Ameen Qudir

Published:
2018-02-12 05:47:17 BdST

কবি ডা. জিয়া সাঈদের 'আয়নায় অপরাহ্ণ' মুগ্ধ করবে পাঠককে



অদম্য কবি ডা. জিয়া সাঈদ তাঁর সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনার আনন্দক্ষণে ভক্ত সবাইকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা। অসুস্থ শরীরে ক্রাচে ভর করে উঠে দাঁড়ানো তার সদা হাস্যমুখ।

 


মিলন ফারাবী

__________________


জিয়া সাঈদের পরিচয় কি ! কে তিনি ! তাকে কবি বলা যায় কি !
অামি অনেকটাই নিশ্চিত, আমার এই প্রশ্নে চমকে উঠবেন তাঁর হাজারও ভক্ত পাঠক। ব্যাথিত হবেন তারা।
বলবেন, এ কেমন অর্বাচীণ প্রশ্ন।
কিন্তু আমিই বা কেন জিয়া সাঈদের কবিত্ব নিয়ে কথা তুললাম।

অামি প্রশ্ন তুলেছি একারণেই যে, যার জীবনটাই আস্ত অখন্ড এক মহাকাব্য ; তিনি কি সত্যিই কবি। নাকি তিনি প্রতিমার মত স্বয়ং কবিতা।

এ লেখা যখন লিখছি , তখন এই মানুষটি ভীষণ বিষন্ন সময় কাটাচ্ছেন।
তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
অস্ত্রোপচারে বিষন্ন হওয়ার মানুষ তিনি নন।তিনি স্বয়ং পেশায় চিকিৎসক। বিষন্নতার ব্যবচ্ছেদ করেন তিনি সুচিকিৎসায়।

তবুও তিনি বিষন্ন । বিষন্ন এজন্যে যে, মানুষের কাছে মানবতার অমূল্য নিয়ে তিনি সমুপস্থিত থাকতে পারছেন না বলে।

জিয়া সাঈদ কবি। তিনি কবিই। তিনি বিরল সেই কবি যিনি মানুষ হিসেবে কবিত্বের মাধুর্যে ভরা অমর এক জীবন যাপন করেন।
এমন সৌভাগ্য সবার হয় না। এমন কবি চরিত্র সবার হয় না।

জিয়া সাঈদ তো কবি নন।

অামরা কবি বলতে সচরাচর যেমনটা ভাবি; কবি হবে নারী খুঁটে; কবি হবে হিংসুটে। কবি হবে ব্যাক্তিচরিত্রে বিদঘুটে। তাঁর ব্যাক্তিচরিত্র ঘাঁটলে কেবলি বের হবে অবিরাম লোভ। অবিরাম যৌনতার অপরিসীম আকাঙ্খা ষাট ছুঁই বার্ধক্যেও অদম্য কাতর।
জিয়া সাঈদ সেই কবি নন।

কবি বলতে আমরা যে ছবিটা পাই,

পুরস্কারের গন্ধে গন্ধে ছন্দে ছন্দে কেবলি ছড়াবে অনিশেষ দুর্গন্ধ।
পুরস্কারের জন্য , এক পশলা খ্যাতির জন্য সে যত্র তত্র শংসাসংকীর্ত্তন করবে। পুরস্কার না পেলে লিখবে নিন্দার দিস্তা দিস্তা কাব্য।
জিয়া সাঈদ তেমন কবি নন।

তিনি তেমন কবি ; কবিকে আমরা যেমন দেখতে চাই।

দিস্তা দিস্তা লিখে কি লাভ। যদি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মত কবির কবিতার চরণ পাঠকের অাবৃত্তিতে না উচ্চারিত হয় পূণ: পূণ:।
কবি যদি ঈশ্বরের মত নির্মোহ চরিত্রের না হন; তার উচ্চারণ যদি ঈশ্বরের বানীর মত অমোঘ না হয়; তিনি তো কবিই নন।

কবি জিয়া সাঈদ সে ক্ষেত্রে তাঁর ভক্ত পাঠককে করেছেন সৌভাগ্যবান।
তাঁর লেখা অনেক চরণ ফেরে মুখে মুখে। তার কোন কোন চরণ জয় করেছে যুগের আয়ুকে।
যেমন ;

যায় দিন সুদিন গেছে
আসে দিন দুর্দিন


তাঁর কবিতা জীবনেরই উচ্চারণ।
এ পর্যন্ত
সর্বশেষ কাব্য অায়নায় অপরাহ্ণ এক কবির মহাজীবনকে উপলব্ধির আয়নায় দেখার অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

যেমন
.... .... .... .... ..
ধূসর আলোয় কোনো পথে
হেঁটে যেতে যেতে
দূর প্রান্তের দিকে তাকালে
প্রান্তের প্রাচীন জীর্ণ বৃক্ষটির মতো
বিষম একা লাগে এখন
খুব বিমর্ষ বিথান
ভোরের স্বপ্ন, দুপুরের দর্প ভুলে
অপরাহ্ণ যে শুধু অপর পৃথিবীর কথা বলে....

জিয়া সাঈদের কবিতা আলোর উচ্ছলতার মত সফেদ; আলোর শক্তির মত তীব্রভেদী। আলোর দেহের মতই নিরাভরণ।

 

No automatic alt text available.

 

যেমন;
.... .... .... .... ..
কখনোবা কথা বলি
অর্ধস্ফুট গোলাপের মতো
কখনো ফুটে উঠি শব্দের শতদলে
কখনোবা আতিশয্যে
ফুটতে থাকি যেভাবে ফোটে
উৎসবের আতশবাজি
কখনো কেবলই মর্মর ;
কত কথা হয় ইঙ্গিতে ইশারায়
কত কথা তারায় তারায়
তবু কথা থাকে- অপূর্ণতা থেকেই যায়
প্রেমে,কবিতায়....


তাঁর আয়নায় অপরাহ্ণের পাঠ এক মুগ্ধতার পরশ।
যেমন:

 

খামে ভরা কথাগুলো
খামে পড়ে থাকে
উড়ে যায় জল-
নোনা জল মেঘ হয়ে ওড়ে
উড়ে উড়ে পাহাড়ি দেয়াল
চলে যায় কাঁটাতারেরও পরে
তুমি কি তার থেকেও দূরে !

জিয়া সাঈদের কবিতা মায়ার কথা কথা বলে। মায়াময় রহস্যের কথা বলে। মায়ার শরীরের অলৌকিতার কথা বলে। একজন পেশাজীবী চিকিৎসক কী মন্দ্র আরাধনায় ও মন্ত্রমধুর ধ্যানে কাব্যসাধনায় মগ্ন; তার দৃষ্টান্ত তিনি।

এসব নিয়ে ই তো কবিতার শরীর ও সংসার। কবি জিয়া সাঈদ কবির সেই পবিত্র কর্তব্য উদযাপন করেছেন অফুরন্ত উদ্যমে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়