Ameen Qudir

Published:
2016-12-04 01:30:11 BdST

নারী জীবন মূলত পৈশাচিক


 

 


সুলতানা জামান
_________________________

মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্য
হচ্ছে... শেষ পর্যন্ত এদের জীবনে কোন
বন্ধু থাকে না ! স্বামী, সংসার, সন্তান...
এসব কিছুর বাইরে ও তো একটা মেয়ের
জীবন আছে ! এসবই সবকিছু নাহ ! প্রতিটা
মানুষেরই নিজস্ব একটা জগত আছে..
একটা ছেলে জীবনের বেশিরভাগ সময়ই
তার নিজস্ব জগতে অবস্থান করতে
পারলে ও, একটা মেয়ে সেটা কখনওই
পারেনা ! চাইলে ও সেটা পারেনা !


কেননা,
বিয়ের পরে প্রতিটা মেয়েকেই
বাধ্যতামূলকভাবে এক ভিন্নজগতে
প্রবেশ করতে হয় ! আর তখন বাধ্য হয়েই
ভিন্ন জগতকে নিজের জগতে রুপান্তর
করার নিদারুণ প্রচেষ্টা শুরু করে ! তার
নিজের যে একটা জগত আছে তখন তাকে না
চাইলে সেটা ভূলে যেতে হয় ! ভূল বললাম!
ভূলে থাকার অভিনয় করতে হয় !


একটা মানুষ কতক্ষন, কতদিন, কত মাস,
কত বছর ভূলে থাকার অভিনয় করতে
পারে ? 'না', তারা পারে ! খুব পৈশাচিক
ভাবেই তারা পারে ! নিজস্ব জগতে বিচরণ
করার প্রবল ইচ্ছেটা কে ও তারা তখন খুব
যত্ন সহকারে হত্যা করে ফেলে ! আর এমন
একটা ভাব ধরে যেনো ' কিছুই হয়নি' !
অথচ কত বড় একটা ইচ্ছেটা কে সে হত্যা
করে ফেললো !


.
শিক্ষাজীবনের আট-দশটা বছর যে
মেয়েটা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মেতে থাকতো,
মন খারাপ করে থাকলে পেছন থেকে তার
এক বান্ধবী এসে যখন জড়িয়ে ধরে
জিজ্ঞেস করেছিল, 'কিরে মন খারাপ
কেন? আমি থাকতে তুই মন খারাপ করে
থাকবি, এটা আমি হতে দেব না! চল বাইরে
থেকে ঘুরে আসি ! ' এমন সোনালী
মুহুর্তগুলো কেউ কি করে ভূলতে পারে !
এমন বন্ধুদের কি করে ভূলা যায় ! না, ভূলা
যায়না কখনো ! জীবনের প্রতিটা পদে
পদে মনে পড়ে সোনালী দিনগুলি!

.
''মেয়েটা বাসায় অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে !
বিগত কয়েকদিন ধরে জ্বর-ঠান্ডা তাকে
প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে ! বন্ধুদের
জানায়নি, বন্ধুরা কষ্ট পাবে বলে ! অথচ
ঠিকই বন্ধুরা জেনে গেলো! পুরো দল
বেধে সবাই চলে এলো মেয়েটার বাসায়!
একজন এসে মেয়েটার হাতটা ধরে.. চোখের
পানি ছেড়ে দিয়ে যখন বললো, ' কিরে !
এভাবেই পর করে দিবি আমাদের! একটিবার
ও জানালি না তুই এত অসুস্থ হয়ে আছিস !
' এই বলে যখন অঝর ধারায় মেয়েটার বন্ধু-
বান্ধবীরা কাঁদতে থাকে... তখন মেয়েটা ও
বন্ধুদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে কেঁদে
ফেলেছিলো !

বন্ধুদের কাঁধে মাথা রেখে
অঝর ধারায় কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলো..
ঠিক এই মেয়েটাই এখন বালিশের নিচে
মাথা গুঁজে কাদে ! বন্ধুদের কাধে মাথা রেখে
কাদার মধ্যে যে প্রশান্তি, সেটা কি
বালিশের নিচে মাথা গুঁজে দিয়ে কাদলে
পাওয়া যায় ?
.
হাজারো সাংসারিক ব্যাস্ততার মাঝে ও
যখন একটা মেয়ের এসব মনে পড়ে যায়...
তখন কি পরিমাণ যন্ত্রণায় ভুগে.. তা
কেবল একটা মেয়েই বেশ ভাল ভাবে বুঝতে
পারে ! এই অন্যরকম যন্ত্রণা পরিমাপের
কোন যন্ত্র এই পৃথিবীতে এখনো
আবিষ্কার হয়নি !

 


স্বামীর মুখে একটু হাসি ফুটানো, নিজের
সন্তানকে সময়মত গোসল করানো,
নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া , যথাসময়ে
বাচ্চার হামের টিকা দেওয়া... এইতো
সময়টা তো এভাবেই চলে যায় ! বন্ধু-
বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে চাইলে ও...
সাংসারিক ব্যস্ততার দরুন সেটা আর হয়ে
ওঠে না !

দিনশেষে একটা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে..
ধপাস করে চেয়ারে বসে পরা একটা মেয়ের
গল্প আমরা কেউ জানি না ! বালিশের নিচে
মুখ গুজে কাদার মানে সবসময় এইনা যে,
মেয়েটা স্বামী সংসার নিয়ে সুখে নেই ! সব
চোখের পানি সবসময় একরকম হলে ও,
সবসময় সব চোখের পানি একই অর্থ বহন
করেনা ! যে মেয়েটা প্রচুর বিলাসিতা ও সুখে
থেকে ও দিনশেষে বালিশের নিচে মুখ গুঁজে
কেঁদে একাকার করে ফেলে, সে মেয়েটার
কান্না অন্যকিছু নির্দেশ করে ! নির্দেশ
করে কিছু অপূর্ণ ইচ্ছে ! বন্ধুদের কাধে
মাথা রেখে কাদার ইচ্ছে ! মন খারাপ করে
থাকলে যে মেয়েটা সবসময়... 'আমি থাকতে
তুই মন খারাপ করে থাকবি এটা আমি হতে
দিব না! এই হাস একটু ! একটু......! ' এই টাইপ
কথা শুনে হেসে এসেছে... সেই মেয়েটাই
বিয়ের পরে বন্ধুদের ছাড়া থেকেও...
বালিশের নিচে মুখ গুঁজে কেদে ও... সকাল
হলেই হাসিখুশি ভাব নিয়ে জীবনের নতুন
মানে খুজতে শুরু করেছে ! ছোট ছোট
কারনে ও হাসছে! এরচেয়ে ভয়ংকর কষ্টের
আর কি হতে পারে !

 

যে মেয়েটা সারাদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে
আনন্দে মেতে থাকতো... মেয়েটা অসুস্থ
থাকা অবস্থায় মেয়েটার বান্ধুরা মেয়েটার
হাত ধরে অজস্র কেঁদেছিল... খারাপ
সময়গুলোতে বুকে টেনে নিয়ে 'তোর
কিচ্ছু হবে না আমি থাকতে ! ' এসব কথা
শুনিয়েছিলো, সেইসব অজস্র স্মৃতি
ভূলে... বন্ধুদের ভূলে... বিয়ের পরে এতটা
বছরে কাটিয়ে দেয়া কি এতোই সহজ ?

_______________________________________________

লেখক সুলতানা জামান
এম বি এ শিক্ষার্থী , জগন্নাথ বিশববিদ্যালয় ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়