Ameen Qudir

Published:
2018-02-22 16:19:19 BdST

সনদ নির্ভর শিক্ষার যতদিন কদর থাকবে, ততদিন নকল বা প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হবে না




 



ডা. বাহারুল আলম

______________________

যতদিন রাষ্ট্রে জ্ঞান বা মেধার চেয়েও পরীক্ষায় নম্বর ও গ্রেডের মূল্য বেশী থাকবে , ততদিন প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় নকলের অস্তিত্ব থাকবে। কেবল আইন ও শাস্তি দিয়ে এ প্রবণতা দূর করা যাবে না। তার সাথে প্রয়োজন হবে এ সকল অনৈতিক কাজ করার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত না হওয়ার জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত ও তার বাস্তবায়ন। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা নকল করে যা অর্জন করবে , রাষ্ট্রে যদি তা প্রয়োগ করার সুযোগ না থাকে তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ মূল্যবান সনদ তৈরির কোন আকাঙ্ক্ষা থাকবে না, শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণে মনোনিবেশ করবে।

শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার দর্শনের মূলেই নিহিত আছে -পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা নকল করবে কি করবে না, প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে কি করবে না। সনদ নির্ভর কেরানী/ রোজগেরে বানানো ব্রিটিশ উদ্ভূত শিক্ষা ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে জ্ঞান-নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলেই নকল প্রবণতা ও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে।

যে শিক্ষা আমাদের ছাত্র ও যুবকদের নকলের অবক্ষয় থেকে নিবৃত করতে পারছে না, সে শিক্ষার পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই ছাত্ররা হলে যাচ্ছে নকল সাথে নিয়ে। শিক্ষাই যদি এ অবক্ষয় রোধ করতে না পারে তাহলে কে করবে? ঔপনিবেশিক এ শিক্ষা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।

বই খুলে প্রশ্নপত্রের উত্তর লেখা আর পরীক্ষায় নকল করা এক নয়। যদি অপরাধপ্রবণ মানসিকতা থাকে তাহলে পরীক্ষায় বই খুলে উত্তর লেখার অনুমতি থাকলেও পরীক্ষার্থী নকল করবে, তবে তার ধরন হয়ত ভিন্নতর হতে পারে। নকল করার মধ্যে পরীক্ষার্থীর অপরাধপ্রবণ মানসিকতা কাজ করে। বই খুলে উত্তরপত্র লেখার পদ্ধতি চালু হলেই নকল করা বন্ধ হয়ে যাবে এটা সত্য নয়। অধ্যয়ন না করে, না জেনে উত্তর লেখার তাগিদ থেকেই নকল করার প্রবণতা জাগে। বই খুলে উত্তর লিখতে হলে পরীক্ষার্থীর ঐ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ প্রশ্নপত্র যেমনই হোক না কেন, জানা না থাকলে বই খুলেও সে লিখতে পারবে না।

অপরদিকে যতদিন ‘শিক্ষা সনদ’ জ্ঞানের মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহৃত হবে ততদিন ভালমানের সনদের জন্য অপরাধপ্রবণ ছাত্ররা নকল বা প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেই। পরীক্ষায় বেশী নম্বর পাওয়ার অর্থই হল বেশী মেধাবী- এ ধারণা থেকেই বেশী নম্বর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে। এ আকাঙ্ক্ষা যখন তীব্রতর হয়, তখন নীতি- নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে পরিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত , প্রযুক্তি থেকে অদৃষ্টবাদ পর্যন্ত, যা যা প্রয়োজন তাই করে। অপরদিকে রাষ্ট্রের যে কোন লাভজনক পদে যেতে হলে যে সনদের প্রয়োজন , সে সনদ আকর্ষণীয় ও মূল্যবান করার জন্য নকল বা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দ্বিধা বোধ করে না। এমনকি পরিবার, অভিভাবক ও শিক্ষকরাও পরীক্ষার্থীকে অনৈতিক হতে সমর্থন যোগায় । এ কারণেই জ্ঞান নির্ভর মেধা না হয়ে সনদ নির্ভর মেধার জন্য অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে।

____________________

 

Baharul Alam's Profile Photo, Image may contain: 1 person


ডা. বাহারুল আলম। লোকসেবী চিকিৎসক নেতা। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়