Ameen Qudir

Published:
2018-04-17 15:40:53 BdST

' কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে পেশাজীবী ও ২৬ ক্যাডারের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন '




ডা. বাহারুল আলম
_____________________________________

৭২-এর সংবিধান এগিয়ে ছিল কিন্তু রাষ্ট্র ও রাজনীতি পিছিয়ে আছে - সচিবালয়ের উপসচিব পদে পদন্নোতির ৭৫:২৫ কোটা প্রথা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে পেশাজীবী ও ২৬ ক্যাডারের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন
.............................................
৭৫% এর ভারে ভারাক্রান্ত সচিবালয়ে উপসচিবের পদগুলো । রাষ্ট্রের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদের ১ ধারায় লিপিবদ্ধ আছে। সংবিধান অনুযায়ী সচিবালয়ের পদন্নোতির এই কোটা পদ্ধতি ন্যায্যতা/নৈতিকতা পরিপন্থী । মাত্র একটি ক্যাডার (জনপ্রশাসন)৭৫% পদ দখল করে রাখবে আর পেশাজীবী ও অপরাপর ২৬ ক্যাডারের জন্য বরাদ্দ বাকি ২৫%। পদন্নোতির ক্ষেত্রে কেবল অন্যায় বা অসাংবিধানিক নয়, নির্লজ্জ বৈষম্য। স্বপ্নের সোপানে থেকে সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য ক্যাডারেরা যখন নিজ গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ পদের প্রত্যাশী হয়, তখনি তাকে মুখোমুখি হতে হয় বৈষম্য ও কোটা প্রথার। সচিবালয়ের পদন্নোতিতে ৭৫% ও ২৫% কোটা বৈষম্য সংবিধান বিরোধী সনাতনী এক ফাঁদ। এ ফাঁদে পড়ে পেশাজীবী ও অপরাপর ক্যাডারেরা সচিবালয়ে স্থান পাচ্ছে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে পদন্নোতির এ বৈষম্যের বিষয়ে সচিব সভায় নির্দেশ দিলেও কোন প্রতিকার নাই। ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের কারণে সচিবালয়ের কোটা প্রথার বৈষম্য দূর হচ্ছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থেকেও তাঁর নির্দেশ মূল্যায়ন করছে না। সরকার প্রধানের সদিচ্ছার অকার্যকারিতার রহস্য কোথায় ? পেশাজীবীরা তা উন্মোচন করতে পারে নি!
রাষ্ট্রের জন্য সচিবালয়ের এ কোটা প্রথা মোটেও কল্যাণকর নয়। এর ফলে মেধাবী ক্যাডারদের পদন্নোতি পিছিয়ে যায় এবং মেধাহীনদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়েও সচিবালয়ে এ কোটা প্রথা টিকে আছে দীর্ঘদিন।

প্রকৃচি বিসিএস ও ২৬ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে সরকার প্রধানের কাছে দাবী উঠেছে “কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়” বা ‘ ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তাঁর’ । আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের কাছে এ দাবী অগ্রাহ্য হয়ে আছে। রুদ্ধ হয়ে আছে যোগ্য ও মেধাবীদের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে যাওয়ার।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ও প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে চিরদিন। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রের নারী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর-জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বিবেচনায় সুবিধা প্রদানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই।

এ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, একই বিবেচনায় ও ক্ষমতায় – সচিবালয়ের পদন্নোতির কোটা পদ্ধতির বিলুপ্তি চাই। মেধার প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন ক্যাডারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না ।

৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্রের ফিরে আসার সময় হয়েছে। আমাদের সংবিধান এগিয়ে ছিল কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র ও রাজনীতি পিছিয়ে আছে বিধায় এ সকল বঞ্চিত বৈষম্যমূলক ক্যাডার পদ্ধতি বহাল রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সে জায়গায় আঘাত করেছে। কোন কোটা প্রথা চিরদিন থাকতে পারে না।
___________________________________
ডা. বাহারুল আলম । পেশাজীবি নেতা। লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক । চিন্তক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়