Ameen Qudir

Published:
2018-05-17 00:22:48 BdST

'দি লাস্ট ফিউ আওয়ার্স অব গ্রেট লি' : কে এই লি ?




 

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন_______________________

♦আমি লি।পুরো নাম "কি লি"।আম্মু আদর করে ডাকেন "লুলু"।এই লেখা যখন আপনি পড়ছেন,আমি ততক্ষণে হয়তো এই পৃথিবী ছেড়ে পরপারের দিকে যাত্রা শুরু করেছি।কেবিনে শুয়ে শুয়ে যখন আমি এই লেখা লিখছি,তখন বাইরে সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মেডিকেল বোর্ড বসেছে আমাকে নিয়ে।আমি এক অজ্ঞাত রোগে ভুগছি।শহরের বড় বড় ডাক্তাররা সবাই মিলে তাদের চেষ্টার চূড়ান্ত করে ফেলেছেন,কিন্তু কেউ অসুখ ধরতে পাড়ছেন না।আমার জন্য সবার এই যে এতো চেষ্টা,সে কিন্তু এমনি এমনি না।আমি কি লি,পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছি,অসাধারণ ফলাফল করেছি বরাবরের মতো,আর এইবার তো স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে আমি কোর্স শেষ করেছি,শুধু থিসিস পার্ট বাকি।আর এই থিসিস করতে যেয়েই সব ঝামেলার শুরু।

আচ্ছা ভেঙেই বলি।আমার থিসিসের বিষয় ছিলো "হিউম্যান ব্লাডঃটেস্ট ডিপেন্ডস অন ব্লাড গ্রুপ।"খুব স্পর্শকাতর বিষয়,সবাইকে এই বিষয়ে কাজ করতে দেয়া হয় না।কারণ রক্তের স্বাদ সঠিকভাবে বুঝতে পারা সহজ ব্যাপার না,সবাই পারে না।আর শুধু তো স্বাদ নিলেই হবে না,কোন রক্তের গ্রুপের স্বাদ কেমন,কতোটুকু স্বাদ বদলে যাচ্ছে রক্তের গ্রুপের সাথে সাথে,সেসব মাথায় রেখে থিসিস শেষ করা যথেষ্ট মেধাবী আর চৌকশ না হলে সম্ভব না কোন ভাবেই।

যা ই হোক,আমার সবসময়ই এমন দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে ভাল্লাগে।আর সবার বিশ্বাস ছেলো আমি পারবো,আমিও তাই ছিলাম অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
দিন ঘনিয়ে আসে,আমিও এক সুন্দর সন্ধ্যায় কাজে নেমে পড়লাম।কাজটা জটিল,একই সাথে রক্তের স্যাম্পল কালেক্ট আর স্বাদ নেয়া-মনযোগ রাখতে হচ্ছিলো খুব শার্প।ভালোই আগাচ্ছিলো,রক্তের স্যাম্পল কালেক্ট করার পাশাপাশি স্বাদটাও ভালোই নিচ্ছিলাম।হঠাৎ কি হলো,আমার মাথাটা ঘুরে উঠলো বোঁ বোঁ করে।তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই পড়ে রইলাম।আমার জ্ঞান যখন ফিরে,তখন আমি হাসপাতালে।গত সাতটা দিন আমি হাসপাতালে শুয়ে আছি,ডাক্তারদের গম্ভীর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি,ভেতরে ভেতরে একটা বড় কোন অসুখ বাধিয়ে বসেছি আমি।

স্যারেরা সবাই একে একে এসে ঢুকলেন আমার কেবিনে।যথারীতি সবাই খুব গম্ভীর।মেডিসিনের কিংবদন্তি প্রফেসর মুখ খুললেন,
"কেমন আছো কি লি?"
'ভালো,দেখতেই তো পাচ্ছেন ডক্টর।'
"হু।আচ্ছা বলতো,সেদিন তুমি কার রক্ত কালেক্ট করেছিলে?"
'কার রক্ত?ঠিক মনে করতে পারছি না ডক্টর।'
"দেখো লি,এটা তোমার জন্য খুব জরুরি।আমরা বুঝতেই পারছি না কার রক্ত তুমি কালেক্ট করতে যেয়ে এতো অদ্ভুত একটা রোগ বানালে যে আমরা কেউ ধরতেই পারছি না?"
'উমম,দাড়ান ডক্টর।একটা লোক,মুখে খোচা খোচা গোফ,পুরো মাথা জুড়ে বিশাল টাক।আমি গিয়েছিলাম একটা টক শো তে,সেখানেই..'
"এই দাড়াও দাড়াও।বুঝতে পেরেছি,উনি কি কোন সেলিব্রেটি বুদ্ধিজীবী?উনার রক্ত কি অনেক মিষ্টি,একেবারে নেশা ধরিয়ে দেয়ার মতো?আর রক্তের কোন বিশেষত্ব দেখেছিলে তুমি?"
'হ্যা হ্যা ডক্টর,আমার কিছুটা মনে পড়ছে।অসম্ভব মিষ্টি ছিলো সেই রক্ত।আর রক্তের রঙ ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছিলো।অন্য কারো রক্তে আমি এমন রঙ বদল দেখিনি আমি।'
হঠাৎ চমকে উঠি আমি।উনি কি তবে...
'ডক্টর,উনার নাম কি...'
আমার মুখে এসে হাত চাপা দিলেন প্রফেসর।মাথা নাড়তে নাড়তে হতাশ মুখে বললেন,
"নাম বলো না,নাম বললে চাকরী থাকবে না।তুমি যাকে ভাবছো,উনি তিনিই।উনার রক্ত উনার স্বভাবের মতোই,ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়।এই জন্যই তুমি যখন টেস্ট করছিলে,তোমার রক্তের সাথে মিশে গিয়ে তোমার রক্ত কে পার্মানেন্টলি দূষিত করে দিয়েছে।আমি খুবই দুঃখিত লি,এই রঙ বদলের চিকিৎসা আমাদের কারও জানা নেই।আমাদের ক্ষমা করো,লি।"

মাথা নিচু করে এক এক করে সব ডাক্তাররা বের হয়ে যাচ্ছেন কেবিন থেকে।আমি তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম।পুরো কেবিনে একটা মাত্র জানালা,আমি সেই জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলাম।আমার চোখ ভারি হয়ে যাচ্ছে,আমি তাকিয়ে থাকতে পারছি না আর....♦

লেখাটা এভাবেই শেষ হয়েছিলো।মহান লি,যিনি কি না ছিলেন স্মরণকালের সবচেয়ে মেধাবী মশাদের একজন,মহান এক গবেষণার জন্য নিজের জীবনকে যিনি উৎসর্গিত করেছিলেন,এভাবেই তার জীবনের যবনিকাপাত হয়েছিলো।দেশের মশারা আজও এই মহান মশাকে স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধায়,ভালোবাসায়....।
_________________________________

Cডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন, ঢাকা। সাবেক শিক্ষার্থী ; শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ,০২ ব্যাচ। বাংলাদেশে চিকিৎসক সমাজের তরুণ মেধাবী লেখক।aption

 

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়