Ameen Qudir
Published:2018-05-14 02:02:12 BdST
বড় মনে পড়ে বাবাকে
ডা. তারিক রেজা অালী
__________________________
গভীর মনযোগে দাবা খেলছেন দুই ভদ্রলোক। সামনে চায়ের কাপ। দুজনের হাতেই জ্বলন্ত সিগারেট। পরণে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী, গায়ে কাশ্মীরি শাল। বেতের চেয়ারের উপর ভাঁজ খেয়ে সেই শাল পড়েছে পায়ের কাছে। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সিগারেট ছোট হয়ে যাচ্ছে একলা পুড়ে পুড়ে। অনেকক্ষণ ঠোঁটে নিয়ে টান দেওয়া হয় নি। সমস্ত মনযোগ পরের চালটা কোথায় হবে, কিভাবে হবে তার উপর।
উপরের এই লেখছবিটার একজন পুরুষ আমার বাবা, মুহম্মদ আনসার আলী। আরেক জন বাবার বন্ধু টেলিফোন বিভাগের সাবডিভিশনাল অফিসার মো. মতিউর রহমান। আর এই ছবিটা আমাদের বাড়ীতে নয়, জমিদার কিরণ দাশের পরিত্যাক্ত বাড়ী, যেটা সরকার দখল করেছে শত্রু সম্পত্তি আইনে। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মহকুমা টেলিফোন অফিস। বিরাট বাড়ী, বিশাল তার চৌহদ্দি। কত শত নারকেল, সুপারী আর আম-জাম গাছ। মূল রাস্তা থেকে অনেক দূর পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় বাড়ীতে। একপাশে অফিস, টেলিফোনের নানা রকম যন্ত্রপাতি, আরেক পাশে থাকার জায়গা। টেলিফোন সাব ডিভিশন অফিসার সাহেবের ছোট ছেলে আবার আমার বন্ধু। আমাদের অবারিত যাতায়াত ঐ বাড়ীতে। কত সকাল আর বিকাল যে বাবা আর সেই চাচা পার করেছেন দাবা খেলে। একদিন ঐ বাড়ীতে তো আরেক দিন আমাদের বাড়ীতে। আজ তাঁরা দুজনেই নেই।
প্রতিটি মানুষের মনে তার পিতা-মাতার স্মৃতি সদা দীপ্যমান। আব্বা মারা গেছেন ১৩ বছর হয়ে গেল। কিন্ত তাঁর কথাতো প্রতিদিনই মনে পড়ে। দৈনন্দিন কাজের এক ফাঁকে মৃত স্বজনেরা চলে আসেন চোখের সামনে, হাত নাড়েন, কথাও বলেন। এভাবে চলে যাবে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। আমরা গত হবো, আমার সন্তান মনে রাখবে আমাকে, তার সন্তান মনে রাখবে তাকে। এক বা দুই প্রজন্মের বেশী তো সাধারণ মানুষের তাদের পূর্বপুরুষ কে মনে রাখার কোন কারণ নেই, সুযোগও নেই। এটাই নিয়ম। এভাবে চলে যাবে কত সহস্র -লক্ষ-কোটি বছর, কেউ জানে না। এখন যেখানে বাবা সহ সকল পূর্বপুরুষের কবর, কপাল ভালো থাকলে সেখানে শায়িত থাকবো আমি, আমার পরের প্রজন্ম সবাই। কে জানে কখন সে ভূমি দখল করে নেবে রাষ্ট্র, বানাবে গগনচুম্বী অট্টালিকা। হাজার বছর পর কি নাম হবে এ ভূখন্ডের? কে জানে! কেমন থাকবে সে আমলের মানুষেরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। সেখানে আমার বাবা বা আমার মৃত্যুবার্ষিকীর কি গুরুত্ব আছে।
তারপরেও এখন, এই মুহূর্তেতো গুরুত্ব আছে। সন্তান এবং প্রিয়জনের কাছে পিতা বা মাতার মৃত্যুবার্ষিকী এক হৃদয় ভাঙা দিন।
আজ ১৩ মে আমার বাবা মুহম্মদ আনসার আলী সাহেবের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। পরম করুণাময় মহান আল্লাহ্ আমার পিতা সহ সকলের বাবা-মা পূর্বপুরুষ কে পরকালে শান্তিতে রাখুন। আমীন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানি সাগিরা।
____________________________
ডা. তারিক রেজা অালী। সহযোগী অধ্যাপক। রেটিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় । ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: