Ameen Qudir

Published:
2018-07-23 16:47:46 BdST

পেনাল কোডের ৮৮/৮৯ ধারা লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত চিকিৎসকদের পক্ষ হতে মামলা হওয়া প্রয়োজন


 

ডা. বাহারুল আলম
_______________________________

অবশেষে মৃত রাইফা খানের বাবা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন-
..........................................
বিপরীতে চিকিৎসকদের দায়মুক্তির(বাংলাদেশ পেনাল কোডের ৮৮/৮৯)ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের পক্ষ হতে আরেকটি মামলা হওয়া প্রয়োজন
..............................
চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফা খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে মামলা দায়ের হয়েছে ১৮ দিন পর। (মামলা নং ৮/১৮-০৭-২০১৮ )
ম্যাক্স হাসপাতালে মৃত শিশুর বাবা, মা, আত্মীয়-স্বজন সংক্ষুব্ধ হয়ে মৃত্যুর পরমুহুর্তে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের আসামী করে মামলা দায়ের করতে পারতেন । বিচার চাওয়া তাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে কেবল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নয়, গোটা চিকিৎসক সমাজের বিরুদ্ধে নানা রকমের কুৎসা রটনার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। বিচারের পরিবর্তে অন্য কোন পন্থায় চিকিৎসকদের শাস্তি দেওয়া যায় কিনা এ অপেক্ষা করতেই সময় ব্যয় করেছেন । তার ভাষায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত , আত্মীয়-স্বজনের সহিত পরামর্শ, ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা ও আসামই পক্ষ হইতে চিকিৎসা সেবা বন্ধের হুমকি- এ সকল কারণেই তার বিলম্ব।

অস্বাভাবিক যেকোন মৃত্যুর বিচার প্রক্রিয়া চকবাজার থানার ওসি, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন, ম্যাক্স হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সকলেরই জানা সত্ত্বেও দেশের প্রচলিত বিধানে বিচার প্রক্রিয়া এগোয় নি। রাষ্ট্রের আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থাহীনতা ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বিচার প্রক্রিয়া বহির্ভূত কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছিল , এ রাষ্ট্রে কোন আইন নাই, বিচার নাই, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরাই বিচার করার দায়িত্ব পালন করতে পারে। অথচ এ সকল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রের আইনের চোখে মারাত্মক অপরাধ। “রাষ্ট্রের আইন মেনেই ভিন্নমত পোষণ করার বিধান আছে, অন্য কোনভাবে নয়”।

মৃতের অভিভাবক সহ মহল বিশেষ সেই বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিচার চাওয়ার নামে যে মাত্রায় সংক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের তা নিশ্চয়ই দৃষ্টিগোচর হয়েছে।তাদের কর্মকাণ্ডে দেশময় স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় অবস্থানরত রোগী- চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতংকিত হয়ে পড়ে। যার ফলে এক শিশুর মৃত্যুতে লক্ষ্য শিশু ও বয়স্ক মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা হুমকির মুখে পড়েছে।

এ অবস্থা যারা সৃষ্টি করল, তাদের বিরুদ্ধেও একইভাবে মামলা হওয়া প্রয়োজন- ‘আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল ও সমগ্র স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় আতঙ্ক সৃষ্টির অপরাধে’।
মৃতের বাবা মোহাম্মাদ রুবেল খান যে ধারায় (৩০৪, ২০৪, ১০৬, ৩৪ ) ডা বিধান রায় চৌধুরী, ডা দেবাশীষ সেন গুপ্ত, ডা শুভ্র দেব ও ডা লিয়াকত আলী –কে আসামী করে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন, এর বিপরীতে অভিযুক্ত চিকিৎসকগণ ৮৮/৮৯ ধারায় চিকিৎসকের দায়মুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করতে পারেন। এখনও সময় আছে, কালবিলম্ব না করে বাংলাদেশ পেনাল কোডের ৮৮/৮৯ ধারায় চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় মামলা করার। সংক্ষুব্ধ কেবল মৃতের অভিভাবক নয়, সমভাবে সংক্ষুব্ধ অভিযুক্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসক সমাজ এবং তাদের সংগঠন বিএমএ।

ঘটনা পরবর্তী সময়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয় ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যু-র অভিযোগে চিকিৎসকদের অপরাধী প্রমাণ করার ক্ষেত্রে যত তৎপর দেখা গেছে , রাষ্ট্রের পেনাল কোডের ৮৮/৮৯ ধারায় চিকিৎসককে পেশাগত দায়মুক্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোগী- চিকিৎসকের মধ্যকার ভারসাম্য রক্ষা করতে কোন তৎপরতা দেখা যায় নি। রাষ্ট্রীয় অভিভাবকত্বের এহেন দেউলিয়াপনায় চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ অচিরেই ঘোষণা দিতে বাধ্য হবে – কোন ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসায় তারা যেন সংশ্লিষ্ট না হয়। কারণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএমডিসি বাংলাদেশ পেনাল কোডের ৮৮/৮৯ ধারা বলবত করতে অক্ষম ।

বাংলাদেশের বৃদ্ধ ও মুমূর্ষু রোগীরা হুমকির মধ্যে বিরাজ করছে, আতঙ্কগ্রস্ত চিকিৎসকরা এদের চিকিৎসার দায়ভার নিতে ভীতসন্ত্রস্ত।
_____________________________

ডা. বাহারুল আলম। প্রখ্যাতলোকসেবী চিকিৎসক। পেশাজীবি নেতা।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়