Ameen Qudir

Published:
2017-01-11 01:53:33 BdST

হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত : কিছু মৌলিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ


  

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান

______________________________

হাইকোর্টের যুগান্তকারী এবং বহুল প্রত্যাশিত এই রায়কে স্বাগতঃ জানাচ্ছি।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর নিজস্ব কোয়ালিটি এশিওরেন্স টীম ছাড়াও গুণগত মান ও মাত্রা সহ প্রতিটি ঔষধের অন্যান্য বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি পেয়েই বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলো তাদের সব ঔষধ বাজারজাত করে থাকে।

হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে ফার্মেসীগুলো থেকে সঠিক ঔষধ ক্রেতার হাতে আসবে, এটাই আদালত, রীট আবেদনকারী এবং আমাদের সবার প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবে এটা কতটুকু ফলদায়ক হবে, যদি না প্রতিটি ফার্মেসীতে আইন অনুযায়ী যে ফার্মাসিষ্টের থাকার কথা, সেই ফার্মাসিষ্ট-ই না থাকে?

দেশে রেজিষ্টার্ড ফার্মাসিষ্টের তুলনায় ফার্মেসীর সংখ্যা বহুগুন বেশী। স্বভাবতঃই এসব ফার্মেসীতে ঔষধ বিপনন করে থাকে নন-ফার্মাসিষ্ট ব্যাক্তিরা।

 

দেশে রেজিষ্টার্ড ফার্মাসিষ্ট আছেন ( এ, বি ও সি ক্যাটাগরি মিলিয়ে) প্রায় ৮৩০০০ থেকে ৮৪০০০। এদের মধ্যে "এ" ও "বি" ক্যাটাগরীর ফার্মাসিষ্টরা ( সংখ্যায় ১৩০০০- ১৪০০০) বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী, সরকারী হাসপাতাল ও কর্পোরেট হাসপাতালে চাকরী করেন, ফার্মেসীতে তাদের চাকরীর প্রশ্ন আসে না সংগত কারনেই ।

ফার্মেসী কাউন্সিলে নিবন্ধিত "সি" ক্যাটাগরীর ফার্মাসিষ্টরা ( এখন দেশে এদের সংখ্যা প্রায় ৭০০০০; এরা ন্যূনতম এসএসসি পাসের পর ২ মাসের কোর্স করে এবং ফার্মেসী কাউন্সিলের অধীনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এরা "সি" ক্যাটাগরীর ফার্মাসিষ্ট হিসাবে নিবন্ধিত হয় এবং ফার্মেসীতে ঔষধ বিক্রির জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়) ।

 

দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসীর সংখ্যা প্রায় ১,২০,০০০। আর অননুমোদিত ফার্মেসী আছে প্রায় ৩ লাখ। প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রতিটি ফার্মেসীতে ১ জন করে ফার্মাসিষ্ট থাকার কথা থাকলেও দেশের শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ ফার্মেসীতেই তা নেই। সবচে' বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ৭০,০০০ সি গ্রেড ফার্মাসিষ্ট ( যদি এরা সবাই এই পেশায় চাকরী করে) দিয়ে ১,২০,০০০ ফার্মেসীর লাইসেন্স কিভাবে দেয়া হল? অনুমোদনবিহীন ৩,০০,০০০ ফার্মেসীতে যে ফার্মাসিষ্ট বলে কিছুই নেই, তা তো বলাই বাহুল্য।

দেশের ফার্মেসীগুলোর মধ্যে ৮৫% ই ফার্মাসিস্টবিহীন। এসব ফার্মেসী থেকে জেনেরিক নামের সঠিক ঔষধ কিভাবে পাওয়া সম্ভব রোগীদের?

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলো তো জেনেরিক নামে ঔষধ বাজারজাত করে না। এখন চিকিৎসক যদি জেনেরিক নামে ঔষধ লেখেন, তাহলে ২ মাসের কোর্স করা এসব "সি" গ্রেড ফার্মাসিষ্টরা সঠিক ঔষধ খুজে বের করবেন কিভাবে?


