Ameen Qudir

Published:
2018-02-19 19:30:30 BdST

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন গঠন নিয়ে ভারতে যেসব নয়া চ্যালেঞ্জ


 


ডা. রেজাউল করীম, কলকাতা
________________________


ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন গঠিত হলেও মেডিকেল কাউন্সিলের রাজ্য শাখা বিলুপ্তি তো হবেই না, বরং তার কার্য্যপরিধি আরো বাড়বে বলেই মনে হয়। প্রথমত: ব্রিজ কোর্স করে যারা ডাক্তার হবেন তাদের একটি সমান্তরাল তালিকা থাকবে। তাদের সংখ্যাও অনেক হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে মেডিক্যাল কাউন্সিল পরিচালন সমিতিতে।

বর্তমান আইনে লাইসেন্সিয়েট সদস্য মাত্র দুজন থাকবেন কিন্তু নতুন আইনে যদি বি তালিকাকে আধুনিক মেডিসিন প্রাকটিস করার সুযোগ দেওয়া হয় তাদের প্রতিনিধি মেডিক্যাল কাউন্সিলে থাকবেন কিনা তা নির্ণয় করা বেশ কঠিন হবে-হয়ত আইনী জটিলতাও তৈরী হবে।


আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া খুব প্রয়োজন। মেডিক্যাল কাউন্সিল যখন সমান্তরাল দুধরনের চিকিৎসকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয়ে উঠবে তখন চিকিৎসায় গাফিলতির সংজ্ঞা কি পাল্টে যাবে? ধরা যাক, ডাক্তার বি মডার্ন মেডিসিনের ডিগ্রিধারী চিকিৎসক। তিনি আয়ুর্বেদিক ঔষধ লিখে মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিষ নজরে পড়লেন। আয়ুসের শর্টকার্ট ব্রিজ ধরে যিনি বি তালিকাভুক্ত হবেন তিনি ঔষধ লিখলে তার কি একই গতি হবে? ধরা যাক উক্ত ডাক্তার বি বিদেশের বড় ইউনি থেকে কোন বিষয়ে পোস্টগ্রাড করেছেন কিন্তু মেডিকেল কাউন্সিলে তার সেই ডিগ্রি নথিভুক্ত নেই। মেডিক্যাল কাউন্সিলের কোন বডকত্তা যিনি কোনদিন ইউনি মাড়ান নি, তিনি হয়ত তাঁকে ক্ষমতার আস্ফালন দেখিয়ে খুব চোটপাট করলেন, ব্রিজকোর্স করে যারা আসবেন তাদের ক্ষেত্রে কর্তার ভূমিকা কী হবে? ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে গত বছর তো বেশ পাতার পর পাতা লেখা হল, এবার আসল নকল যাচাই কে করবেন ও কিভাবে করবেন?


সামনের মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচন(২০১৮ র মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে হয়) তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ চিকিৎসক এই নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দেননা। কিন্তু যে নিয়ামক সংস্থা চিকিৎসার মান নির্ণয় ও চিকিৎসকদের বিচারের দায়িত্ব নেবে তার যথাযথ মর্যাদা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অরাজনৈতিক প্রাজ্ঞ চিকিৎসক যারা যথাযথ ন্যায় বিচারে আগ্রহী ও সিজার পত্নির মত নিষ্কলঙ্ক ।নিয়ামক সংস্থার মান-মর্যাদা চিকিৎসকদের মর্যাদার দৌতক। নবনির্বাচিত কাউন্সিলকে এমন অনেক জটিল ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হবে যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যবস্থার দিশারী হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এই নির্বাচন তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে এই নির্বাচন সম্পন্ন হলে তা ভবিষ্যত চিকিৎসকদের মান-মর্যাদা ও নিরাপত্তায় সঠিক ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে বিশেষ সহায়ক হবে।


ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ভোট গ্রহন করবার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে হবে। কারন ডাক বিভাগের উপর নির্ভর করে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করার প্রাগৈতিহাসিক পদ্ধতি বদল করা একান্ত জরুরী। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যালট পেপার চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছয় না। এই ব্যবস্থার বদল তাই আবশ্যিক। প্রতিশ্রুতি মত এই নির্বাচনে অরাজনৈতিক চিকিৎসকরা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন ও মেডিক্যাল কাউন্সিলের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করবেন, এ আমার একান্ত বিশ্বাস। সর্বস্তরে চিকিৎসক বন্ধুরা যথায়থ গুরুত্ব সহকারে নির্বাচনের কথা সবার কাছে পৌঁছে দিন ও গনতান্ত্রিক রীতি মেনে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন।

______________________

ডা. রেজাউল করীম।
পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক ; চিন্তক ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়