হওয়ায় পাতা সালমান ট্যাগ ঘুচে গেল। খাদক হিশেবে নতুন নাম হল- বিগ ইটার (Big Eaters) বা ম্যাক্রোফেজ(Macrophage)।

[Note: রক্তের মনোসাইট টিস্যুতে আসলে ম্যাক্রোফেজ বলে। মনোসাইট অপেক্ষা ম্যাক্রোফেজ আকারে ৫ গুন বড়]

এবার বুড়োর প্রতি খানিকটা রাগ প্রশমিত হল ম্যাক্রোফেজের। একশত এক টাকার প্রথম ও দ্বিতীয় উপদেশ ভালোই কাজে লেগেছে। কিন্তু তৃতীয় উপদেশ কাজে লাগার কোন লক্ষণ দেখা গেল না।
ম্যাক্রোফেজ আনন্দে আনন্দে মানবদেশের এক টিস্যু থেকে আরেক টিস্যুতে ঘুরে বেড়াতে শুরু করল। নদী যেভাবে ভারতে গঙ্গা, বাংলাদেশে এসে নাম বদলে পদ্মা হয়েছে, সেভাবেই ম্যাক্রোফেজ বিভিন্ন টিস্যুতে গিয়ে বিভিন্ন নাম ধারণা করা শুরু করল। যেমন, মস্তিষ্কে মাইক্রোগ্লিয়া, যকৃতে কুফার কোষ, লসিকায় ডেনড্রাইটিক কোষ ইত্যাদি।
যেখানেই বাইরের জীবানু দ্বারা আক্রমণ হত, সবার সামনে গিয়ে ম্যাক্রোফেজ দাঁড়িয়ে যেত। একাই একশ হয়ে যুদ্ধ করত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে। [Note:একটি ম্যাক্রোফেজ ১০০ টি ব্যাকটেরিয়া খেতে পারে]
যুদ্ধের সময় ক্লান্ত হলে সে বেশি খেত। অতিরিক্ত খাই খাই স্বভাবের কারণে সে মাঝেমাঝে লোহিত রক্তকনিকা, ছত্রাক এবং ম্যালেরিয়ার জীবানুকেও খেয়ে ফেলত।
একেকবার যুদ্ধ করে সে ক্লান্ত হত। যুদ্ধের পর ক্লান্তি ও আঘাত নিয়ে সর্বোচ্চ বেঁচে থাকত মাত্র এক মাস। [ফ্যাগোসাইটোসিসের পর ম্যাক্রোফেজ আরো একমাস বাঁচতে পারে]
এই সময়টা সে কাঁটাত মশা মেরে। [ম for মশা, শা for সাইটোকাইনঃ ম্যাক্রোফেজ সাইটোকাইন ক্ষরণ করে। সাইটোকাইন বিভিন্ন কোষকে একত্রিত করে যুদ্ধাহত ক্ষত কোষগুলোকে নিরাময় করে]।

মানবদেহের প্রতিরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য, নিউট্রোফিল মানসিক প্রশান্তিতে বসবাস করতে পাগল। অবসরে তার উপদেশ বুড়োর কথা মনে পড়ত। তিন উপদেশের কথা মনে পড়লে বুড়োর প্রতি সম্মানে মাথা নত হয়ে আসত। হাস্যকর তিন উপদেশ তারমত নগন্য ও নাদান “পাতা সালমানকে বিগ ইটার্স বা ম্যাক্রোফেজে রুপান্তর করতে পারে, অবিশ্বাস্য মনে হত।
_______________________________

 

-ডা রাজীব হোসাইন সরকার । সুলেখক।

রেফারেন্সঃ গাজী আজমল
অধ্যায়ঃ ইমিউনিটি / মানবদেহের প্রতিরক্ষা
টপিকঃ নিউট্রোফিল

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়