Ameen Qudir

Published:
2018-07-20 18:31:05 BdST

কলকাতার মেডিকেল প্রিন্সিপাল ডা.উচ্ছল ভদ্রর অসুস্থতা নিয়ে পত্রিকায় ঘরে বানানো খবর এবং..


অধ্যক্ষ ডা.উচ্ছল ভদ্র

 


ডা.রেজাউল করীম
__________________________


মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল উচ্ছল ভদ্রের অসুস্থতা নিয়ে যে খবরটি "এই সময়" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা ঘরে বসে বানানো ও সর্বৈব মিথ্যা। উচ্ছলদা অসুস্থ বোধ করতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পুন্যব্রত গুণদা নিজে দাঁডিয়ে থেকে তাঁর হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কয়েকজন ছাত্র কার্ডিওলজিতে গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নিয়ে আসে। তখন ইসিজি করা হয়েছে ও তাঁর শারীরিক অবস্থাও স্টেবল ছিল। খবর পড়ে এরকম ভুল ধারনা হতে পারে যে তাঁর চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি পিজিতে চলে গিয়েছেন। যে যুবকরা দশদিন না খেয়ে লড়ে যাচ্ছে তাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, যেমন উচ্ছলদার অসুস্থতা নিয়েও উদ্বিগ্ন। একটা ছোট্ট গুনগত পার্থক্য আছে- ছাত্ররা তাদের স্যরের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর মিনিটে মিনিটে নিয়েছে, তাদের স্যার "আপনি বাঁচলে বাপের নাম" করে পলায়ন করেছেন। আমরা সবাই চাই তিনি সুস্থ হোন, স্বাভাবিক হোন ও নিজের কাজে যোগ দিন।

উচ্ছলদার অসুস্থতা নিয়ে "এই সময়" পত্রিকায় যে দুজন বিবৃতি দিয়েছেন তাঁদের একজনের সঙ্গে আজ ঘটনাচক্রে দেখা হল। ঘটনার কথা তুলতেই তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন। আমরা অনশন মঞ্চে বসে ছিলাম- তিনি ছিলেন না, অথচ কিভাবে এত সব খবর পেলেন জানার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, তিনি যেভাবে দ্রুত স্থানত্যাগ করলেন,তাঁর সুসংবাদদাতা সঞ্জয়ের আর খোঁজ পেলাম না।
ফেসবুকে দেখছি কেউ কেউ ছাত্রদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে বলছেন। কেউ মনে করতে পারেন যে, ছাত্ররা নতুন হস্টেলে জায়গা দখল করে প্রথমবর্ষের সুকুমারমতি বালকবালিকাদের মস্তক ধোলাই করতে চাইছে।সে সুযোগ না পেয়ে তারা "অনশন আন্দোলন" করছে বলে মনে করলে কিন্তু ভুল করবেন। আসলে কর্তৃপক্ষের বহুমুখী অপদার্থতায় ছাত্ররা হতাশ- ছাত্রদের কাউন্সিলিং না করিয়ে কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছে, একতরফা ভাবে একটি ১১তলা বিল্ডিং একটি বিশেষ বর্ষের জন্য ঘোষনা করে অন্যায় করেছে, সেই এগার তলা বাড়ীতে স্নাতকোত্তর শ্রেনীর ছাত্রদের জোর করে ঢুকিয়ে অন্যায় করেছে, একজন সদ্য পাশকরা অযোগ্য ব্যক্তিকে সুপার ঘোষনা করে ভুল করেছে ও সেই বিল্ডিংয়ে গেস্ট হাউস বানানোর পরিকল্পনা করে অন্যায় করেছে। কর্তৃপক্ষের অসহিষ্ণু ও অনমনীয় মনোভাবে ছাত্রছাত্রীদের আত্মসম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। অনশন শুরু করার আগে প্রায় দশদিন তারা প্রতিবাদ ধর্না চালিয়েছে। কিন্তু বিনা প্ররোচনায় পুলিশ তাদের উপর লাঠি চালিয়েছে। ছাত্ররা কি অনশন ছাড়া অন্য কিছু করতে পারতো? কচিকাঁচারা কবে আর পরিনাম ভেবে কাজ করেছে- তারা আমাদের ঘুমন্ত বিবেক জাগিয়ে তোলার জন্য অপরিনামদর্শীতা দেখিয়েছে। আমরা পরিনামদর্শী-তাই মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ; তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয়ে কেঁপে উঠি। তাই, ফাঁকা ব্যালট দেওয়ার ফরমান পেয়ে মেরুদণ্ড আর বিবেকের লড়াইয়ে বিনিদ্র রাত কাটাই, তারপর সটান আত্মসমর্পন করি। ভুলে যাই, নেকড়ে ও পোশাক পাল্টে গর্দভ চর্মাবৃত হয়ে আসতে পারে-খুর আর থাবা দেখে তাকে চিনতে হয়। নিরীহ মেসেজ হিসেবে যা আসে তা হল আত্মসমর্পনের ফরমান, নিজেকে নি:শেষে বিলিয়ে দেওয়ার গব্বরী হুঙ্কার।
মেডিকেলের এই দুরন্ত, দামাল অপরিনামদর্শী ছেলেরা যদি আমাদের চেনা পথের পথিক না হয় তবে তাদের দোষ দিতে পারি না। তারা যদি শাসকের চোখে চোখ রেখে অসমান্য ঋজুতায় শঠতা আর শয়তানীর মুখোশ খুলতে চায় তাদের দোষ দিতে পারি না। তারা যদি মেডিকেল কলেজের ক্ষুদ্র গণ্ডী ছাড়িয়ে সমাজের দিনবদলের স্বপ্ন দেখতে চায়, তাদের দোষ দিতে চাই না। আমরা পারি নি, তাই তাদের ও পারতে দেব না, নিজের বিবেককে চোখ ঠেরে, সব অন্যায়কে হাস্যমুখে হজম করে, চন্দনপালঙ্কে সুখে নিদ্রা যাওয়ার ব্যবস্থা পাকা করার প্রচেষ্টাকে মহৎ বলে প্রশংসা করতে পারছি না।
বর্তমান অবস্থার দায় প্রশাসনের। ছাত্রদের সব দাবী মেনে নিয়ে দ্রুত তাদের ক্লাসরুমে ফেরত পাঠানোর দায় কর্তৃপক্ষের। যারা কর্তৃপক্ষের হয়ে নিরাপদ দুরত্বে দাঁডিয়ে অদৃশ্য পুতুল খেলা খেলছেন তাদেরও প্রকাশ্যে এসে নিজের দায় স্বীকার করা উচিত। ছাত্রছাত্রীদের জীবন কোন অবস্থাতেই দর কষাকষির বিষয় হতে পারে না। কিন্তু তাদের আবেগকে মর্যাদা দিয়েই গ্রহনযোগ্য সমাধানের রাস্তা বার করতে হবে। সে ব্যবস্থা যত দ্রুত করা যায় ততই মঙ্গল।
__________________________

ডা.রেজাউল করীম । প্রখ্যাত চিকিৎসক নেতা। কল্যাণচিন্তক। কলামিস্ট।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়