Ameen Qudir

Published:
2017-02-02 15:53:20 BdST

অভিযোগ দেখে মনে হয় অভিযোগকারী ও বিচারক একই ব্যক্তি- নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট


 

ডা. বাহারুল আলম
_____________________________

 

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনগন বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ হওয়া সত্ত্বেও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে রাজশাহীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রটের অভিযান প্রমাণ করে স্বাস্থ্য প্রশাসনে এদের কর্তৃত্ব শূণ্যের কোঠায়।
স্বাস্থ্য প্রশাসনের অস্তিত্ব ও কর্তৃত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে ব্যবচ্ছেদ করল, তাতে আগামীতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ জনপ্রশাসন ও তার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হলে স্বাস্থ্য প্রশাসনে কর্তাব্যক্তিরা মোটেও লজ্জা পাবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রায়োগিক জ্ঞানহীন অচিকিৎসক ব্যক্তি এর ত্রুটি বিচ্যুতি সনাক্ত করা যতটা না অপরাধ তার চেয়েও অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

অদ্ভুত এক বৈপরীত্য - প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যাপারে যে অভিযোগ, কর্মবিরতিতে গেলে যে চিকিৎসা সংকট সৃষ্টি হয় তা প্রমাণ করে না যে বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকের উপর জনগনের আস্থা নাই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ সকল অভিযান চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও চিকিৎসকদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ অভিযান।

চিকিৎসকরা ম্যাজিস্ট্রেসী জ্ঞান ও ক্ষমতা প্রয়োগের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ন্যায় জনপ্রশাসনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসী নির্ধারিত হয়ে আছে। সে কারণে এ ম্যাজিস্ট্রেসী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার ঘটনা ঘটে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে। চিকিৎসকদের মতামত ছাড়া যেখানে বিচার অচল- ম্যাজিস্ট্রেসী জ্ঞান তাদের জন্য অতিশয় ক্ষুদ্র।

চিকিৎসক ম্যাজিস্ট্রেট হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ত্রুটি সনাক্তকরণ সহজ হত। এ সকল অভিযানে অভিযোগকারীও ম্যাজিস্ট্রেট। এটি কোন বিচারকার্য হতে পারে না। সাথে থাকা কোন ব্যক্তিকে দিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযোগ লেখানো হয়। অভিযোগকারী স্বপ্রনোদিত হয়ে কোন অভিযোগ করে না।

উচ্চ আদালতের রায়ে জুডিশিয়াল বিচার বিভাগ আলাদা হয়েও বিচার কার্য রয়ে গেল রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের হাতে। উচ্চ আদালত চুপ।

____________________________

মিডিয়ার যে খবরের ভিত্তিতে এই মন্তব্য প্রতিবেদন
___________________

 

 

রোগী বের করে দিয়ে ক্লিনিক ও হাসপাতালে তালা





ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর রাজশাহীর বেসরকারি ক্লিনিকগুলো গতকাল দুপুর থেকে হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকায় বিপাকে পড়েন রোগীরা। গতকাল বিকেলে এমনই এক রোগীকে ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলোকোনো হাসপাতালে পাওয়া গেছে মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম। কোথাও আবার অস্ত্রোপচারকক্ষ নোংরা। আরেক হাসপাতালে পাওয়া গেছে ভারতের রাজস্থানের সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা চিকিৎসা সরঞ্জাম, যার গায়ে লেখা ‘নট ফর সেল’। কয়েকটি হাসপাতালে পাওয়া গেছে চিকিৎসকদের স্বাক্ষরিত ফাঁকা (ব্ল্যাংক) রাইটিং প্যাড, যাতে ইচ্ছেমাফিক লিখে দেওয়া যায় রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষার ফল!

রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতাল-গুলোতে গতকাল মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের চালানো অভিযানে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে এই অভিযানের প্রতিবাদে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বের করে দিয়ে বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছে রাজশাহীর সব কটি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল। এতে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে এই বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা শীতের মধ্যে দুর্ভোগে পড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র‌্যাব সদর দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে দেশব্যাপী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়। আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন ও র‌্যাবের স্থানীয় সদস্যরা।

অভিযানে তিনটি হাসপাতালকে সোয়া আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয় দুজনকে।

সকালে নগরের লক্ষ্মীপুরে আমানা নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম (সার্জিক্যাল আইটেম) ও অস্ত্রোপচারকক্ষ নোংরা পাওয়ায় হাসপাতালটিকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষণিক জরিমানা শোধ করতে না পারায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেনকে আটক করা হয়।
রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে ধর্মঘটে সব ক্লিনিক ও হাসপাতাল

একই এলাকার রয়েল হাসপাতালে পাওয়া যায় ভারতের রাজস্থানের সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা চিকিৎসা সরঞ্জাম। আরও ছিল রোগনির্ণয় কেন্দ্রের চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত ফাঁকা লেখার প্যাড। এ হাসপাতালকে পৌনে চার লাখ টাকা জরিমানা হয়। জরিমানা শোধ করতে না পারায় ব্যবস্থাপক কাজিমুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ ছাড়া জেনারেল হাসপাতালকে জরিমানা করা হয় এক লাখ টাকা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আগেই চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকা প্যাডে হাসপাতালের কর্মীরা ইচ্ছেমতো পরীক্ষার-নিরীক্ষার ফল লিখে দিয়ে থাকেন। এটি ভয়ংকর ব্যাপার।

অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা তিনটা থেকে বাংলাদেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ সময় হাসপাতালগুলোতে অপেক্ষারত রোগীদের বাইরে বের করে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা বাবুল হোসেন (৩০) আরেকটি হাসপাতালে কেমোথেরাপি দিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেটির গেটে তালা। বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন।

একই অবস্থা ভেড়ামারার রোগী লিপি খাতুনের (২৫)। তিনি যে চিকিৎসককে দেখাবেন, তাঁর বিকেলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে বসার কথা ছিল। কিন্তু এসে দেখেন হাসপাতালটিতে তালা দেওয়া। কখন খুলবে, কেউ বলতে পারছে না। অপেক্ষা করতে করতে পার হয়ে গেছে ট্রেন ও বাসে ফেরার সময়। তিনি বলেন, ‘এখন ফিরে যাব, সেই উপায়ও নেই। বিকেলে আর ট্রেন নেই। বাসও সব চলে গেছে।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, দুটি হাসপাতাল জরিমানা পরিশোধ না করায় সেখানকার ব্যবস্থাপকদের আটক করা হয়েছে। রাজশাহীতে চালানো এই অভিযান এক দিনের ছিল বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখার সহসভাপতি ডা. ফয়সাল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জরিমানা ছাড়া নিঃশর্তভাবে আটক দুই কর্মচারীকে ছেড়ে দিতে হবে। ১৯৮২ সালের ক্লিনিক অ্যাক্ট অনুযায়ী জরিমানা করতে হবে। অসহনীয় জরিমানা করা যাবে না। অস্বাভাবিক ট্রেড লাইসেন্স ফি কমাতে হবে এবং সাইনবোর্ড ফি বাতিল করতে হবে। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

নাগরিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, চিকিৎসাসেবা চালু রেখেই যৌক্তিক আন্দোলন করা সম্ভব। রোগীদের জিম্মি করে এ ধরনের আন্দোলন করা উচিত নয়। আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ করে এর মালিকেরা বড় ধরনের অপরাধ করেছেন।’ তিনি বলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখার দায়িত্ব সরকারের। মালিকেরা সেই কাজ করতে না দিয়ে রোগী বের করে দিয়ে তালাবদ্ধ করেছেন। সরকারের উচিত হবে এই সমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার একেবারে তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সব চিকিৎসক টানা ধর্মঘট পালন করেন।

_______________________________

 

ডা. বাহারুল আলম । লোকসেবী ডাক্তার নেতা । প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা । সুলেখক। সুবক্তা।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়