উল্লেখ্য, দেশে এই মুহুর্তে ৬০০০ এরও বেশী জেনেরিক ঔষধ প্রচলিত আছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নূতন নূতন জেনেরিক নামের ঔষধ বাজারে আসছে। "সি" গ্রেড ফার্মাসিষ্টরা কিছু ব্র‍্যান্ড নামের সাথেই মূলতঃ পরিচিত। তাদের ২ মাসের শর্ট কোর্সে কমন কিছু ঔষধের জেনেরিক নামের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়া হয়, এবং ওই জেনেরিক নামের ঔষধ কি কি ব্র‍্যান্ড নামে পাওয়া যায়, সেটা শেখাই তাদের মূখ্য টার্গেট থাকে। পরবর্তীতে ফার্মেসীতে চাকরী নিলে সিনিয়র সেলসম্যানদের কাছ থেকে হয়তো আরো কিছু নুতন ঔষধের "ব্র‍্যান্ড নাম" শিখতে পারে তারা।

জেনেরিক নামের প্রেসস্ক্রিপশন সার্ভ করার মত জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের কাছে আশা করাটা ঠিক হবে না। এতে ক রে আদালতের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও রোগীসাধারন কিন্ত তার সুফল পাবেন না।

 

এসব যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে হলে আরো কিছু দিকে দৃষ্টি দিতে হবে বলে আমি মনে করি ( এবং এগুলো করতে হবে ডাক্তাররা জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা শুরু করার আগেই)ঃ-

(১) প্রতিটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীকে দিয়ে জেনেরিক নামে ঔষধ বাজারজাতের ব্যবস্থা করাতে হবে।

(২) দেশের প্রতিটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীকে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে।

(৩) ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে বাজারে প্রচলিত অভিযোগ তদন্ত করে এর কার্যক্রমকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহীমূলক করতে হবে।

(৪) বি এম ডি সি র কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে হবে।

(৫) প্রতিটি বিদেশী ঔষধ জেনেরিক নামে আমদানী ও বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) ফার্মাসিষ্টবিহীন এবং অনুমমোদনবিহীন ফার্মেসীগুলো বন্ধ করতে হবে।

(৭) বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিটি ফার্মেসীতে ন্যূনতম নিম্ন সংখ্যক "সি" গ্রেড ফার্মাসিষ্ট রাউন্ড দ্যা ক্লক থাকার বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে-- ইউনিয়ন-১ জন, উপজেলা- ২-৩ জন, পৌর এলাকা/ জেলা শহর / বিভাগীয় শহর/ সিটি কর্পোরেশন/ ব্যাস্ত চিকিতসক জোনের আশেপাশে - ৩ - ৬ জন ( কিংবা চাহিদানুযায়ী আরো বেশী )।

(৮) সি গ্রেড ফার্মাসিষ্টদের কোর্সের মেয়াদ ২ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস এবং তাদের কারিকুলাম আধুনিকীকরন

(৯) চিকিৎসকদের সচেতনতা বৃদ্ধি সহ জুনিঃ ও সিনিঃ কন্স্যালটেন্ট/ সহকারী অধ্যাপক / সহযোগী অধ্যাপক / অধ্যাপক-- এরা সবাই কম্পিউটারাইজড প্রেসক্রিপশনের ব্যাবস্থা করবেন।

(১০) প্রত্যেক চিকিৎসক সতর্ক হয়ে পাঠযোগ্য করে প্রেসক্রিপশন লিখবেন, যাতে শিক্ষিত একজন ব্যাক্তি প্রেসক্রিপশনের ঔষধের নাম ও সেগুলো খাওয়ার নিয়ম, রোগীর প্রতি দেয়া উপদেশ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলোর নাম পড়তে পারেন।

(চলবে)------

__________________________________

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান, প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা ,সভাপতি বিএমএ
মৌলভীবাজার। লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়