Ameen Qudir

Published:
2018-05-14 02:18:09 BdST

যত্রতত্র ক্লিনিক,হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভাগাড় কুমিল্লা শহর


 


ডা. কামরুল হাসান সোহেল
_______________________________

কুমিল্লা শহরে কমপক্ষে ১৫০এর বেশী ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। পশ্চিমে শাসনগাছা দিয়ে শহরে ঢুকার পথেই ৩ টি হাসপাতাল আপনাকে,আপনার রুগীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তারপর যত পূর্বে যাবেন রাস্তার দুই পাশেই দেখবেন শুধু ক্লিনিক,হসপিটাল আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার।ডানে,বামে,রাস্তার পাশেই,গলির ভিতরে কোথায় নেই! আপনি ক্লিনিক,হসপিটাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা গুণতে গুণতে ক্লান্ত হয়ে পরবেন একসময়,একসময় রাস্তা ও ফুরোবে কিন্তু ফুরোবেনা ক্লিনিক, হসপিটাল গননা।

এত শত শত ক্লিনিক,হসপিটাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশই মানসম্মত নয়,চিকিৎসা সেবা দেয়ার এবং রোগ নির্ণয়ের নূন্যতম সুযোগ সুবিধা নেই,অধিকাংশ ক্লিনিক, হসপিটাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিজস্ব ডাক্তার নেই, সবাই অন কলে রুগী দেখতে আসেন,অনেক ক্লিনিক,হসপিটালে এমবিবিএস পাস ডিউটি ডাক্তার নেই,কোন কোনটিতে এক দুই শিফট থাকে ডাক্তার,ডাক্তারদের ডিউটি ফি দেয়না সময়মতো,অনেকেই অনেক হয়রানি করে। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডিপ্লোমা ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই, ডিপ্লোমা এক্সরে টেকনিশিয়ান নেই, রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই, অনেক ক্লিনিক, হসপিটালে ডিপ্লোমা সিস্টার নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও নেই কিন্তু তারা দিব্যি হাসপাতাল,ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেই ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে।

এত শত ক্লিনিক,হসপিটাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে হাতে গোণা কয়েকটি হাসপাতাল,ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডাক্তারদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বাকিগুলোর মালিক হচ্ছে সাবেক ওটিবয়,ওয়ার্ড বয়,নার্স,এক্সরে টেকনিশিয়ান, মার্কেটিং এর লোকজন এমনকি হাসপাতালের সাবেক নাইট গার্ড ও মালিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের! একটি হাসপাতাল,ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলার অনুমোদনের পূর্বশর্ত হওয়া উচিৎ পরিচালনা পর্ষদের ৫০% চিকিৎসক থাকতে হবে। যদি ৫০% চিকিৎসক পরিচালনা পর্ষদে থাকার বিধান থাকতো তাহলে কুমিল্লা শহরে ক্লিনিক,হসপিটাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা হতো ২৫/৩০ টি। এইভাবে যত্রতত্র ক্লিনিক,হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভাগাড়ে পরিণত হতো না কুমিল্লা শহর।

এত শত শত ক্লিনিক, হসপিটাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশই রুগী আনে দালালের মাধ্যমে যাদের ভদ্র ভাষায় কোয়াক বলা হয়। রুগী পেতে ক্লিনিকগুলো এই দালালদের প্যাথলজি টেস্ট, হাসপাতালে ভর্তি,চিকিৎসা খরচ, অপারেশন চার্জ সহ যাবতীয় যত বিল রাখে রুগীদের কাছ থেকে তার ৫০% কমিশন তাকে দেয়। এইজন্য রুগীদের নাভিশ্বাস উঠে, চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধি পায়,অপারেশন খরচ বৃদ্ধি পায়। শুধু তা ই নয় রুগী পেতে ছোট ক্লিনিক,হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রিকশা দালাল,অটো দালাল,সিএনজি দালাল নিয়োগ দেয়। তাদেরকে অগ্রিম ১০,০০০-২০,০০০/- টাকা দেয় বিভিন্ন বাস ষ্টেশন, সিএনজি ষ্টেশন থেকে রুগী টানার জন্য।এরা গ্রামের সহজ সরল রুগী যাদের সাথে কোন কোয়াক থাকেনা তাদের টার্গেট করে,তারপর তারা যত টাকা নিয়ে শহরে আসে প্যাথলজি টেস্টের নামে তা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বশান্ত করে দেয়।

যদি ওটিবয়,ওয়ার্ডবয়,এক্সরে টেকনিশিয়ানরা ক্লিনিক, হসপিটাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টার করার অনুমোদন পেয়ে যায় তাহলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত না হয়ে দিন দিন অবনতির দিকেই যাবে,সঠিক পরামর্শ এবং সঠিক ও স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার বদলে ভুল পরামর্শ এবং ব্যয় বহুল চিকিৎসাই পাবে এবং অনেক সময় ভুল চিকিৎসার শিকারও হতে পারে।

এদের বিরুদ্ধে কিছু বলা সহজ না কেননা ওরা সংঘবদ্ধ,ওরা অনেক ধুর্ত। এদের কেউ কেউ সাংবাদিক না শুধু কোন কোন নামসর্বস্ব পত্রিকার সম্পাদক হয়ে যায়,নানা সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে ক্ষমতাধর হয়ে উঠে।তাই তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে উল্টো তারাই আপনার ভিটেয় ঘুঘু চড়াবে।

_______________________________

ডা. কামরুল হাসান সোহেল

আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

 

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়