Ameen Qudir

Published:
2019-01-19 23:24:58 BdST

HOSPITAL হাসপাতাল নিরাপত্তা আইন: কবে হবে ! কত ডাক্তারের রক্ত ঝরলে!


বিদেশের উন্নত হাসপাতাল সেবা বাংলাদেশে সুলভ। কিন্তু উন্নত বিশ্বের মত হাসপাতালে সুরক্ষা বেষ্টনীও সময়ের দাবি। ফাইল ছবি।


ডাঃ আজাদ হাসান
______________________________

সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক পত্রিকার পাতা খুললে যে সংবাদটি প্রায়শঃ চোখে পড়ে তা হলো দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রমাগত ভাবে চিকিৎসকদের উপর শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আজ চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। তাই আজ সবার মাঝে দাবী উঠেছেঃ

১) হাসপাতালে নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে চাই।
২) পেশার নিরাপত্তা চাই।।


সম্প্রতি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-এ ঘটে যাওয়া চিকিৎসক লাঞ্ছনার ঘটনাটি আবারো চোখে আংগুল দিয়ে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলো কর্মক্ষেত্রে আমরা কতটা অরক্ষিত কতটা অনিরাপদ।

আলোচ্য ঘটনাটি থেকে যা উঠে আসলো, তা হলোঃ
১) দায়িত্বকালীন সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হলেও কর্তৃপক্ষ সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২) কর্তব্যরত চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা আহত করা ক্রিমিনাল অফেন্স। আর যে কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স শাস্তি যোগ্য অপরাধ। সুতরাং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত অনতিবিলম্বে ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল অফেন্স এক্ট-এ মামলা করা।
৩) বিভাগীয় মামলা আর ক্রিমিনাল অফেন্সের মামলা এক নয়, এটা আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা যত দ্রুত বুঝবেন ততই মংগল। তাই "শাক দিয়ে মাছ ঢাকা"র মতো বিভাগীয় মামলা করা হবে, এই শান্তনা বানীতে সন্তুষ্ট না থেকে অনতি বিলম্বে ফৌজদারি আইনে মামলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ রাখছি।
এমনিতেই মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনেক দীর্ঘ মেয়াদী এবং জটিল শাস্ত্র, তাই সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ছেলেরাই পেশা হিসেবে মেডিক্যাল পেশাকে বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে তারপর যদি এভাবে একের পর এক ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনা ঘটে তা হলে নিরাপত্তা হীনতার কারণে উক্ত পেশার প্রতি মেধাবী ছাত্ররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, যা হবে জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতিকর।
তাই আজ সময় হয়েছে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতঃ সমস্যার সমাধান কল্পে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।

প্রতিকারের উপায় কি?

১) প্রতিটি হাসপাতালে কর্মরত সকল পর্যায়ের চিকিৎসক ও হাসপাতালে কর্মরত প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য "বিশেষ নিরাপত্তা আইন" করতে হবে।
২) চিকিৎসক ও হাসপাতালে কর্মরত প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য "নিজস্ব বা বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী" নিয়োজিত করা।
৩) এই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীতে পুলিশ কিংবা সামরিক বাহিনী হতে অবসর প্রাপ্ত কিন্তু বয়স ৪০ এর নীচে এ ধরণের প্রশিক্ষিত জনবল কিংবা পুলিশ বা আর্মি হতে নন-কমিশনড্ রেংক-এর সদস্যদের/ কর্মচারীদের নিয়োগ করা যেতে পারে।
৪) এই "বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী"র সদস্যরা/ কর্মচারীরা হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ার ব্যতীত অন্য সময় আগত এটেন্ডেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করবেন।
৫) এই "বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী"র সদস্যরা/ কর্মচারীরা হাসপাতালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত অকুস্থলে পৌছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং দোষী ব্যক্তিকে আটক করত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে।
৬) হাসপাতালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত বিচার আইনে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত "দোষী ব্যক্তির" শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৭) হাসপাতালের ওটি (অপারেশন থিয়েটার), পোস্ট অপারেটিভ রুম, সিসিইউ, আইসিইউ এগুলো যেমন গুরুত্ব পূর্ন স্থান তেমনি সেন্সিটিভ বা স্পর্শকাতর স্থান। তাই এসব স্থানের নিরাপত্তার বিষয়টি "হাসপাতাল কোড" দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

৮) চিকিৎসক এবং রোগী ও রোগীর স্বজনদের মাঝে কমিউনিকেশন গ্যাপ কমিয়ে আনতে প্রতিটি স্পর্শকাতর স্থানে "হেলথ কাউন্সিল" নিয়োগ করে রোগীর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে সময় সময় ব্রিফ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
৯) মিডিয়াকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। "ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু", শিরোনামে কোনো সংবাদ ছাপা যাবে না। কারণ, প্রথম কথা হলো, উক্ত রোগীর ক্ষেত্রে যে ভুল চিকিৎসা হয়েছে(?) এই জাজমেন্ট কে দিলো? উপযুক্ত মেডিক্যাল বোর্ড কর্তৃক যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে উক্ত বোর্ডের রায় ছাড়া ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশ করা, আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
১০) আন-কোয়ালিফাইড বা কোয়াক দ্বারা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে কেউ মৃত্যু বরণ করলে সেক্ষেত্রে এমন ভাবে নিউজ করা যাবে না যে উক্ত চিকিৎসার দায়ভার কোয়ালিফাইড্ চিকিৎসকদের বোঝায়। কোয়াককে কোয়াক হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
১১) দেশের সাধারণ জনগন যাতে কোয়াক দ্বারা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১২) হোমিওপ্যাথি, আইয়ুর্বেদী, অল্টারনেটিভ মেডিসিন আর মডার্ন মেডিসিন এক ছাদের নীচে, একই হাসপাতসল হতে দেয়া অচিরে বন্ধ করতে হবে। কেননা, এতে জনগণ কনভিউজড্ হয়ে পড়ে।


তাই, স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সর্ব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতঃ "মানসম্মত বা স্ট্যান্ডার্ড স্বাস্থ্য সেবা" প্রদানের লক্ষ্যে "কর্ম ক্ষেত্রে নিরাপদ কর্ম পরিবেশ" নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার আশু পদক্ষেপে নেয়ার আহবান রাখছি।
______________________________

 

ডাঃ আজাদ হাসান
সিওমেক
২১তম ব্যাচ।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়