Ameen Qudir
Published:2018-03-10 18:45:36 BdST
আমি তো বন্ধু দেখি,নারী কোনজন?
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_____________________
স্মৃতি হাতড়ে দেখি মায়ের পেটে বেড়ে উঠার কথা স্মরণ নেই। চিকিৎসক হিসেবে পরে জেনেছি,দশ মাস দশ দিন কি তীব্র মনোদৈহিক যাতনায় মা দিনগুলি পার করেছিলেন।চিকিৎসা দিতে গিয়ে দেখেছি,প্রসব যন্ত্রণার শরীর হিম করা কষ্টের কথা। জন্মের পর রুগ্ন মা রাত জেগে স্তন্য পান করিয়েছেন - সেটিও জেনেছি।মা বর্ণমালা শিখিয়েছেন।মুখে মুখে ছড়া - নামতা শিখিয়েছেন।অংকে ১০০ পাওয়ার গল্প গর্বভরে মানুষজনকে বলেছেন।জীবনের প্রথম উপার্জন প্রাথমিক বৃত্তির টাকা দিয়ে দাদীকে শাড়ি কিনে দেয়ার কথা পইপই করে বলে দিয়েছেন।সেই মা-ই আমার প্রথম বন্ধু হল।
২।স্কুলে পড়বার সময় শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলায় জড়িয়ে গেলাম।অনেক বন্ধু হল।তাদের অনেকেই লিঙ্গ সূত্রে মেয়ে।এক সাথে আবৃতি করেছি,কে কয়টা বই পড়েছি ' তুই তোকারি' করে পাল্লা দিয়ে সেটা নিয়ে ঝগড়া করেছি। রুমাল চোর খেলতে গিয়ে পিঠে দুমদাম করে যারা কিলিয়েছে বা আমি যাদের কিলিয়েছি,তাদের অনেকেই মেয়ে হলেও 'বন্ধু'ই ছিল আসল পরিচয়।
৩। মেডিকেলে ছয় বছর পড়বার সময় অনেক সহপাঠিনী ছিল। নারী পুরুষের অংগ - প্রতংগ একসাথে পড়বার সময় শুধু মনে হয়েছে ' ডাক্তারিই ' পড়ছি।ইন্টার্ন করবার সময় রাত জেগে ডিউটি করবার সময় মেয়ে সহকর্মীকে, মেয়ে নয় বন্ধু হিসেবে জেনেছি।
৩।মেডিকেলে শেষবর্ষে পড়বার সময় একমাত্র বোন প্রথমবর্ষের ছাত্রী হিসেবে এলো। আমি, তার সহপাঠিনীরা দলবেঁধে চন্দ্রালোকিত জোছনায় ভিজে কলকাকলিতে ক্যাম্পাসের রাত উচ্ছল করে তুলেছি। তাদের কাউকে মেয়ে নয়,একই পরিবারের সদস্য বন্ধু হিসেবেই জেনেছি।
৪।সামরিক বাহিনীতে 'বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের' সময় পিটি - গেমস - এ ট্রেনিং নেয়া মেয়ে সহযোদ্ধাদের মেয়ে নয় বন্ধু হিসেবে জেনেছি।
৫।জীবনের সুতো যার সাথে বাঁধলাম, সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তার কাছেই ফিরে আসি।তার রেঁধে দেয়া খাবার খাই। একসাথে পরবর্তী প্রজন্মকে পড়াতে বসাই।বন্ধু হিসেবে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুনি।
৬।আমার শৈশবের খেলার মেয়ে সাথীরা, মেডিকেলে পড়বার সহপাঠিনীরা এখনও আমার বাসায় আসে। তারা, আমি,আমার স্ত্রী বন্ধুর মত জম্পেশ আড্ডায় কত প্রহর পার করি।
৭।তাই মায়ের সন্তান,বোনের ভাই,ছোটবেলার খেলার সাথী,মেডিকেলের সহপাঠিনী, পেশার অনুগামিনী সব পরিচয় ছাপিয়ে তাদের একটি পরিচয়ই উদ্ভাসিত হয়ে উঠে ' বন্ধু'।
আমি তো' বন্ধু' দেখি। নারী কোনজন???
______________________
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ ।
আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিটটি সেনা, নৌ,বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহারকৃত সকল খাদ্যসামগ্রী এবং ড্রাগ তথা ওষুধ পথ্য পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযুক্ততা/ অনুপযুক্ততা নিরুপন করে।
এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।
আপনার মতামত দিন: