Ameen Qudir

Published:
2017-03-07 18:59:40 BdST

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে কেন এত অভিযোগ



 


অমিতাভ ভট্টশালী
______________________

 

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যেমন হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ চিকিৎসা করাতে যান, তেমনই ভারতের অন্যান্য রাজ্য আর বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ নিয়মিত চিকিৎসা করান। কিন্তু এই সব বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই উঠছে নানা গাফিলতি আর অনিয়মের অভিযোগ। লাখ লাখ টাকার বিল দিয়েও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ জানাচ্ছেন অনেকে। নড়েচড়ে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী স্বয়ং। আসছে হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে কড়া আইন।

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ সরকারী-বেসরকারি - সব হাসপাতালের বিরুদ্ধেই আগেও উঠত, এখনও ওঠে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোমগুলির বিরুদ্ধে এখন যেসব গুরুতর অভিযোগ উঠছে, তার হল বিল-এ কারচুপির। যে ধরণের অভিযোগ আসছে, তার মধ্যে আছে নানা ধরণের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো, বিনা কারণে রোগীকে ভর্তি করিয়ে নেওয়া, যে ডাক্তার দেখেনই নি, তার ভিজিটের জন্য টাকা নেওয়া, একই ওষুধের জন্য একাধিকবার টাকা নেওয়া।

সদ্য স্বামীকে হারিয়েছেন ডানকুনির বাসিন্দা রুবি রায়। একটি সড়ক দুর্ঘটনার পরে তাঁর স্বামী সঞ্জয়কে এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে যখন দেখা যায় যে বিল হয়ে গেছে প্রায় আট লক্ষ টাকা, তখন একটি সরকারী হাসপাতালে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য হাসপাতালের চাপে মি. রায়কে ছাড়তে অনেক দেরী হয়। পরে সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান সঞ্জয়। হাসপাতালটির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি বিশেষ কমিটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার সব টাকা ফেরত দিতে চাইলেও গ্রহণ করেন নি মিসেস রায়, উল্টে বকেয়া টাকাও শোধ করে দিয়েছেন।

যে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সঞ্জয় রায়ের পরিবার, তারই সামনে দাঁড়িয়ে একজন বলছিলেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

"আমার পুত্রবধূকে এখানে যে ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম, তিনি কয়েকটা রক্ত পরীক্ষা করতে বলেছিলেন, তারপরে চিকিৎসা শুরু হবে। তবে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে চারদিন লাগবে, সেই কদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন ডাক্তারবাবু। আমরা বলেছিলাম সুস্থ মানুষ হাসপাতালে কেন ভর্তি হবে! খুব চাপ দেওয়া হয়েছিল," বলছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের এক বাসিন্দা।

শুধু ওই একটি হাসপাতাল নয়, পূর্ব আর দক্ষিণ পূর্ব কলকাতায় ইস্টার্ন বাইপাসের দুধারে গড়ে ওঠা অনেক বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধেই এধরণের অভিযোগ উঠছে।

ওই অঞ্চলে চিকিৎসা করাতে আসা কয়েকজন ভারতীয় এবং বাংলাদেশী মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাঁদের চিকিৎসা করানোর অভিজ্ঞতা কেমন।

একজন বলছিলেন, "হাসপাতালগুলো যা করছে, তা বলার নয়। সামান্য একটু তুলোর জন্য একগাদা টাকা নেয়, একবার ইনজেকশন পুশ করে সেটা তিনবার বিলে লেখা হয়। কিন্তু তাও আমরা আসি, জেনেই আসি, কী করব, কোথায় যাব।"

বাংলাদেশ থেকে আসা দুজন বলছিলেন, "কয়েকটা হাসপাতাল তো একেবারে ডাকাত। আমাদের দেশ থেকে যারা আসে, অনেকেই ওদের খপ্পরে পড়ে যায়! আগের থেকে চিকিৎসা খরচও বেড়েছে অনেক, তবে বাংলাদেশের থেকে উন্নত চিকিৎসা হয় বলেই এখানে বার বার আসি আমরা।"


কয়েকজন যেরকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন, তার থেকেও অনেক বেশী গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে। বাড়তি বিল, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ বাংলাদেশীদের কাছ থেকে ঠিক কত সংখ্যায় জমা পড়েছে, সেটা জানা সম্ভব হয় নি, তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সূত্রগুলি বলছে বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূতের বাবা যে হাসপাতালে ৪২ দিন ভর্তি থাকার পরে গত রবিবার মারা গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ স্তরে অভিযোগ জানানো হয়েছে বাড়তি বিল নেওয়া নিয়ে।

বর্ধমান জেলার বাসিন্দা বিশ্বরূপ ঘোষও সেই নামী ও দামী হাসপাতালেই মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে, কিন্তু আর ফিরিয়ে আনতে পারেন নি। হাসপাতাল থেকে যেদিন ছেড়ে দেওয়ার কথা, সেদিনই, ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। মি. ঘোষ জানাচ্ছিলেন, "আমাদের প্রথম অভিযোগ তো চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে। প্রথম থেকে বলা হচ্ছিল বড় কোনও সমস্যা নেই, ছেড়ে দেওয়া হবে। যেদিন বাড়ি নিয়ে যাব, সেদিনই সকালে হঠাৎ মা মারা গেলেন। এখন তো আমাদের সন্দেহ হচ্ছে যে রোগনির্ণয়টাই ঠিকমতো হয়েছিল কী না! আমাদের তো একটা ই সি জি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ২০০১ সালের কোনও রোগীর!"

মি. ঘোষ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

এখানে যেমন চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, তেমনই দক্ষিণ পূর্ব কলকাতার আরেক বাসিন্দা জবা রায়চৌধুরী বলছিলেন মায়ের শরীর খারাপের পরে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কীরকম ভূতুড়ে বিল ধরানো হয়েছিল তাঁর হাতে।

"মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই আই সি ইউতে ভর্তি করে বহু ধরণের পরীক্ষা করানো হয়। তারপরে দেখলাম যে শুধু সোডিয়াম লেভেলটা কম। ওরা আরও কদিন রেখে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা জোর করেই বাড়ি নিয়ে আসি - দুদিনে বিল হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা," বলছিলেন মিসেস রায় চৌধুরী।

এগুলি যেমন একেবারে সাম্প্রতিক উদাহরণ, তেমনই উঠে আসছে কিছুদিনের পুরনো অভিযোগও।

কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় তাঁর স্ত্রীর কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে ভর্তি করেছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

"অপারেশন টেবিলে ডাক্তারদের মনে হয় যে ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা যাবে না! তারা অন্য দিকটা কেটে আবারও চেষ্টা করেন। তার জন্য অনেকটা পেট কাটা হয়। পরের দিন আমার স্ত্রীকে ডায়ালিসিসের জন্য নিয়ে যাওয়া হলে ও নিজেই ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট হয়ে যাওয়ার পরে আবার ডায়ালিসিস কেন! ডাক্তার আমাদের বলেছিলেন স্ত্রীকে যেন বুঝিয়ে বলি যে প্রতিস্থাপন করা যায় নি। আমি রাজি হই নি," বলছিলেন মি. রায়।

পেট কাটার পরে ভাল করে যে সেলাই করা হয় নি, সেটা পরে জানতে পেরেছিলেন মি. রায়। সেটার আলাদা করে চিকিৎসা করাতে হয়েছে দক্ষিণ ভারতে।

কিছুদিন পরে যখন কলকাতার অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মি. রায়ের স্ত্রীকে, সেখানে ২৬ দিন পরে মারা যান তিনি। যে ডাক্তার চিকিৎসা করছিলেন, তিনি একবারও দেখেন নি, অথচ ওই ২৬ দিনে একশোরও বেশী বার অন্য ডাক্তারদের নামে বিল নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মি. রায়ের।

"ওই কমাসে আমার প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে - যেখান থেকে পেরেছি ধার করেছি। আমি চাই ওই হাসপাতালগুলো এমন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিক, যাতে ওরা আমার ব্যথাটা অনুভব করতে পারে। অথবা, দুটো হাসপাতালেই আমার স্ত্রীর একটা করে মূর্তি বসিয়ে লিখে দিক যে তাদের গাফিলতির জন্য মৃত্যু হয়েছে এই ভদ্রমহিলার। সবাই জানুক," বলছিলেন পঙ্কজ রায়।


কলকাতার সবথেকে পুরনো বেসরকারি হাসপাতালগুলির অন্যতম, পিয়ারলেসে প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশী রোগী আসেন। ওই হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার সুজিত কর পুরকায়স্থর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, তার সারবত্তা কতটা?

"আমরা আসলে খুব বেসিক ব্যাপারটা থেকে সরে গিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি। উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি আছে বলেই সেটা ব্যবহার করছি আমরা। কেউ বুকে ব্যথা নিয়ে এলে সেটা যে সাধারণ কোনও কারণেও হতে পারে, সেটা মনে না রেখে প্রথমেই আমরা এনজিওগ্রাফি করে ফেলি। বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এটা করছে। প্রযুক্তি আছে বলেই সেটা ব্যবহার করে দেওয়া হয়। এছাড়াও যে বড় সমস্যা, সেটা হল রোগীর আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে কথাবার্তা না বলা, তাদের যে বোঝাতে হবে কী চিকিৎসা হচ্ছে, কত খরচ হতে পারে, সেটা বলা হয় না। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈতিকতাটাই আসলে হারিয়ে ফেলেছে অনেকে," বলছিলেন ডা. কর পুরকায়স্থ।

ডাক্তার কর পুরকায়স্থ যেমন স্বীকার করেই নিলেন যে এক শ্রেণীর নামী-দামী হাসপাতাল এধরণের অনৈতিক কাজ করে চলেছে, তেমনই জেনেছে রাজ্য সরকারও।

সাতশোরও বেশী হাসপাতালে নিজেরা সমীক্ষা চালিয়ে আর বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির তালিকা তৈরি করে গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বৈঠকে ডেকেছিলেন সব হাসপাতালের বড়কর্তাদের। সাধারণ মানুষ কী কী অভিযোগ জানিয়েছে, তার এক সারমর্ম নিজেই হাসপাতাল কর্তাদের শোনাচ্ছিলেন মিজ ব্যানার্জী।

তিনি বলেছিলেন, "চিকিৎসা না হওয়া সত্ত্বেও বিল বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে, একই ওষুধ বার বার করে লেখা হচ্ছে, অপ্রয়োজনেও আই সি ইউ বা ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, দামী পরীক্ষার সুপারিশ করা হচ্ছে! আয় করতে হবে বলে এভাবে? যে রোগী যাচ্ছে, সেও তো মানসিকভাবে মারা যাচ্ছে, সঙ্গে তার পরিবারও মরছে। ঘটিবাটি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে!"

ওই বৈঠকেই মিজ ব্যানার্জী জানিয়েছেন যে তেসরা মার্চ বিধানসভার অধিবেশন শুরু হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন আনা হবে, তৈরি হবে রেগুলেটরি কমিশনও।

তিনি আরও জানিয়েছেন যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবসাটা অন্য পাঁচটা ব্যবসার মতো না।

কিন্তু সত্যিই কি তাই?


অনেক চিকিৎসকই বলে থাকেন অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়ে থাকে, হাসপাতালগুলোও সেরকম টার্গেট বেঁধে দেয় ডাক্তারদের - পরীক্ষা করানোর টার্গেট, রোগী ভর্তির টার্গেট!

