Ameen Qudir

Published:
2017-12-31 17:25:45 BdST

জীবনের কাব্যময় গল্প


 

 

 


ডা. জিয়া সাঈদ
_______________________________


পদ্যের গদ্য-১
................ ..
সুর বলতে ঘরে ছিল ভোরের কোরআন, নিয়মিত মসজিদের আজান, মাঝেমধ্যে দূরের বাঁশী, দূর গাঁয়ে লুকিয়ে চুপিয়ে গিয়ে শোনা যাত্রাগান।
টিনের চালে বাদলের জলতরঙ্গ, তরঙ্গায়িত জলের তালদোল, পত্র-পল্লবে বাতাসের বাদন আর পাঠ্য পুস্তকের পদ্যপাঠ- এই ছিল ছন্দ পরিচয়। আবহ, ঐতিহ্য, প্রেরণা - কিছুই ছিল না। তবু সুরে ছন্দে আবাল্য এই সম্মোহন কেমন করে হলো- আমি আজো ঠিক বুঝে উঠি না।
নিশিদিন নিসর্গের নৃত্যগীত- নিত্য অনুরণন তার, যাপিত জীবনের সুুর-সার, তার আন্দোলন- হয়তো এসবই সঞ্চিত ছিল সংবেদে- সঞ্চারক হিসেবে ছিল কখনো গায়ক পাখি, কখনো গুঞ্জরিত গুল্ম-গাছ, কখনোবা কলতানি নদী।

 


পাখি সলো গায়, বৃক্ষরা কোরাস-তবে আমাকে বেশী টানে নদী। নদীতেই যে জীবনের ছায়াছবিটা বেশী দেখি- কান পাতলেই শুনি গান- চোখ রাখলে কবিতা।
আমি গান-কবিতার বিরাট কোনো বিভেদ বুঝি না। গানে খুঁজি কাব্য- কবিতায় গীতলতা। এভাবেই আমি কাব্য সাধি আজো- বাঁধি শব্দের জাগরণ....

 

Image may contain: one or more people and beard

 

 

পদ্যের গদ্য-২
................ ..
প্রথম ক্রন্দনের হা-করা মুখে পৃথিবীর যে বাতাস ঢুকেছিল-সেই হাওয়াটা বোধ হয় কোনো খেলার মাঠ থেকে উড়ে এসেছিল-মিশে গিয়েছিল ফুসফুসে-অতঃপর হৃদপিন্ডে-মজ্জায়। তাই বুঝি সেই যে জীবনের ভোরে শুরু, আজো-এই অপরাহ্ণেও মেতে আছি খেলায়।কত রকম খেলাতেই না রাঙ্গিয়েছি বেলা।
এ-খেলা সে-খেলা খেলতে খেলতে একদিন তারুণ্যে শব্দ নিয়েও খেলতে শুরু করলাম-মিলঝিলের খেলা। মিলঝিল করতে করতে দেখলাম ঝিলমিল করে ওঠছে ভেতরটা।মজে গেলাম। লেগে থাকলাম।

 


দেখলাম-শব্দের চাবি দিয়ে অলোকসুন্দরের দরজা খোলা যায়-অসুর,অন্ধকারের বিরুদ্ধে দেখলাম শব্দ দিয়ে শানিত যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা যায়। অভিজ্ঞান,অঙ্গীকারের জ্বালানী ভরে দিয়ে দেখলাম- মঙ্গলপ্রদীপ হয়ে জ্বলছে কোনো কোনো শব্দ কোনো কোনো তমসায়। আন্দোলিত অনুভূতি নিয়ে কিছু শব্দ উড়িয়ে দিয়ে দেখলাম- তাদের তোড়ে উড়ে যায় কারো কারো মেঘ- খুলে যায় বহুদিন বন্ধ কোনো কোনো জানালা।
এইসব দেখতে গিয়ে নিবিড় নিরন্তর- সমাজে,সংসারে কতো অভিযোগের সম্মুখীন হলাম- ভুলে গেলাম আড্ডার আমোদ, আহারের নিয়ম, নিদ্রার আবশ্যকতা-ছেড়ে দিলাম কত প্রিয় খেলা- শুধু শব্দের খেলাটাই আর ছাড়তে পারলাম না। কীকরে ছাড়ি- এ যে ঐন্দ্রজালিক অলঙ্ঘ্য বেষ্টন!

 


চোখ,কান,খাতা খুলে বসে থাকি। বসে বসে ছক কাটি-ছকের মাপে শব্দ খুঁজে পাই না। বেলার পর বেলা চলে যায়- কোনো খেলা হয় না। জং ধরে শরীরে- রঙ চলে যায় মনের।নিঃশেষের শঙ্কা জাগে এক সময়।
অথচ তার পরদিন কিংবা তারও পরে কোনো এক ভোরে উঠে দেখি- বাঞ্ছিত শব্দেরা নিজেরাই উড়ে এসে ছকে বসে আছে। আমি জেনে যাই- এ খেলার শুরু আছে শেষ নাই। আছে শুধু ঘোর- ঘোরের ভেতর আর্ত সত্যের ফোঁপানি শোনা- অনাদৃত ও অনিন্দ্য সুন্দরের অন্বেষনে অবিরল হাঁটতে থাকা....

_____________________________

ডা. জিয়া সাঈদ । কবি । প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়