Ameen Qudir

Published:
2018-02-14 19:33:11 BdST

এক হাতে সিগারেট আরেক হাতে গোলাপ


 

 

 

ডা. তানজীর আহমেদ শুভ
_______________________

 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর স্বাধীনতা স্তম্ভের পেছনের দেয়াল ঘেঁষে একটি ছেলে বসে আছে। এক হাতে সিগারেট আরেক হাতে গোলাপ। সিগারেটে একটা করে টান পড়ছে আর একটা করে গোলাপের পাপড়ি জলাধারের পানিতে পড়ছে। । দেখেই বলে দেয়া যাচ্ছে এই গোলাপ টা যার জন্যে আনা হয়েছিল তার সাথে কিছু একটা হয়েছে। হয়তো ঝগড়া। হয়তোবা ঝগড়া পর্যায়ে যাওয়ার মত সম্পর্কই হয়নি। তার আগেই ঝরে পড়েছে সম্পর্কটা।

অর্ক অনেকক্ষণ ধরে ছেলেটা কে খেয়াল করছে। হাতে ক্যানন এর 5D Mark IV ক্যামেরা আর একটা ৩০০ মিমি প্রাইম লেন্স নিয়ে অর্ক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছা কোন একজন ইন্টারেস্টিং চরিত্র খুঁজে বের করে তার সাথে কথা বলবে । তার ছবি তুলবে। আশেপাশে প্রচুর ইন্টারেস্টিং চরিত্র। কিন্তু সমস্যা হল বেশির ভাগ ই এই মুহুর্তে অন্য কারো সাথে ব্যস্ত, অথবা cannabis indica নামে এক বিশেষ ধরনের পাতার বায়বীয় নির্যাস নিতে ব্যস্ত। এত মানুষের ভিড়ে এই একটা ছেলে একদম একা বসে আছে। আচ্ছা এই ব্যাপারটার কি কোন আভিধানিক নাম আছে? ছোট বেলায় এক কথায় প্রকাশে কত কিছুই তো পড়ানো হয়। এখানে পুরো লাইন টা হবে “নির্জন না হইয়াও নির্জন যে”!!! কিন্তু এর এক কথায় প্রকাশ কি হবে? নির্জনাকীর্ন? একাকীর্ন? যাই হোক এত কিছু ভেবে লাভ নেই। ছেলেটির সাথে কথা বলতে হবে। এ কথা চিন্তা করতে করতেই ছেলেটি ব্যাগ থেকে আরেকটি গোলাপ বের করল। এবং একই ভাবে সিগারেটে টান দিতে থাকল আর প্রতি টানের সাথে একটা করে গোলাপের পাপড়ি পানিতে ফেলতে লাগল। এবার অর্ক একটু নড়ে চড়ে বসল। ঘটনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। ছেলেটা ব্যাগের ভিতর থেকে ফুল বের করছে আর ছিড়ছে।প্রেম জনিত ছ্যাকা বা ঝগড়া হলে ব্যাগের ভেতএ করে ফুল নিয়ে আসত না। এতক্ষনে ছেলেটি পাচটা সিগারেট আর ৪৭ টা পাপড়ি শেষ করেছে। অর্ক আস্তে আস্তে ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেল।

-ভাই কেমন আছেন
-ভাল।
-আপনার পাশে একটু বসতে চাচ্ছিলাম। কিছু কথা বলতাম।
- জি বলেন।
-আমি ঢাকা মেডিকেলের একজন স্টুডেন্ট। মাঝে মাঝে একটু ছবি তুলি। মানুষের সাথে কথা বলি। তাদের ছবি তুলি, গল্প শুনি।যদি কিছু মনে না করেন, আজকে আপনার গল্প টা শুনতে চাচ্ছিলাম।
-আমার আর গল্প কি ভাই? এইতো। আমি নিজে পড়ি, কোচিং এ কিছু ছাত্র পড়াই, আর হাটাহাটি করি। এই আমার গল্প। অইরকম স্পেশাল কিছু না। ছবি তুলে বলার মত কিছু না ভাই।
- যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতাম।অনেকক্ষন ধরে দেখছি আপনি গোলাপ গুলো ছিড়ে ছিড়ে পানিতে ফেলছেন। একটার পর একটা গোলাপ ব্যাগ থেকে বের করছেন আর ছিড়ছেন। আমি জানি জিজ্ঞেস করা ঠিক হচ্ছে না, তারপর ও কৌতুহল আটকে রাখতে পারছি না।
- অইরকম কিছু না।মনটা একটু খারাপ। আমি একটা কোচিং সেন্টারে পড়াই। আমার ছাত্রদের আজকে এস এস সি পরীক্ষা ছিল। তারা কিছুক্ষন আগে ফাস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্ন এনে দিয়েছে তাদের বাবা, মা রা। এইটা শুনে খুব কষ্ট লাগছে। এই প্রত্যেকটা ছাত্র একটা ঝরে যাওয়া পাপড়ি। আমার ক্লাসে পঞ্চাশ জন ছাত্র ছিল। তাই তাদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে পাপড়ি ছিড়ে ছিড়ে ফেলছি। এই তো।

অর্ক অবাক চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইল। ওর চোখের সামনে ছেলেটি উঠে আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগল। অর্ক অসাড়ের মত দাড়িয়ে রইল, ঠিক কয়েকদিন পর যেমন অসাড় হয়ে যাবে সারা দেশ। ক্যামেরাটাও ঝুলে রইল ওর এক পাশে। আর পানির উপর পড়ে রইল পঞ্চাশটি ঝরে যাওয়া পাপড়ি।


_________________________

 

 

লেখক ডা. তানজীর আহমেদ শুভ । তরুণ মেধাবী লেখক ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়