তার ফলে অনেক সময়ে সেই চাপেই তারা অপ্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে বা রোগী ভর্তি করাতে বাধ্য হন।

এক চিকিৎসক নাম উল্লেখ না করার শর্তে জানাচ্ছিলেন কীভাবে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ডাক্তারদের ওপরে চাপ দেওয়া হয়

"এটা প্রমাণ করা খুব কঠিন যে কীভাবে টার্গেট দেওয়া হয়, কারণ কোনও কিছুই লিখিত থাকে না। তবে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ দেখলেই বুঝতে পারবেন যে কেউ। কোনও একটা রোগের স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে যখন কোনও ডাক্তার কোনও টেস্ট করাচ্ছেন, চিকিৎসা করছেন, তখনই সন্দেহ হয় যে সে এটা কেন করছে। সেটাই হচ্ছে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ। এতে হয়তো রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি সবসময়ে হচ্ছে না, কিন্তু বিল বাড়ছে, হাসপাতালের আয় বাড়ছে। যে ডাক্তাররা তাঁদের টার্গেট পূরণ করতে পারেন না, তাঁদের সরে যেতে হয়," বলছিলেন ওই চিকিৎসক।

একের পর এক অভিযোগ সামনে আসা, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক - এসবের পরে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও বলছে, এবার বোধহয় অনৈতিক কাজ থামানোর সময় এসেছে। কথা বলেছিলাম এ এম আর আই হাসপাতাল গোষ্ঠীর মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার রূপক বড়ুয়ার সঙ্গে।

তাঁর কথায়, "আমাদের একটু থেমে এবার ভেবে দেখা দরকার যে সত্যিই কি আমরা ঠিক করছি? হয়তো সবসময়ে কোনও উদ্দেশ নিয়ে করছি না, কিন্তু সত্যিই কি রোগীর পরিবারকে ঠিকমতো বোঝাতে পারছি না আমরা? সবথেকে খারাপ লাগছে এটা দেখে যে বদনামটা হচ্ছে পুরো বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপরেই। শুধু সরকারের চেষ্টায় এটা বন্ধ হবে না, আমাদের প্রত্যেককে এটা নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। আমরা যে সবসময়েই সাধু - এটা বলে চললে কিন্তু বিষয়টার সুরাহা হবে না," বলছিলেন মি. বড়ুয়া।

পূর্ব ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের সভাপতি পি এল মেহতা জানাচ্ছিলেন এভাবে চলতে থাকলে শেষ বিচারে তাঁদের গোটা পরিষেবা ব্যবস্থাটারই নাম খারাপ হচ্ছে - এরপর হয়তো রোগী হারাতে শুরু করবে সবগুলো হাসপাতালই। তাই সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁরা।

দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসায় গাফিলতি, হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি নিয়ে আইনি লড়াই চালায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট।

সংগঠনটির কার্যকরী সমিতির সদস্য রঞ্জিত সরকারের কথায়, "পশ্চিমবঙ্গ মেডিকাল কাউন্সিল গত পাঁচ বছরে মাত্র এগারো-বারো জন চিকিৎসকের গাফিলতি খুঁজে পেয়েছে। আর তার মধ্যে সাতজনকে শুধুমাত্র মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এর কারণ হল ডাক্তাররা এখানে সুন্দরভাবে ডক্টরস প্রোটেশান ক্লাব তৈরি করে ফেলেছে। যে অভিযুক্ত, বিচারও তারাই করছে। আর বিলে কারচুপির এত বেশী অভিযোগ জমা পড়ছে, সে ধরণের কারচুপি একটা সাধারণ অপরাধীও বোধহয় করতে পারবে না। যে ডাক্তার লন্ডনে বসে আছেন, রোগী মারা গেল, অথচ সেই ডাক্তার ভিজিট করেছেন বলে বিলে লেখা হচ্ছে!"

আত্মীয় হারানো মানুষজনেরা এখন আশায় বুক বেঁধেছেন যে এতদিন ধরে তারা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে যা সব অভিযোগ তুলছিলেন, নতুন আইন এলে বা নতুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হলে হয়তো আর কাউকে হারাতে হবে না নিজের স্বজনকে, হতে হবে না ভুয়ো বিলের কারণে সর্বস্বান্ত।

_________________________

অমিতাভ ভট্টশালী বিবিসি, কলকাতা

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়